1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উসকানিতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ নভেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয় প্রকাশ পাচ্ছে৷ নতুন করে হামলার জন্য নানা উসকানিমূলক তৎপরতাও চালানো হচ্ছে৷ এ জন্য চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের যথেচ্ছ ব্যবহার৷

https://p.dw.com/p/2S6JW
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/K.A.R. Sumon

নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হামলার পর বাংলাদেশের আরো কয়েকটি জায়গাতেও মন্দির ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে৷ এর পাশাপাশি সংখ্যালঘুদের ওপর নতুন করে হামলার জন্য উসকানিমূলক তৎপরতারও প্রমাণ পাওয়া গেছে৷

খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলায় ফেসবুকে উসকানিমূলক ছবি পোস্ট করার দায়ে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনে এক যুবককে আটক করেছে মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ৷ তার নাম সাগর হাসেন৷ সে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্র দলের সঙ্গে জড়িত৷ সে মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেনের বড় ছেলে৷ বুধবার রাতে তাকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের মুসলিমপাড়া নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়৷ মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাহাদাত হোসেন জানান, ‘‘সাগর তার ফেসবুকে ফটেশপের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন একটি ছবি তৈরি করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি  কুনেন্টু চাকমার নামে চালিয়ে দেয়৷'' আটকের পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে৷ এ ঘটনায় সাগর হোসেনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়েছে৷

নূর খান

এদিকে বুধবার যশোরের কদমতলা এবং বৃহস্পতিবার ভোরে বরিশালের বানারীপাড়ার হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে৷ সেখানে দুবৃত্তরা মুখে গামছা বেধে মন্দিরে হামলা চালায়৷

চার বছর আগে রামুতে বৌদ্ধমন্দির ও পল্লীতে হামলার ঘটনায়ও ফেসবুকক ব্যবহার করা হয়েছিল৷ এক বৌদ্ধ যুবকের পেজে একটি ছবি ট্যাগ করে সে-ই এটা করেছে বলে গুজব ছড়িয়ে তখন হামলা চলানো হয়৷

নাসির নগরে হিন্দু পল্লীতে হামলার ব্যাপারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধেও উসকানির অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. সুরুজ আলী লাঠিসোটা নিয়ে মিছিল করে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন৷ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও তৌহিদি জনতার পৃথক দু’টি সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান৷

সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ আলী অবশ্য বলেন, ‘‘আমি শুধু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে রসরাজের (যার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বিতর্কিত ছবি আপলোডের অভিযোগ রয়েছে) ফাঁসি দাবি করেছি৷ হামলার উসকানি দেইনি৷''

আর নাসিরনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এটি এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘ঐ দিন সমাবেশে অংশ নিলেও আমি প্রতিবাদকারীদের থামানোর চেষ্টা করেছি৷ উসকানিমূলক কিছু বলিনি৷''

রানা দাশগুপ্ত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার এই উসকানির অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘উসকানি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ, ঘটনার উৎপত্তিস্থল  নাসিরনগরের হরিপুর৷ যে রসরাজ দাসের ফেসবুক থেকে অবমাননার কথা বলা হচ্ছে, সে পেশায় একজন জেলে এবং হরিপুর মৎস্যজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক৷ ওই সংগঠনের সভাপতি হলেন ১৯৭১ সালের রাজাকার তাইজুদ্দিনের ছেলে ফারুক মিয়া৷ ফারুক আবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি৷ ফেসবুকে ঘটনার পর রসরাজকে ফারুক বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে৷''

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু পল্লীতে হামলার দিনই হবিগঞ্জের মাধবপুরেও কয়েকটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে৷ ঐদিন বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধর্ম অবমাননার কথিত ফেসবুক পোস্টের প্রতিবাদে  মাধবপুর বাজারে ও স্থানীয় বুল্লা এলাকার দুটি মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুর করে  দুর্বৃত্তরা৷ তারা হিন্দুদের বাড়িঘরেও হামলা চালায়৷ মাধবপুরের ঘটনায় সোমবার মাধবপুর থানার এসআই গিয়াস উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাত দু’শ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন৷

জানা গেছে, বিকেলে মাধপুর উপজেলা চত্বরে হেফাজত ও আহলে সুন্নাত ওই প্রতিবাদের আয়োজন করে৷ আর প্রতিবাদ সমাবেশ চলার সময়ই মাধবপুর বাজারের প্রবেশ পথে ঝুলন এবং কালি মন্দিরসহ তিনটি মন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়৷ মন্দিরের আসবাব-পত্র ভাঙে তারা৷ কালিপুজার জন্য করা ১২টি স্টলও গুড়িয়ে দেয়া হয়৷ এরপর আশপাশের কয়েকটি হিন্দু বাড়িতেও ইটপাটকেল ছোড়ে দুর্বত্তরা৷এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে এই হামলা চলে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, ওহিদ হোসেন মাস্টার, মো. ওসমান, আজব খান ও মাহবুবের নেতৃত্বে ওই হামলা পরিচালিত হয়৷ তারা স্থানীয় জামায়াত নেতা৷ এবং তারাই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদের নামে হামলার জন্য সংগঠিত করেন৷

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার সময়ও দেখেছি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে ব্যবহার করেছে৷ নাসির নগরেও তাই৷ আবার খাগড়াছড়িতেও সেই অপচেষ্টা করা হয়েছিল৷''

তিনি বলেন, ‘‘আর প্রতিটি হামলায়ই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাচ্ছে৷ সুতরাং বিষয়টি সাধারণভাবে দেখা যাবেনা৷ সরকার এখনই কঠোর অবস্থানে না গেলে আরো খারাপ কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷'' বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০০৮ সাল থেকে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নানা ধরণ ও পর্যায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ তবে এর উদ্দেশ্য হলো এদেশ থেকে সংখ্যালঘুদের তাড়িয়ে দেয়া৷ যারা বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে দেখতে চায় না, তারাই এই ষড়যন্ত্র করছে৷ আর রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের একাংশ এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে জমিজমা দখলসহ নানা স্বার্থে৷''

তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি আরো খারাপ করতে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে৷ এটা আমরা আগেও দেখেছি৷''

এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান