1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সৎকারে নারাজ পরিবার, দায় পুরসভার

পায়েল সামন্ত
১ আগস্ট ২০২০

প্রিয়জনের মৃতদেহ অচ্ছুৎ হয়ে উঠছে পরিবারের কাছেই৷ করোনায় মৃত্যু না হলেও দেহ হাসপাতালে রেখেই বিদায় নিচ্ছেন অনেকে৷ সৎকারের ঝামেলার পাশাপাশি তাড়া করে বেড়াচ্ছে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ও৷

https://p.dw.com/p/3gGM3
প্রিয়জনের মৃতদেহ অচ্ছুৎ হয়ে উঠছে পরিবারের কাছেই৷ করোনায় মৃত্যু না হলেও দেহ হাসপাতালে রেখেই বিদায় নিচ্ছেন অনেকে৷ সৎকারের ঝামেলার পাশাপাশি তাড়া করে বেড়াচ্ছে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ও৷
ছবি: DW/Payel Samanta

কোভিডে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ৪৬ জনের৷ সবচেয়ে বেশি মৃত্যু উত্তর ২৪ পরগনা ও কলকাতায়৷ করোনা ছাড়াও অন্যান্য কারণে অনেকে মারা যাচ্ছেন৷ কলকাতার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলি থেকে অনেক রোগী মহানগরের হাসপাতালে ভর্তি হন৷ সেখানে যাঁদের মৃত্যু হয়, তাঁদের দেহ পরিবারের সদস্যরা নিজ এলাকায় নিয়ে গিয়ে সৎকার করেন৷ করোনার আবহে এই চিরাচরিত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে৷ শুধু করোনা নয়, অন্য কোনো রোগে মৃত ব্যক্তির দেহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাচ্ছেন না৷ হয় মৃত্যুর পর নীরবে সরে পড়ছেন অথবা হাসপাতালের কাছে মুচলেকা দিয়ে যাচ্ছেন, এই দেহ সৎকারে সরকার বা পুরসভা উদ্যোগ নিলে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই৷ এই প্রবণতার ফলে সমস্যায় পড়েছে কলকাতা পুরসভা৷ পুর এলাকার অধীন বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড ছাড়া অন্য রোগে যে রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে পুরসভাকে৷ এর ফলে শবদাহ করার চাপ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে৷

কলকাতা পুরসভার প্রধান প্রশাসক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম নিজেই তথ্য দিয়েছেন, দেহ অনেক সময় পরিবারের সদস্যরা রেখে চলে যাচ্ছেন বলে প্রতিদিন প্রায় ৫০টি শব সৎকারের দায়িত্ব এসে পড়ছে পুরসভার ঘাড়ে৷ পুরসভার বর্তমান পরিকাঠামো অনুযায়ী এই সংখ্যাটা যথেষ্ট৷ অথচ সাধারণ রোগে মৃত ব্যক্তির দেহ নিয়ে যেতে পরিবারের সংক্রমণজনিত সমস্যা থাকার কথা নয়৷ দাহ করার সময় করোনায় মৃতের মতো বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করার দরকার নেই৷ তা সত্ত্বেও কেন প্রিয়জনের দেহ রেখে মুচলেকা দিয়ে চলে যাচ্ছেন অনেকে?

সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

এই প্রশ্ন থেকেই উঠে আসছে আরো বড় সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিত৷ করোনা আবহে নানা সন্দেহ ও সংশয় ঘিরে রেখেছে মানুষকে৷ সব সময় একটা আতঙ্ক তাড়া করছে৷ এমন একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে যেখানে করোনায় মৃত্যু না হলেও পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে৷ সমস্যা তৈরি হয়েছে দেহ সৎকারের ক্ষেত্রে৷ তাই অনেক পরিবার ইচ্ছার বিরুদ্ধেও প্রিয়জনের দেহ হাসপাতালে রেখে চলে যাচ্ছেন৷ সার্বিকভাবে এই পরিস্থিতির জন্য বাঙালির অধঃপতনকে দায়ী করছেন অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের হৃদয় শুকিয়ে গিয়েছে৷ ১৯০৬ সালে প্লেগে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল৷ কিন্তু তখন বুদ্ধিজীবীরা সক্রিয় ছিলেন৷ আর এখন আতঙ্ক যেন উল্লাসে পর্যবসিত হয়েছে৷’’ এই পরিস্থিতির জন্য সংবাদমাধ্যমকে অনেকটা দায়ী করে তিনি বলেন, ‘‘মানবিকতার এই পতন একদিনে হয়নি৷ ধীরে ধীরে একটা সুখী ও আত্মতৃপ্ত গোষ্ঠী পলায়নমুখ হয়েছে৷ বিদ্যাসাগরের জন্মের ২০০ বছরে বাঙালির এই পরিণতি নির্মম নিয়তির মতো৷’’

মানুষ সত্যি কতটা অসহায় আর কতটা পলায়নমুখ, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে৷ তবে বর্তমান ঘটনাক্রমে এটা পরিষ্কার, করোনার দাপট শুরু হওয়ার পর চার মাস কেটে গেলেও জনসচেতনতা সেভাবে গড়ে ওঠেনি৷ সামাজিক দূরত্বের বার্তা প্রচার করা হয়েছে, কিন্তু আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সহমর্মিতায় ঘাটতি থেকে গিয়েছে৷ ইতিমধ্যে পুরসভা দেহ সৎকারের চাপ সামলাতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে৷ নতুন পাঁচটি শববাহী গাড়ি কেনা হচ্ছে৷ বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কেনা হয়েছে ‘প্রণাম’ নামে একটি গাড়ি, যাতে সাতটি দেহ একসঙ্গে বহন করা যাবে৷ অত্যন্ত কম তাপমাত্রায় দেহ পরিবহণের সুবিধা রয়েছে এই গাড়িতে৷ এছাড়া মৃতদেহ বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে থাকলে এবার থেকে সরাসরি জানানো যাবে পুর প্রশাসককে৷ এজন্য ফিরহাদ হাকিমকে সরাসরি বার্তা পাঠানো যাবে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে৷ সম্প্রতি বেকবাগান, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বেহালায় দীর্ঘক্ষণ দেহ পড়ে থাকায় সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রশাসন৷ এই অভিযোগ আর উঠুক, এমনটা চাইছে না কলকাতা পুরসভা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য