1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাজি সেলিম কারাগারে এক রাত কাটিয়ে হাসপাতালে

২৩ মে ২০২২

দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজা পাওয়া হাজি মো. সেলিমকে রোববার কারাগারে পাঠায় আদালত। আজ সোমবার সকালে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

https://p.dw.com/p/4Bj14
আওয়ামী লীগ নেতা হাজি সেলিম (ফাইল ফটো)ছবি: DW/M. Mamun

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম জানায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশে রোববার ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়েছিলেন পুরান ঢাকার লালবাগের এমপি হাজি সেলিম। শুনানি শেষে বিচারক শহীদুল ইসলাম জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন। 

হাজি সেলিম আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উপদেষ্টমণ্ডলীতে রয়েছেন। বিগত কমিটিতে তিনি সদস্য ছিলেন। তার আগে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। যে মামলায় তাকে কারাগারে যেতে হল, সেটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে।

সে সময় বিশেষ আদালত সাজা দিলেও হাই কোর্ট তা বাতিল করে দিয়েছিল। কিন্তু আপিল বিভাগ সেই রায় বাতিল করে এবং হাই কোর্ট পরে ১০ বছরের সাজা দিয়ে হাজি সেলিমকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই কিংবা ততোধিক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না। হাই কোর্ট হাজি সেলিমকে ১০ বছরের সাজা দেওয়ার সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেছিলেন, নৈতিক স্খলনে দণ্ডিত হওয়ায় এই আইনপ্রণেতা সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

অন্যদিকে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেছিলেন, "সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাজী সেলিমের সংসদ সদস্য পদ থাকবে বলে তার ধারণা।"

রোববার জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে অথবা যে কোনো শর্তে জামিন চেয়েছিলেন হাজি সেলিম। আদালত তা খারিজ করে দিয়েছে। সংসদ সদস্য হিসাবে হাজি সেলিমকে কারাগারে ডিভিশন দেওয়ার আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা। বিচারক এক্ষেত্রে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

আদালতে যা হলো

রোববার বেলা ৩টার পর হাজি সেলিম গাড়িতে করে আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। তার বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সকাল থেকে আদালতের প্রবেশ মুখে ও বাইরে পুলিশি নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছিল। সমর্থ্কদের হুড়োহুড়ি আর হৈচৈয়ের মধ্যে এই সংসদ সদস্য এজলাসে প্রবেশের পর তার বেশ কয়েকজন সমর্থকও ঢুকে পড়েন। পরে বিচারক খাসকামরা থেকে এজলাসে আসন নেন।

বিচারক আইনজীবী, সাংবাদিক ও পুলিশ বাদে সবাইকে বের হতে বললেও হাজি সেলিমের কয়েকজন সমর্থক গো ধরে এজলাসেই অবস্থান করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ঠেলাঠেলি করতেও দেখা যায়।

প্রথমে হাজি সেলিমের জামিন শুনানি হয়। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী প্রাণ নাথ ও সাইয়েদ আহমেদ রাজা। দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল জামিনের বিরোধিতা করেন। পরে দণ্ডিত সেলিমের পক্ষে চাওয়া হয় কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা ও উন্নতমানের চিকিৎসা। আসামির আইনজীবীরা বলেন, "মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় সেলিম কথা বলতে পারেন না, তিনি এখন বাক প্রতিবন্ধী।"

অন্যদিকে কাজল বলেন, "যেহেতু ১০ বছরের কারাদণ্ড, সেহেতু জামিন দেওয়ার সুযোগ এ আদালতের নেই। আর ডিভিশন ও কারাগারে চিকিৎসার বিষয় বিবেচনা করবে কারা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়েও আদালতে সরাসরি কোনো আদেশ দিতে পারে না, বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।" 

মুজিব কোট পরিহিত সেলিম কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শুনানি শুনছিলেন। বিচারক তার জামিন আবেদদন নামঞ্জুর  করে অন্য দুই আবেদনের বিষয়ে পরে আদেশ দেবেন বলে খাসকামরায় চলে যান। জামিন আবেদন নাকচের ২০/২৫ মিনিট পরে ডিভিশন ও চিকিৎসার বিষয়ে আদেশের সত্যায়িত কপি আসামি পক্ষের হাতে আসে।

সেখানে বলা হয়, দাবি মতে দরখাস্তকারী আসামি একজন সংসদ সদস্য এবং ভালো চরিত্রের অধিকারী, তার সামিাজিক মর্যাদা, আসামি যে অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন তার ধরণ, ইত্যাদি বিবেচনায় তাকে জেলকোডের বিধান অনুযায়ী ডিভিশন-১ প্রদান অথবা উন্নতমানের চিকিৎসা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হল।

জামিন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর বিকাল ৫টার দিকে পুলিশের গাড়িতে করে হাজি সেলিমকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়। পরে বিকাল সাড়ে ৫টায় পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় কেরানীগঞ্জ কারাগারে। বিকাল ৫টা ৫৫ মিনিটে তাকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে দেওয়া হয় বলে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. হাফিজুর রহমান।

শুনানি চলাকালে হাজি সেলিমের তিন ছেলে সোলাইমান সেলিম, ইরফান সেলিম ও সালমান সেলিম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর সমর্থকরা আদালতের বাইরে তার মুক্তি চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।  

মামলার বৃত্তান্ত

অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার হাজি সেলিম ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। পরে আওয়ামী লীগের টিকেটে তিনি প্রথমবার এমপি হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি হেরে যান বিএনপি প্রার্থী নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর কাছে। এরপর জরুরি অবস্থার সময় আরও অনেক রাজনীতিবিদের মত তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা হয়।

অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লালবাগ থানায় দুদকের এই মামলাটি দায়ের করা হয় ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর। পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়। পাশাপাশি জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে হাজি সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

হাজি সেলিম এবং তার স্ত্রী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তাদের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাই কোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজি সেলিমের আপিল পুনরায় হাই কোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। সেই শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাই কোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজি সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়।

আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় আদালতের রায়ে দণ্ডিত হাজি সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের আপিলটি বাতিল করা হয়।

ওই বেঞ্চের দুই বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী এবং এ কে এম জহিরুল হকের স্বাক্ষরের পর ৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজি সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

এএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম, প্রথম আলো)