1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্যাক্সনি রাজ্যের গ্যোটিঙেন ইউনিভার্সিটি

২১ মার্চ ২০১১

জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যে অবস্থিত গ্যোটিঙেন শহরটি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ নাম গেয়র্গ আউগুস্ট ইউনিভার্সিটি অফ গ্যোটিঙেন৷

https://p.dw.com/p/10d8F
ছবি: AP

গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৩৭ সালে৷ এই শহরের মাঝখানে মার্কেট প্লেসে একটি ফোয়ারা এবং একটি মেয়ের মূর্তি আছে৷ মেয়েটি দু হাতে দুটি হাস ধরে আছে৷ প্রতি বছর ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের ডিগ্রীটি হাতে পাবার পর সবাই এসে জড়ো হয় এই ফোয়ারার কাছে৷ প্রথা অনুযায়ী সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে সবাই মেয়েটির গালে ছোট্ট একটি চুমু খায়৷ বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে তরুণ যুবকদের কাছ থেকে এই মেয়েটিই চুমু পেয়েছে সব চেয়ে বেশী৷

গ্যোটিঙেন শহরটি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের হাত থেকে প্রায় বেঁচে গেছে বলা যেতে পারে৷ যার কারণে বেশ পুরোনো বিল্ডিং, ক্যাফে, বার, রেস্তোরাঁ এখনো চোখে পড়বে৷ গ্যোটিঙেন বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা দূরে নয়, বসবাস করে শহরের ঠিক মাঝেই৷ ২০০৩ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী গ্যোটিঙেন শহরের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ ছিল ১৮ থেকে ৩০ বছরের মাঝামাঝি৷

গ্যোটিঙেন শহরটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও আরো অনেক কারণে জনপ্রিয়৷ এখানে সাঁতার বেশ জনপ্রিয় একটি খেলা৷ গোটা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য সুইমিং পুল৷ একেকটি পুলে প্রতি বছর প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ নিয়মিত সাঁতার কাটতে আসে৷ এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন কনসার্ট হল, ক্লাব, ফান পার্ক বিনোদন এবং অবসর সময় কাটানোর আরো অনেক ধরনের মাধ্যম৷

সারাঙ আমিলা রুয়ান শ্রীলঙ্কার ছাত্র৷ ডিএএডি থেকে তিনি বৃত্তি পেয়েছেন, পিএইচডি করছেন গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেস্ট্রিতে ডিপার্টমেন্ট অফ ইকো সিস্টেম মডেলিং-এ৷ তবে তাঁর গবেষণার মূল বিষয় পরিসংখ্যান৷

শ্রীলঙ্কা এবং জার্মানির মধ্যে পড়াশোনা ও গবেষণায় মূল পার্থক্য কোথায়? সারাঙ জানালেন,‘‘ যদি জার্মানি এবং শ্রীলঙ্কার পড়াশোনার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দিকে তাকানো হয়, তাহলে বলতেই হবে জার্মানিতে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি৷ বিশেষ করে প্রযুক্তি নির্ভর গবেষণায় জার্মানি সত্যিই এগিয়ে৷ উদাহরণস্বরূপ আমি বলতে পারি, আমি যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করছি – সেই বিষয়ে শ্রীলঙ্কায় কোন বিশেষজ্ঞ নেই৷ আমি বন বা ফরেস্ট্রির পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণা করছি৷ এর আগে শ্রীলঙ্কায় এই বিষয়ে কেই গবেষণা করেনি৷ কোন পিএইচডি বা ডক্টরেট নেই৷ অথচ জার্মানিতে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞের কমতি নেই৷ আর এখানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি৷ এখানে ছাত্র-ছাত্রীরা মূলত প্রশ্ন করে৷ একটি বিষয়ে প্রেজেন্টেশন, ছাত্র-ছাত্রীদের হাতেই থাকে অথচ শ্রীলঙ্কায় পুরোটাই হচ্ছে শিক্ষকের হাতে৷ শিক্ষক যা বলবে, যেভাবে বলবে সেভাবেই ক্লাস চলবে৷''

Laufroboter Universität Göttingen Flash-Galerie
গ্যোটিঙেনের ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্ভাবিত রোবটছবি: Universität Göttingen

ট্রপিক্যাল রেন ফরেস্টের প্রায় দুই হাজারেরও বেশি প্রজাতির গাছ নিয়ে পরিসংখ্যানের ডেটা তৈরি করছে সারাঙ৷ এটাই তার গবেষণার বিষয়৷ গাছগুলোর বিভিন্ন দিক দিক বা প্যাটার্ন নিয়ে তারা গবেষণা করছে৷ একটি গাছের সঙ্গে আরেকটি গাছের যোগাযোগ, ইন্টারএ্যাকশানের দিকে নজর রাখা হচ্ছে৷

সারাঙ জার্মানিতে আসার আগে শ্রীলঙ্কায় লেকচারার হিসেবে কাজ করেছেন তিন বছরেরও বেশি৷ তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষ ছুটি নিয়ে জার্মানিতে এসেছেন৷ পিএইচডি শেষ করার পর আবারো ফিরে যাবেন শ্রীলঙ্কায়৷ তিনি কাজ করছেন ইউনিভার্সিটি অফ পেরেডেনিয়ায়৷ জার্মানিতে সারাঙ স্ত্রী এবং সন্তান নিয়ে থাকছেন৷ পরিবারের পুরো খরচ বহন করছে ডিএএডি৷ ভবিষ্যতে কী করতে চান, কোথায় কাজ করতে চান? সারাঙ জানান,‘‘ আমাকে অবশ্যই শ্রীলঙ্কায় ফিরে যেতে হবে, কারণ আমি ছুটিতে এসেছি৷ দেশকে কিছু দিতে চাই৷ আমার পোস্ট ডক্টরেট করার ইচ্ছে আছে৷ তবে এর আগে আমাকে পিএইচডি শেষ করতে হবে এবং শ্রীলঙ্কায় ফিরে গিয়ে অন্ততপক্ষে তিন থেকে চার বছর কাজ করতে হবে৷''

২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সারাঙ জার্মানিতে থাকবেন৷ ততদিনে তাঁর পিএইচডি তিনি শেষ করতে পারবেন বলে আশা করছেন৷

প্রতি বছর গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজন করে থাকে শহরের সব চেয়ে বড় নাচের আসরটি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেই আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে প্রফেসর, অন্যান্য কর্মী কেউই বাদ যায় না৷ অত্যন্ত জনপ্রিয় এই নাচের আসরটি রীতিমত পেশাদারী বলে পরিচিতি লাভ করেছে৷ এর সাথে আছে গান৷ জ্যাজ, ব্যালে, ব্লুজ – কোনো কিছুই বাদ যায় না এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে৷

এই অনুষ্ঠানটি গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান৷ অধীর আগ্রহে শহরবাসী প্রতি বছর অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য৷

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ ছাত্রছাত্রী এপর্যন্ত নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন৷ পড়াশোনা, গবেষণায় এক্ষেত্রে গ্যোটিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে আছে অন্য যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন