1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সড়ক বন্ধ, যানবাহন নেই, তাই যানজটও নেই!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২২ মার্চ ২০১৮

ঢাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে৷ বেশ কিছু এলাকায় সড়ক বন্ধ করে দেয়ায় যানবাহন চলাচলই করেনি৷ ফলে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে আনন্দর‌্যালি  প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি করেনি৷ 

https://p.dw.com/p/2umUz
ছবি: bdnews24.com

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ( ডিএমপি) আগেই ১১টি স্থানে যানবাহন চলাচল সীমিত রাখার ঘোষণা দেয়৷ বুধবারের ওই ঘোষণায় বলা হয়, ‘‘স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তোরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ৷ এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার  সরকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন৷ এতে ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং অধীন দপ্তরগুলো অংশ নেবে৷ তারা ব্যানার, ফেস্টুনসহ শোভাযাত্রা করে স্টেডিয়ামে আসবে৷ ৯টি স্থান থেকে শোভাযাত্রা করে স্টেডিয়ামে আসার কারণে বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এবং চারপাশের বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে সমস্যা হবে৷’’<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fdw.bengali%2Fvideos%2F10155308531190978%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>

শোভাযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে শাহবাগ, কাকরাইল মসজিদ, নাইটিঙ্গেল, ফকিরাপুল, শাপলা চত্বর, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, চানখাঁরপুল, বকশিবাজার, পলাশি ও নীলক্ষেত অঞ্চলে চলাচলকারীদের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেয় ডিএমপি৷ শুধু তাই নয়, জনসাধারণকে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এসব পথে না যাওয়ার জন্যও বলা হয়৷ আর একই সঙ্গে  বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এলাকার আশপাশে ব্যাকপ্যাক, হাতব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ ও সিগারেট লাইটার বহন নিষিদ্ধ করা হয়৷

Bangladesch Entwicklungsland Festlichkeiten Dhaka
ছবি: bdnews24.com

দুপুর ২টা থেকেই ওইসব এলাকায় যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়, নয় তো বন্ধ করে দেয়া হয়৷ আর সকাল থেকে ঢাকার রাস্তায় যানবাহন চলাচল ছিল কম৷ দুপরের পর গণপরিবহন তেমন ছিল না৷ কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন প্রাইভেটকার মোটরবাইক এবং অটোরিকশা দেখা গেছে৷ তা-ও অবশ্য নির্ধারিত এলকার বাইরে৷ লোকজনও ভোগান্তির কথা চিন্তা করে প্রয়োজন ছাড়া কমই বাইরে বের হয়েছেন৷ যাঁরা পেশাগত কাজে বাইরে বের হতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে৷ সেরকমই একজন এস এম আব্বাস৷ তিনি দুপুরের পর মোটরবাইকে সেগুন বাগিচা এলাকা থেকে কারওয়ান বাজার যাওয়ার চেষ্টা করেন৷ তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল এমন, ‘‘আমি শিল্পকলা, কাকরাইল, মগবাজার বিভিন্ন দিকে আসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই৷ এরপর মোটরবাইক ফুটপাথে তুলে ঠেলতে শুরু করি৷ তা-ও এগোতে পারছিলাম না৷ কারণ, ফুটপাথে তখন মানুষের ঢল৷’’

অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন এস এম আব্বাস

তিনি আরো জানান, ‘‘ওই সময়ে বাসসহ অনেক গণপরিবহণ বিভিন্ন পয়েন্টে আটকে দেয়া হয়৷ কোনোটি মিছিলের মাঝে আটকা পড়ে৷ ফলে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ যাত্রীদের বাস থেকে নেমে যেতে হয়৷ তারা পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন৷’’

