হিটলারের বিরোধিতা করা নায়কেরা
১৯৩৩ সালে জার্মানির ক্ষমতায় আসেন আডল্ফ হিটলার৷ তাঁর কার্যক্রমের বিরোধিতা করে অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন, অনেককে দেশও ত্যাগ করতে হয়েছে৷ কেউ কেউ হিটলারকে হত্যার চেষ্টাও করেছেন৷
হত্যা চেষ্টা
হিটলারকে হত্যা করতে ১৯৪৪ সালের ২০ জুলাই তাঁর ‘ওল্ফস লেয়ার’ সদরদপ্তরে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল৷ কিন্তু নির্ধারিত সময়ের আগে বৈঠক করে ফেলায় বোমা ফাটলেও বেঁচে গিয়েছিলেন হিটলার৷ তবে চারজন নিহত হয়েছিলেন৷ হামলার সঙ্গে কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন৷ পরবর্তীতে চাঁদের ফাঁসি দেয়া হয়৷
নেপথ্যে যিনি ছিলেন
ওল্ফস লেয়ারে হিটলারকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন ছিলেন ক্লাউস গ্রাফ শেঙ্ক ফন স্টাফেনব্যার্গ৷ ১৯৪২ সালে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জার্মানির পক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়৷ তাই জার্মানিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে তিনি হিটলার সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন৷
দ্য ক্রাইসাউয়ার সার্কেল
জার্মান রাজনীতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে ‘ক্রাইসাউয়ার সার্কেল’ গঠন করা হয়েছিল৷ হেলমুট জেমস গ্রাফ ফন মল্টকে এবং পেটার গ্রাফ ইয়র্ক ফন ভার্টেনবুর্গ (ছবি) এই আন্দোলনের পেছনের মূল মানুষ ছিলেন৷ ‘ক্রাইসাউয়ার সার্কেল’-এর কয়েক কর্মীও ১৯৪৪ সালের ২০ জুলাই হিটলার হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন৷ তাঁদেরও পরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল৷
ভাই-বোন
হান্স ও সোফি শোল - এই দুই ভাই-বোনের নেতৃত্বে ১৯৪২ সালে মিউনিখের একদল শিক্ষার্থী হিটলার সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন৷ ‘হোয়াইট রোজ’ নামে গড়ে তোলা তাঁদের গ্রুপ নাৎসি আমলের অপরাধের সমালোচনা করে হাজার হাজার লিফলেট বিতরণ করেছিল৷ ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই দুই ভাই-বোনকে গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়৷
কাঠমিস্ত্রি গেওর্গ এলসার
১৯৩৯ সালে মিউনিখে এক জায়গায় হিটলারের বক্তব্য দেয়ার কথা ছিল৷ সেখানে একটি বোমা রেখেছিলেন এলসার৷ তবে যখন বোমাটি ফেটেছিল ততখনে বক্তব্য শেষ করে ঐ জায়গা থেকে চলে গিয়েছিলেন হিটলার৷ তবে বোমা বিস্ফোরণে সাতজন প্রাণ হারিয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন ৬০ জন৷ এলসারকে সেদিনই গ্রেপ্তার করে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷ ১৯৪৫ সালে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়৷
শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতিবাদ
হিটলার ১৯৩৩ সালে ক্ষমতায় আসার পর অনেক শিল্পী ও বুদ্ধিজীবী তার প্রতিবাদ করেছেন৷ পরবর্তীতে তাঁদের অনেককে ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে৷ ছবিতে বার্লিনের ক্যাবারে গোষ্ঠী ‘কাটাকম্বে’র সদস্যদের দেখতে পাচ্ছেন৷ তারাও হিটলার প্রশাসনের বিরোধিতা করেছিলেন৷ ফলে ১৯৩৫ সালে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ভ্যার্নার ফিঙ্ককে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল৷
তরুণদের প্রতিবাদ
হিটলার আমলে জার্মান তরুণ-তরুণীদের একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্রের জীবন যাপন রীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন৷ তাঁরা সুয়িং ড্যান্স ও সংগীতের ভক্ত ছিলেন৷ এই তরুণরা ‘ডি সুয়িং ইয়োগেন্ড’ বা সুয়িং ইয়থ নামে একটি গ্রুপ গড়ে তুলেছিলেন৷ তারাও বিভিন্ন সময় নাৎসি আমলের বিরোধিতা করেছেন৷ ফলে তাঁদের অনেককে গ্রেপ্তার করে তরুণদের জন্য গড়ে তোলা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল৷
রেড অর্কেস্ট্রা গ্রুপ
নাৎসি শাসকদের অপরাধের তালিকা তৈরি করতে ইহুদিদের সহায়তা করত ‘রটে কাপেলে’ গ্রুপ৷ এসব তারা লিফলেট আকারে বিতরণও করতো৷ এ কারণে ১৯৪২ সালে এই গ্রুপের ১২০-এর বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল৷ এর মধ্যে পঞ্চাশের বেশি ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