1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সকলের কাছে পৌঁছাবে বিদ্যুৎ’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৭ জুলাই ২০১৭

বিদ্যুৎ পরিস্থিতি শহরে মোটের ওপর ভালো হলেও, গ্রামের চিত্র সন্তোষজনক নয়৷ তবে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মাদ হোসাইন জানান, ‘‘২০২১ সালের আগেই শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে৷’’

https://p.dw.com/p/2gb97
Bangladesch Solarenergie
ছবি: MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন উন্নত৷ গত ১০ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গতিধারা কেমন? বর্তমানে উৎপাদন ক্ষমতাই বা কত?

মোহাম্মাদ হোসাইন: বিষয়টাকে যদি আমরা এভাবে দেখি যে, স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এবং এরপর থেকে এখন পর্যন্ত – তাহলে আমরা দেখবো, ২০০৮ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার মেগাওয়াটের নীচে৷ ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি৷ গত ৪০ বছরে যা অর্জন করেছি, গত আট বছরে তার তিনগুণ হয়েছে৷ শতকরা হিসেব বলছে, মোট উৎপাদনের ৬১ ভাগ হয়েছে গত এই আট বছরে৷ এছাড়া ৩৯ ভাগ উৎপাদন হয়েছে গত ৪০ বছরে৷

কোন নীতি গ্রহণের ফলে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি এতটা পালটে গেল? স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি, না দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফল?

নীতির আগে আমি বলবো নেতৃত্বের কথা৷ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে৷ নীতি আগেও ছিল, এখনও আছে৷ কিন্তু নেতৃত্বের দূরদর্শিতা না থাকলে নীতি কাজে লাগে না৷ তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি – এই চার ভাগে ভাগ করে আমরা ২০০৯ সালে কাজ শুরু করি৷ সেসময় মাত্র চার মাসের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র বানাতে সক্ষম হয়েছি৷ এটা করতে গিয়ে ‘কুইকরেন্টাল' করতে হয়েছে৷ সমালোচকরা অবশ্য কুইকরেন্টালকে একটা গালি বানিয়ে ফেলেছিল৷ অথচ এই কুইকরেন্টালের কারণেই কিন্তু আজ বিদ্যুৎ খাত শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে৷ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, কুইকরেন্টালের ফলে বছরে এক লাখ কোটি টাকার অর্থনৈতিক লেনদেন হয়েছে৷ 

Interview Power Cell DG Mohammad Hossaion - MP3-Stereo

শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতিকে মোটামুটি ভালো বলা হচ্ছে৷ নাগরিকরাও মোটামুটি সন্তুষ্ট৷ কিন্তু গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও প্রাপ্তি নিয়ে হতাশা রয়েছে৷ এটা কেন? আর কীভাবে এটা দূর করা যায়?

এটা আমি অস্বীকার করব না৷ এই সীমাবদ্ধতাটা রয়েছে, এটা আমি স্বীকার করছি৷ এর দু'টো কারণ৷ একটা হচ্ছে আমাদের গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদুতের মাধ্যমে সংযোগ দেয়া হচ্ছে৷ যেটা আমি আগে বলেছি, ২০০৯ সালে প্রকৃত উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট, কম-বেশি৷ এখন আমাদের প্রকৃত উৎপাদন কম-বেশি ৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ৷ অর্থাৎ তিনগুণেরও বেশি৷ তবে আমাদের যে অবকাঠামো, সেটা অনেকক্ষেত্রেই আগের অবস্থায় রয়েছে৷

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার সাফল্য দেখিয়েছে৷ কিন্তু এর সমান্তরালভাবে সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি৷ কেন?

হয়নি কথাটা ঠিক নয়৷ সেসময় গ্রাহক ছিল ১ কোটি ৮ লাখ৷ আর এখন গ্রাহক প্রায় ৩ কোটি৷ এই যে দুই কোটি গ্রাহক বেড়েছে, তাদের যদি আমরা সংযোগ না দিতাম তাহলে কোনো সমস্যা হতো না৷ আমরা কয়েক হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন করেছি৷ আগে আমরা দেখেছি লাইন ছিল, কিন্তু সংযোগ ছিল না৷ তখন খাম্বা তত্ত্ব ছিল৷ তাই আমরা জেনারেশনের দিকে নজর দিয়েছি৷ বিদ্যুৎ ব্যবস্থাটায় আগে জেনারেশন, তারপর সঞ্চালন এবং এরপর বিতরণ৷ আমরা জেনারেশনে একটা স্বস্তির অবস্থা এনেছি৷ আমরা মাসে ৫ লাখ করে বিদ্যুতের সংযোগ দিচ্ছি৷ আগামী দু'এক বছরে এই সমস্যা থাকবে না৷

এতদিন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল গ্যাস নির্ভর৷ ভবিষ্যতের জ্বালানি মিশ্রণ কেমন হবে?

২০০৯ সালে আমাদের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৯৬ ভাগই আসতো গ্যাস থেকে৷ এক সময় বলা হতো, বাংলাদেশ গ্যাসের উপর ভাসছে৷ তখন কিন্তু অনেক কিছুই হয়েছে গ্যাসের ওপর নির্ভর করে৷ এখন দেখা যাচ্ছে, গ্যাস দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে৷ তাই এখন আমরা গ্যাস-নির্ভরতা কমিয়ে জ্বালানি মিশ্রণ কয়লার দিকে এগোচ্ছি৷

সৌরবিদ্যুৎসহ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা আছে কি?

আমাদের জ্বালানি নীতিমালার আওতায়, ১০ ভাগ আসবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে৷ এতকিছুর পরও বাংলাদেশ কিন্তু বিশ্বের অন্যতম বড় সৌরবিদ্যুৎ সিস্টেম৷ 

আমাদের যে বিদ্যুতের বড় প্রকল্পগুলোর কাজ শুরু হয়েছে, সেটার অগ্রগতি কি সন্তোষজনক?

আসলে সন্তুষ্টির বিষয়টা তো আপেক্ষিক৷ আমাদের যখন ৫ টাকা থাকে তখন ১০ টাকা পেলে সন্তুষ্ট হই৷ এভাবে সন্তুষ্টির তো শেষ নাই৷ তবে আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজারে নিতে পেরেছি৷ এটা একটা ‘অ্যাচিভমেন্ট' তো বটেই৷ হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে কিছু কেন্দ্রের কাজ একটু পিছিয়ে গেছে৷ এটা হলে আরো সন্তুষ্ট হতে পারতাম৷ তবে আমাদের দেশে কোনো পরিকল্পনা নিতে হাতে একটু সময় তো রাখতেই হয়৷

বাংলাদেশে বর্তমানে জনপ্রতি বিদ্যুৎ ব্যবহারের হার কত? শিল্প ও বাণিজ্যের চেয়ে আবাসিক খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি কেন? উৎপাদনশীলতা ও উন্নয়ন লক্ষ্য বিবেচনা করলে আবাসিকের চেয়ে শিল্প-বাণিজ্যে বিদ্যুতের বেশি ব্যবহার হওয়ার কথা কি?

আমাদের পার ক্যাপিটা উৎপাদন প্রতি ