1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাতের লেখা যখন ব্যবসা হয়ে ওঠে

আন্টিয়ে বিন্ডার/এসবি২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪

আমাদের মধ্যে অনেককেই স্কুলে থাকতে সুন্দর হাতের লেখা প্র্যাকটিস করতে হতো৷ আজকাল কম্পিউটারের যুগে কে আর হাতে লেখে! কিন্তু হাতের লেখার কদর যে কমার বদলে বাড়ছে এবং এ নিয়ে যে ব্যবসাও করা যায়, তা জানতেন কি?

https://p.dw.com/p/1DLQD
Kalligraphie
ছবি: picture-alliance/Arco Images GmbH

অন্যের নির্দেশে লেখা প্রেমপত্র৷ ফাউন্টেন পেন বা ফেল্ট পেন দিয়ে কাগজে লেখা৷ বার্লিনের এক সংস্থা লুপ্তপ্রায় এই সাংস্কৃতিক ধারা বাঁচিয়ে রেখেছে৷ বলছি সুন্দর হাতের লেখার কথা৷ এমন ‘লেখক'-দের একজন আঙ্গেলিকা ভল্ফ৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি, অনেকটা নিজস্ব কণ্ঠের মতো, অত্যন্ত ব্যক্তিগত ও নিজস্ব৷'' তাঁর সহকর্মী লোরে বিয়র্কনার-এর মতে, ‘‘এতে অনেক আনন্দ পাওয়া যায়৷ কম্পিউটার জগতের তুলনায় অনেক বেশি ব্যক্তিগত৷''

৬০ জনেরও বেশি ‘পেনম্যান' বা সুন্দর হাতের লেখা বিশেষজ্ঞ এই সংস্থায় কাজ করেন৷ বেশিরভাগই নারী৷ অনেকেরই কোনো প্রথাগত প্রশিক্ষণ নেই, আছে শুধু প্রতিভা৷ প্রতি দিন দু'হাজারেরও বেশি চিঠি, আমন্ত্রণপত্র বা টেবিলের ‘প্লেস কার্ড' লেখা হয় এখানে৷ বছর দেড়েক আগে সংস্থাটি কাজ শুরু করেছে৷ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা টরস্টেন পেৎসল্ড বলেন, ‘‘আজকাল কে আর হাতে লেখে! আমি নিজেই তো তার দৃষ্টান্ত ছিলাম৷ কখনো চিরকুটে হয়ত কয়েক লাইন লিখতাম৷ কিংবা বেড়াতে গিয়ে পোস্টকার্ড৷ এর চেয়ে বেশি আবেগ আর আসতো না৷ কিন্তু সুন্দর হাতের লেখায় চিঠি? আজকের দিনে ধীরে-সুস্থে হাতে লেখার চল আর নেই বললেই চলে৷''

ভ্যালেন্টাইনস ডে কার্ড অথবা প্রাচীন জার্মান হরফে লেখা অভিনন্দন বার্তা৷ সুন্দর ক্যালিগ্রাফি অথবা হাতে লেখা ‘অফিশিয়াল' চিঠি৷ এমন পরিষেবার চাহিদা বাড়ছে৷ এর অন্যতম কারণ – ছাপার অক্ষরে লেখা চিঠির তুলনায় হাতে লেখা চিঠির মূল্য বা গুরুত্ব অনেক বেশি৷ টরস্টেন বলেন, ‘‘আজকাল ব্যক্তিগত চিঠি লেখার চল আর নেই৷ খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু অথবা এমন কাউকে লেখা হয়, যার জন্য অনেক সময় নেওয়া যায়৷ সেও তখন বোঝে, কেউ তার প্রতি আগ্রহী, তার জন্য সময় রয়েছে৷ সে তখন খাম খুলে মন দিয়ে সেই চিঠি পড়ে৷''

