হ্যারিসনের পুনর্জন্ম
সাত বছর আগে নিজের লিঙ্গপরিচয় নিয়ে ধন্দে পড়ে যান যুক্তরাষ্ট্রের এক ২২ বছর বয়সী নারী, হ্যারিসন ম্যাসি৷ দুই লিঙ্গের টানাপোড়েন থেকে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার তাঁর এই গল্প নিয়ে এই ছবিঘর৷
গোড়ার কথা
অতীতের নারী জীবন নিয়ে ২৯ বছর বয়সি যুবক, হ্যারিসনের কোনো কুন্ঠা নেই৷ সাত বছর আগে মিসৌরির সেন্ট লুইস শহরের বাসিন্দা হ্যারিসন নারী শরীরে অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করেন৷তখনই শুরু হয় তাঁর লিঙ্গরূপান্তরের এই স্বতন্ত্র পথচলা৷ চিত্র্রগ্রাহক বন্ধু সারা সোয়াতির সাথে মিলে এই যাত্রাকে ছবিতে বন্দি করতে থাকেন বেশ কয়েক বছর ধরে৷
ব্যতিক্রমী পরিবার
বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় যে, রূপান্তরকামী মানুষেরা সচরাচর তাঁদের পরিবারের কাছে সেভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারেন না৷ প্রায়ই তাঁরা আত্মহননের পথ বেছে নেন৷ কিন্তু হ্যারিসন তাঁর কাছের মানুষদের কাছ থেকে কখনো কোনো কষ্ট পাননি৷ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পিতা, রবিন ও হ্যারিসন যেন ‘হরিহর আত্মা’৷ তাঁর মা, স্টেফানি, প্রাথমিকভাবে বিচলিত হলেও সেটার প্রভাব মা-সন্তানের সম্পর্কে কখনোই পড়তে দেননি৷
জীবনসঙ্গিনী সান্ড্রা
দু’বছর আগে হ্যারিসনের সাথে সান্ড্রা মানজোনির আলাপ৷ দুজনের সম্পর্কের গোড়ার দিকে রীতিমতো ভয়েই ছিলেন হ্যারিসন৷ ‘‘এখন আর সান্ড্রার উপস্থিতিতে শ্বাস ফেলতে ভয় করে না’’, ঠাট্টার ছলে বলেন তিনি৷ ২৯ বছরের সান্ড্রাও হ্যারিসনের মতোই পেশায় একজন বার-টেন্ডার৷
সত্যিকারের বন্ধু
হ্যারিসনের লিঙ্গরূপান্তরের সিদ্ধান্তে তাঁর বন্ধুরা মোটেও অবাক হননি৷ তাঁর হাবভাব, পছন্দ-অপছন্দ সব মিলিয়েই এমন একটা পরিবর্তনের আন্দাজ হ্যারিসনের কাছের বন্ধুরা আগেই করতে পেরেছিলেন৷ হ্যারিসনের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু জর্জ কাপুটা মনে করেন, ‘‘যদি আমি আসলেই কাউকে ভালোবাসি, তখন তাঁর লিঙ্গপরিচয় সেখানে নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে৷’’
কঠিন সময়ে বন্ধুদের ভূমিকা
হরমোন থেরাপি শুরু হবার সময়ে হ্যারিসন তাঁর বন্ধুদের থেকে মনোবল পান৷ চিত্রগ্রাহক সারার মতে, ‘‘এমন কঠিন সময় পার করতে প্রয়োজন হয় উষ্ণতা ও ভালোবাসার, যার কোনো খামতি হ্যারিসনের বন্ধুরা তাঁকে বোধ করতে দেননি৷’’
কর্মক্ষেত্রে ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার বাধা
পরিবার ও বন্ধুদের কাছে গৃহীত হলেও চাকরি পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে হ্যারিসনকে৷ শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যপরিষেবার ক্ষেত্রেও নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি৷ রূপান্তরের প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় হ্যারিসনের মতো আরো রূপান্তরকামী মানুষেরা দ্বিধায় থাকেন৷ এই প্রক্রিয়ার অন্তর্গত বিভিন্ন অস্ত্রোপচার করতে সাধারণভাবে খরচ হয় কয়েক হাজার মার্কিন ডলার, যা অনেকের জন্যে কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে ওঠে৷
সমস্যার সমাধান
ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে বন্ধুদের কথায় হ্যারিসন ‘গোফান্ডমি’ নামের ওয়েবসাইটে একটি গণতহবিল তৈরি করেন৷ওয়েবসাইটের পাতায় বিস্তারিত লেখেন তাঁর লড়াইয়ের কথা৷ ফলস্বরূপ, ৮০০০ ডলার সংগ্রহের লক্ষ্য থাকলেও ইতিমধ্যে ৮৩৩০ ডলার পেয়ে গেছেন হ্যারিসন৷
হ্যারিসনের স্বপ্ন
স্কুলে পড়া ছোট্ট, মিষ্টি মেয়ে থেকে চাপদাড়ির হ্যারিসন হয়ে উঠতে তাঁর সময় লেগেছে সাত বছর৷অবশেষে নির্দ্বিধায় জনসমক্ষে সাঁতার কাটতে পারার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাঁর৷অদম্য মনের জোর, আশেপাশের মানুষের সাহায্য, অকৃত্রিম ভালোবাসা ও কিছুটা ভাগ্যের জোরেই হ্যারিসন আজ নির্ভয়ে স্বাধীন, স্বতস্ত্র জীবন যাপন করে চলেছেন৷