1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হাইতির জন্য হাজার ব়্যাকেট’

১৫ মার্চ ২০১০

শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য দুইয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলাধুলা৷ এ বিষয়টি মাথায় রেখেই হাইতির ভূমিকম্প-দুর্গত তরুণ প্রজন্মকে মানসিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে দেশটিতে পাঠানো হচ্ছে ব্যাডমিন্টন ব়্যাকেট৷

https://p.dw.com/p/MT0J
ছবি: picture-alliance/ dpa

স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হাইতি৷ বিধ্বস্ত শহর, জনপদ, মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অফিস আদালত সবই৷ একদিকে, ধ্বংসস্তুপ সরিয়ে নতুন নির্মাণ ও ত্রাণের প্রতীক্ষা আরেক দিকে কর্মসংস্থানের তীব্র সংকট৷ এই দুইয়ের জাঁতাকলে চরম হতাশায় ডুবে যাচ্ছে হাইতির তরুণ সমাজ৷

প্রাকৃতিক দুর্যোগের এমন আকস্মিক আঘাত থেকে কিছুটা হলেও মানসিক পরিত্রান যোগাতে, এ অবস্থা কাটিয়ে নতুন মনোবল নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে খেলার মাঠের মানুষরা কিভাবে হাইতির তরুণদের পাশে দাঁড়াতে পারেন তা নিয়ে ভাবছিলেন এক ফরাসী ক্রীড়া লেখক৷ ‘সোলিবাড' নামে একটি দাতব্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রাফায়েল সাশেতাত তাঁর ইচ্ছার কথা জানাতেই এগিয়ে আসেন মাঠের মানুষরাও৷

‘সোলিবাড' এর উদ্যোগে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় হাইতির তরুণদের জন্য ১,০০০ ব্যাডমিন্টন ব়্যাকেট পাঠানোর৷ যাতে তাঁরা অল্প আয়াসে যে কোনো মাঠেই কিছুটা হলেও খেলায় মন বসাতে পারেন৷ আর সেই ব্যাডমিন্টন ব়্যাকেট যদি হয় বিশ্বখ্যাত তারকাদের তাহলে নিশ্চয়ই তরুণদের মনে তা যোগাবে বাড়তি উৎসাহ উদ্দীপনা৷ একবার ভাবুন, অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের হাতের ব়্যাকেটটি যদি পেয়ে যায় পোর্ট অফ প্রিন্সের কোনো এক কিশোর তাহলে তার উত্তেজনাটি কেমন হতে পারে৷

ঘটনা ঘটছেও ঠিক সেরকমই৷ শুক্রবারই ১০০তম অল-ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপের দিনে ব্রিটেনের ন্যাশনাল ইনডোর এরিনা'য় সেকথা জানালেন আয়োজকরা৷ এই উদ্যোগে হাইতির তরুণদের পাশে দাঁড়াতে নিজের ব্যবহার করা ব়্যাকেট দিচ্ছেন ২০০৪ সালের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন ইন্দোনেশিয়ার তৌফিক হিদায়াত৷ বিশ্বের চারনম্বর শীর্ষ খেলোয়াড় ফ্রান্সের পি হোঙ্গিয়ান, সাবেক বিশ্বসেরা চীনের ঝোও মি, দ্বৈত প্রতিযোগিতায় বিশ্বের এক নম্বর জুটির মালয়েশীয় তারকা কু কিয়েন কিয়াত এবং ২০০৪ অলিম্পিকের রৌপ্য পদকজয়ী ব্রিটেনের নাথান রবার্টসন সহ আরও অনেক খ্যাতনামা খেলোয়াড়রাই৷

‘সোলিবাদ' প্রতিষ্ঠাতা সাশেতাত বলেন, ‘‘আমাদের প্রায় সবাই ব্যাডমিন্টন খেলার থেরাপেটিক এবং সামাজিক গুণাগুণের কথা জানি৷ হাইতির তরুণদের ব্যাডমিন্টন খেলায় সম্পৃক্ত করাটা তাদেরকে পুনরায় সমাজে সক্রিয় হতে সহায়তা করার একটা দারুণ উপায় হতে পারে৷''

হাইতির ৮ থেকে ২০ বছর বয়সি কিশোর-কিশোরীদের হাতে এসব ব্যাডমিন্টন পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে দেশটির অলিম্পিক কমিটি৷ আর ‘সোলিবাড' এর এই উদ্যোগে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেলার মাঠের মানুষদের আরেক সংগঠন ‘পিস এন্ড স্পোর্ট'৷ চারবারের ‘অলিম্পিক মডার্ন প্যানথালন' চ্যাম্পিয়ন জোয়েল বোওঝুও এর প্রতিষ্ঠা করা সংগঠন এটি৷ আর যৌথ এ উদ্যোগের নাম ‘হাইতির জন্য হাজার ব়্যাকেট'৷

ভূমিকম্পের কিছুদিন পরেই হাইতির অলিম্পিক কমিটি জাতিসংঘ সংস্থা ‘ইউনিসেফ' এর সহায়তায় তরুণদের জন্য খেলাধুলা কার্যক্রম চালুর একটি উদ্যোগ নেয়৷ ওই কার্যক্রমের আওতায় হাইতির ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকারদের খেলাধুলার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে৷ দেশটির প্রায় ১ লাখ কিশোর-কিশোরীকে এবং তরুণ-তরুণীকে এর আওতায় আনার চেষ্টা করছেন তারা৷ এই উদ্যোগে আছে ফুটবল, ভলিবল, জুডো, দাবা, টেনিস এবং ব্যাডমিন্টন খেলার সুযোগ৷

গত ১২ই জানুয়ারির ভূমিকম্পে হাইতিতে প্রায় ২ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷ আহত হয়েছে আরও কয়েক লক্ষ মানুষ৷ ঘরবাড়ি থেকে উদ্বাস্তু হয়েছে প্রায় ১০ লাখ হাইতিবাসী৷

প্রতিবেদন : মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা : দেবারতি গুহ