কিছু হাতের লেখা অত্যন্ত মূল্যবান৷ যেমন জার্মান লেখক হাইনরিশ ফন ক্লাইস্টের৷ কিন্তু কলম ধরেছেন মিরিয়াম সাক্স৷ তিনি হাতের লেখা নকল করার বিশেষজ্ঞ৷ এই প্রেরণা এসেছে বিখ্যাত লেখকদের কাছ থেকে৷ তবে আত্মীয়-স্বজনের হাতের লেখাও কপি করেছেন তিনি৷ ক্যালিগ্রাফি শিল্পী মিরিয়াম সাক্স বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই আমার এ বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে৷ এক জার্মান শিক্ষিকা ছিলেন, যাঁর হাতের লেখা ছিল মুক্তোর মতো৷ এখন বুঝি, তিনি মহাকবি গ্যোটের বড় ভক্ত ছিলেন, নিজেকে কিছুটা তাঁর মতো করে গড়ে তুলেছিলেন৷ শিক্ষিকা হিসেবে আমি তাঁর খুবই অনুরাগী ছিলাম৷ গোপনে আমিও সেই হাতের লেখা নকল করতাম৷ কিন্তু এ যেন লুকিয়ে অন্যের মধ্যে প্রবেশ করা৷''

অভিনেতা ও নাটক পরিচালক হিসেবেও মিরিয়াম তাঁর হাতের লেখা কাজে লাগান৷ যেমন ক্লাইস্টের এই নাটকে৷ চলচ্চিত্র-শিল্প ও মিউজিয়াম থেকেও বায়না আসে৷ নকল করার এই প্রতিভাকে তিনি পেশাদারী রূপ দিয়েছেন৷ নতুন পরিষেবার নাম – মহাকবি ইয়োহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটের হাতের লেখা৷

মিরিয়াম ইতিমধ্যে আরেক লেখক ফ্রানৎস কাফকার বাঁকানো হাতের লেখাও ভালোই রপ্ত করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘‘টি' অক্ষরটি মোটা ও বলিষ্ঠ৷ তিনি যেন শব্দটি লেখার পর সেটিকে আবার হত্যা করছেন৷''

কাফকার তুলনায় অনেক সুন্দর হলো নিকোলা উশনির-এর কারুকার্যর মতো অক্ষর৷ ক্যালিগ্রাফি জগতে ফরাসি এই বিশেষজ্ঞ তারকার মর্যাদা পেয়েছেন৷ গত ১১ বছর ধরে তিনি বড় বড় ফ্যাশন কোম্পানির জন্য আমন্ত্রণপত্র লিখছেন৷ সেই লক্ষ্যে তিনি নতুন হরফেরও উদ্ভাবন করে চলেছেন৷

শুধু তাই নয়, নিজের লেখার শৈলিকে একটি ফ্যাশন ‘ব্র্যান্ড' হিসেবেও বাজারে এনেছেন তিনি৷ ক্যালিগ্রাফি শিল্পী নিকোলা উশনির বলেন, ‘‘বল পেন ও ভালো ফাউন্টেন পেনের মধ্যে একটি বাছতে হলে দ্বিতীয়টি বেছে নেওয়াই ভালো বলে আমি মনে করি৷ কারণ তখন আপনি বেশ কসরত করে লিখতে বাধ্য হবেন, শব্দগুলি ভালো করে ভেবে দেখবেন৷ মনে রাখতে হবে যে, কালির টান তো থেকেই যায়৷''

টর্স্টেন পেৎসল্ড-এর সংস্থাও এর মধ্যে এত সাফল্য পেয়েছে, যে পরিষেবার সম্প্রসারণ করতে হয়েছে৷ ২০১৩ সালে তিনি ‘সুন্দর চিঠি' নামের এক অনলাইন দোকান খুলেছেন৷ সেখানে সাধারণ ক্রেতারা ১৭ ইউরো ব্যয় করে একটা আস্ত হাতে লেখা চিঠি অর্ডার করতে পারেন৷ পোস্ট কার্ড লেখানোর খরচ ৮ ইউরো থেকে শুরু৷ নিজের হাতে লিখতে না পারলেও বিষয়বস্তু যেন হৃদয় থেকে আসে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য