ফটো সাংবাদিক নাসিরুল ইসলাম পেশাগত কাজেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, পল্টন, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ ও হাইকোর্ট এলাকায় ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার চোখে কোনো যানজট এইসব এলকায় চোখে পড়েনি৷ আসলে তেমন কোনো যানবাহনই ছিল না, তাই যানজটও ছিল না৷ সকাল থেকেই যানবাহন ছিল কম৷ দুপুরের পর আরো কমে যায়৷ আর নির্দিষ্ট কয়েকটি এলকায় যানবাহিনই ছিল না৷ কিছু মাইক্রোবাস ও পিকআপ ভ্যান চোখে পড়েছে৷ আর সেগুলোতে যাঁরা মিছিলে অংশ নিয়েছেন, তাঁরাই ছিলেন৷’’

আসলে তেমন কোনো যানবাহনই ছিল না, তাই যানজটও ছিল না: নাসিরুল ইসলাম

তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়ছে নগরবাসী অতীত অভিজ্ঞতার কারণে জরুরি কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হননি৷ যাঁরা বের হয়েছেন, তাঁদের পায়ে হেটেই চলতে হয়েছে৷ সন্ধ্যার পর ভোগান্তি আরো বাড়বে, কারণ, যাঁরা অফিসে গিয়েছেন, বাইরে কাজে গিয়েছেন, তাঁদের যানবাহন সংকটে পড়তে হবে৷’’

এদিকে পুলিশ বিকল্প যেসব সড়কের কথা বলেছে, সেখানে ছিল তীব্র যানজট৷ ডিএমপি এলাকায় সাধারণভাবে কোনো সমাবেশ করতে হলে পুলিশের অনুমতি প্রয়োজন৷ আর জনসাধারণের চলাচল ও যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত করে হয়, এমন কোনো কর্মসূচি পালনে নিষেধাজ্ঞা আছে৷ মেট্রোপলিটন পুলিশের ২৮ ও ২৯ ধারা অনুযায়ী, কোনো এলাকায় সভা সমাবেশ করতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়৷ আর পুলিশ কমিশনার যদি মনে করেন, তাহলে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো সভা সমাবেশ বা মিছিল বা কোনো ধরনের অস্ত্র বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারেন৷ আর এই আইনের কারণে বিএনপিকে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে কোনো প্রতিবাদ বা প্রতিবাদ সমাবেশ করতে দেয় না পুলিশ৷ এমনকি তারা কয়েকমাস ধরে সমাবেশেরও অনুমতি পাচ্ছে না৷

Bangladesch Entwicklungsland Festlichkeiten Dhaka
ছবি: bdnews24.com

এর আগে গত বছরের অক্টোবরে খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে দেশে ফিরলে বিমানবন্দরে তাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়৷ তখনো সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বিমানযাত্রীরা বিপাকে পড়েন৷ জাতিসংঘের  সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিয়ে ঢাকায় ফিরলে প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে সম্বর্ধনা দেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা৷ এসব সংবর্ধনা ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করে৷ আর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষনের দিন ঢাকায় সমাবেশের সময় সড়কে ব্যাপক জানজট হয়৷ সেই যানজটে কয়েকটি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটার অভিযোগ আছে৷

আমরা কোনো সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করিনি: মাসুদুর রহমান

ডিএমি'র উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘সবদিক বিবেচনা করেই আমরা কিছু সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছি৷ জনদুর্ভোগ এড়াতে আরো কিছু সড়কে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছি৷ পুরোপুরি বন্ধ করিনি৷ তবে আনন্দ র‌্যালিতে মানুষের ঢল নামায় এমনিতেই কিছু সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে৷ আমরা কোনো সড়ক পুরোপুরি বন্ধ করিনি।’’

তিরি বলেন, ‘‘অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে এবার আমরা নিরাপত্তার ওপর ব্যাপক জোর দিয়েছি। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সাদা পোশাকে পুলিশ ছাড়াও গোয়েন্দাদের তৎপর দেখা যায়৷  আর এ কারণেই কিছু কিছু জায়গায় আমরা ব্যাগ, লাইটারসহ কিছু জিনিস বহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আজকের (বৃহস্পতিবার) আনন্দ র‌্যালিতে কোনো জনদুর্ভোগ, ভোগান্তি বা হয়রানির খবর আমরা পাইনি৷’’