1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্লিমিং পিল সেবন করে মৃত্যু

২১ মার্চ ২০১১

হালকা-পাতলা থাকতে কে না চায়! সবাই চায় আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারি হতে৷ মেয়েদের মধ্যে এই প্রবণতা একটু বেশিই দেখা যায়৷ ফ্রান্সে কিছুদিন আগে বের হয়েছিল এক ধরণের ডায়েটপিল৷ এই পিল সেবন করে মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় এক হাজার মানুষ৷

https://p.dw.com/p/10d8X
ছবি: Fotolia/Graça Victoria

প্রায় তিন বছর ধরে ভিভিয়ান গদিনো স্লিম থাকার জন্য বিশেষ এই পিলটি সেবন করেছেন৷ তার ফলও তিনি ভোগ করেছেন৷ ভিভিয়ান জানান,‘‘আমার শ্বাস-প্রশ্বাস আগের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত৷ সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করলেই আমি তা টের পেতাম৷ অথবা যদি আমি দ্রুত হাঁটতাম, তাহলেও আমার নিঃশ্বাস আটকে আসত৷ আমি আগের চেয়ে এখন অনেক কম হাঁটাহাঁটি করি৷''

ভিভিয়ান আগের চেয়ে অনেক অল্প পরিশ্রমেই কাহিল হয়ে পড়েন৷ বাজারে যখন এই স্লিমিং পিলটি আসে তখন থেকেই ভিভিয়ান তা সেবন করেন৷ তখনই শারীরিক দুর্বলতাগুলো চোখে পড়ে৷ তিন বছর ধরে ওষুধটি সেবনের পর তিনি তা ছেড়ে দেন৷ কিন্তু এখনও ওষুধটির ক্ষতিকর রেশ রয়ে গেছে৷ এরপর আরো অনেকেই এই ওষুধটির নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলে৷ সবাই বাধ্য হয়ে কথা বলেন আইনজীবীদের সঙ্গে৷ প্রায় প্রতিদিনই একজন করে আসছেন ওষুধ সেবনের পর কী কী হয়েছে তা জানাতে৷ আইনজীবী জর্জ আলেকজঁন্দ্র অ্যাঁম্ব্যার বললেন,‘‘আমাদের এখনো অনেক কাজ বাকি৷ প্রায় বারোশো প্রশ্ন আমরা হাতে পেয়েছি৷''

বিশেষ এই পিলটির নাম মেডিয়েটর৷ এই ওষুধটি মূলত যারা ডায়াবেটিসের রোগী তাদের দেয়া হয়৷ কিন্তু স্লিম থাকার জন্য এই ওষুধটি এমন সব রোগীদের দেয়া হয়েছে যাদের ডায়াবেটিস নেই৷ সমস্যার শুরু হয়েছে তখন থেকেই ৷ জর্জ আলেকজঁন্দ্র আরো বললেন,‘‘এই ওষুধ সেবনের ফলে কী কী হতে পারে, তাও রোগীদের জানানো হত৷ খিদে লাগবেই না এবং না খাওয়ার জন্য শরীর হালকা-পাতলা হতে থাকবে৷ এসব কথা লিখে রোগীদের দেয়া হত৷ কিন্তু এই ওষুধটি শুধু যে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য, তা কখনো রোগীদের জানানো হত না৷''

Flash-Galerie Jahresrückblick Wirtschaft 2010
ছবি: Dominik Joswig

ইভলিন এলমালেহ এক বছর আগেও মেডিয়েটর সেবন করেছেন৷ তিনি জানালেন, ওষুধটি সত্যিকার অর্থেই চমক দেখিয়েছে৷ একই সঙ্গে বেশ কিছু সর্বনাশও করেছে৷ ইভলিন জানান,‘‘আমার বুকে সারাক্ষণই এক ধরণের চাপ আমি অনুভব করতাম৷ নিচু হয়ে কিছু তুলতে গেলে আমি সহজে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতাম না৷ আমি পুরোপুরি হাঁপিয়ে উঠতাম, আমার ঘাম ঝরে পড়তো৷ ভারি কিছু তুলতে গেলে আমার মনে হত, আমি ম্যারাথনে নেমেছি৷ শক্তি পেতাম না, বুক ভরে নিঃশ্বাসও নিতে পারতাম না৷ দ্রুত একটি ঘর থেকে অন্য একটি ঘরেও যেতে পারতাম না৷ আমার নিজেকে পুরোপুরি অকেজো মনে হত৷''

এরপর ৬২ বছরের ইভলিনের ওপর চলে নানা ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা৷ পরে জানা যায় ‘মেডিয়েটর' সেবনের ফলেই এমনটি হয়েছে৷ ইভলিন জানান,‘‘পরীক্ষায় জানা যায় আমার হৃদযন্ত্রের একটি প্রক্রিয়া ঠিকমত কাজ করছিল না৷ একারণেই আমি অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠতাম৷ এসব অসুস্থথার মূলে রয়েছে ‘মেডিয়েটর' তা আমাকে জানানো হয়৷''

মেডিয়েটর সত্যি সত্যিই হৃদযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করতে পারে তা চিকিৎসকরা জানিয়েছেন৷ ফ্রান্সের সংসদে যিনি স্বাস্থ্যনীতির দিকগুলো দেখাশোনা করেন, আলাপ-আলোচনা করেন – তিনি নিজেও একজন চিকিৎসক৷ জেরার বাপ্ত জানতে চান কীভাবে বছরের পর বছর ওষুধ কোম্পানি ‘সেরভিয়ের' এধরণের একটি ওষুধ বাজারে ছেড়েছিল৷ এই ওষুধটির ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো অবহেলা করা হয়েছিল৷ ক্ষুব্ধ জেরার্দ বলেন,‘‘আমরা আমাদের অনুসন্ধানে জানতে চেয়েছি, সেরভিয়ের কীভাবে এমন একটি ওষুধ তৈরি করে বাজারে ছাড়ল? এর সঙ্গে অবশ্যই অনুমোদন সংস্থাগুলো জড়িত৷ তাদের প্রভাব রয়েছে৷ শুধুমাত্র এদের সমর্থন এবং প্রভাবের কারণেই এমন একটি ওষুধ এতগুলো বছর বাজারে টিকেছিল৷''

এই ওষুধ সেবন করে প্রায় এক হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনসের্ম তা জানিয়েছে৷ ওষুধ প্রতিষ্ঠান সেরভিয়ের কিছুদিন আগেও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল৷ কারণ প্রতিষ্ঠানের মালিক জাক সেরভিয়ের প্রেসিডেন্ট নিকোলা সার্কোজির কাছ থেকে ‘লিজিয়ন অফ অনার' উপাধি পেয়েছেন৷ এখনো তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না৷ কোনো প্রশ্নের উত্তরও তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায় নি৷

সেরভিয়ের এবং মেডিয়েটরের ফলে ফ্রান্সে স্বাস্থ্যনীতি এবং স্বাস্থ্যসেবার ওপর থেকে অনেকেরই আস্থা উঠে যাচ্ছে৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন