1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হেট স্পিচের বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সাবধান হতে হবে'

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৬ মার্চ ২০১৮

বাংলাদেশে হেট স্পিচের সবচেয়ে বেশি শিকার কারা? হেট স্পিচ কারা, কেন দিচ্ছেন? এর প্রতিরোধে কি কোনো আইন আছে? এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন আর্টিকেল ১৯-এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক তাহমিনা রহমান৷

https://p.dw.com/p/2uuDB
ছবি: picture-alliance/dpa/J.W.Alker

ডয়চে ভেলে : বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বা হেট স্পিচ আসলে কী?

তাহমিনা রহমান : বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে আইনি ভাষায় আমরা হেট স্পিচ বলে থাকি৷ এর ব্যাখা যদি আমি সংক্ষেপে বলি তাহলে বলব, সব বক্তব্যই কিন্তু বিদ্বেষমূলক না৷ বিদ্বেষমূলক হতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে৷ যেমন, কোন প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, কে বলেছে, তার উদ্দেশ্য কী ছিল - এমন ৬টি কনডিশন আছে, সেগুলো পূরণ না করলে বিদ্বেষমূলক বা উত্তেজনামূলক বক্তব্য বলা যাবে না৷

 কেবল কি মেয়েদের লক্ষ্য করেই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়?

অবশ্যই না৷ আপনি যদি আন্তর্জাতিকভাবে দেখেন বা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও দেখেন, সেখানে কোনো গোষ্ঠীকে টার্গেট করে করা হয়, নারীদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বা অনলাইনে অনেক বক্তব্য রয়েছে৷ আমাদের কাছে এমন উদাহরণও আছে যে, অনেক নারী ব্লগারের লেখার প্রেক্ষিতে এমন সব বিদ্বেষমূলক জবাব এসেছে যে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে৷ আবার ধর্মীয় বিষয়েও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়া হয়ে থাকে৷ যেমন, হিন্দুদের অনেক সময় ‘মালাউন' বলা হয়৷ আবার যদি আন্তর্জাতিকভাবে দেখেন, মুসলমানদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সব মুসলমানই যেন জঙ্গি৷ টার্গেট করে এই যেসব বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, তাকেই আমরা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বলছি৷ এটা শুধু আমাদের দেশে না, সারা বিশ্বেই এই প্রবণতা আমরা দেখছি৷

ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কি একটু ব্যাখা করবেন?

 যে কোনো সমালোচনামূলক বক্তব্য কিন্তু বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না৷ সমালোচনা করতে গেলে অনেক বক্তব্যই আসবে, কিন্তু এগুলো সব বিদ্বেষমূলক বক্তব্য না৷ এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে৷ কোন প্রেক্ষাপটে এটা বলা হচ্ছে বা কোনো ঘটনা যদি হয়, তাহলে ঘটনার সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা কী, এসব বিষয় দেখতে হবে৷ তারপর বুঝতে হবে সেটা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কিনা৷

ইভ টিজিং কি এর মধ্যে পড়ে?

ইভ টিজিং এর মধ্যে পড়বে না৷ এটা একটা ক্রাইম৷ সারা বিশ্বেই এটাকে হয়রানি বলা হয়ে থাকে৷ এখন কোনো নারীকে হয়রানি করার জন্য না, নারীসমাজকে খাট করার জন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেয়া হয়, তাতে যদি দেখা যায় বিদ্বেষ রয়েছে, তাহলে সেটা হেট স্পিচ৷ কিন্তু ইভ টিজিং একজনকে টার্গেট করে করা হয়, সে কারণে এটাকে আমরা হেট স্পিচ বলতে পারব না৷

সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের হার কেমন?

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর আলোচনা হয়ে থাকে৷ এটা এমন একটা মাধ্যম, যেখানে প্রচুর আলোচনা হয়৷ এটার উপকারিতা অসীম৷ তথ্যের প্রবাহকে দ্রুত থেকে দ্রুততর করে দিয়েছে৷ আলোচনাকে পাবলিক প্লাটফর্মে আনার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে৷ এই মাধ্যম সকলেই ব্যবহার করছে৷ এটা নারীরা যেমন ব্যবহার করছেন, বিভিন্ন ধর্মের মানুষ ব্যবহার করছেন৷ এখানে নানা আলোচনা হয়৷ সেটা সমালোচনামূলক হতে পারে, বিরক্তিকর হতে পারে, এখানে বিদ্বেষের উদ্রেক করে এমন আলোচনাও হচ্ছে৷ সর্বোপরি রাষ্ট্রের এখানে বিরাট ভুমিকা রয়েছে৷

‘হেট স্পিচ বন্ধে রাষ্ট্রের বিশাল ভূমিকা রয়েছে’

আপনারা এটা প্রতিরোধে কী ধরনের কাজ করছেন?

আর্টিকেল-১৯ এটা প্রতিরোধে অনেক ধরনের কাজ করছে৷ জাতিসংঘের যে ৮টি গাইডলাইন আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা প্রচার করছি৷ এখানে আমরা আলোচনা ও প্রচারণার কাজটা করছি৷ আমরা কর্মশালা করছি৷ বিদ্বেষমূলক বক্তব্য কী সেটা আমরা জানানোর চেষ্টা করছি৷ নারীদের নিয়ে প্রযুক্তিতে যে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য আসছে, সেগুলো নিয়ে আমরা গবেষণা করেছি৷ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন কোন আইন নারীদের এক্ষেত্রে প্রোটেকশন দিতে পারে, সেগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করছি৷ এই আইনগুলো প্রচারে রাষ্ট্রের আর কী কী করা উচিত, সেগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি৷

এটা প্রতিরোধে সরকার কী ভূমিকা পালন করতে পারে? আর সরকার কি সেটা করছে?

আমাদের দেশে কিছু আইন রয়েছে যেগুলো ধর্মকে প্রটেক্ট করে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক আইনে বলা আছে, কোনো রাষ্ট্রে কোনো নির্দিষ্ট আইন ধর্মকে প্রটেক্ট করতে পারবে না৷ এখানে যেটা প্রটেক্ট করতে পারবে, সেটা হলো ধর্মের ভিত্তিতে যদি কোনো ব্যাখা দেয়া হয়, সেটা৷ ধর্ম, ইতিহাস, মূল্যবোধ এগুলো নিয়ে সব সময়ই আলোচনা হবে৷ আমি বলব, এসব আইন উত্তেজনামূলক বক্তব্যকে আরো বেশি প্রটেকশন দেয়৷ এই সব আইনের রিফর্ম প্রয়োজন রয়েছে৷ যখন হেট স্পিচ হয়ে থাকে, তখন রাষ্ট্র থেকেই শক্তভাবে একটা বক্তব্য দেয়া উচিত যে, এটা হেট স্পিস, এটাকে রাষ্ট্র কোনোভাবেই সমর্থন করে না৷ আমি মনে করি, এখানে রাষ্ট্রের একটা বিশাল ভূমিকা রয়েছে৷

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য শহরে না গ্রামে বেশি? কোনো হিসাব আছে?

এটা গ্রামে বেশি না, শহরে বেশি এর কোনো হিসাব আমাদের কাছে নেই৷ তবে গ্রামে বেশি এটা বলা যাবে না৷ আসলে সব জায়গাতেই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়া হয়ে থাকে৷

সমাজের কোন শ্রেণির মেয়েরা বেশি বিদ্বেষের শিকার হন?

বাস্তবে নারীরা ব্যাপকভাবে এর শিকার হন৷ তবে আমি বলব, ইয়াং বয়সের মেয়েরা সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষের শিকার হন৷

 রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক বক্তব্য সম্পর্কে কোনো কিছু বলবেন?

আমি বলব যে, যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের আরো বেশি সাবধান হতে হবে৷ তারা যখন বক্তব্য দেন, তাদের লক্ষ্য রাখতে হবে তাদের কোনো বক্তব্য যেন নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী বা ধর্মের মানুষকে আঘাত না করে৷ এটা কিন্তু সহিংসতার উদ্রেক ঘটাতে পারে৷

আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য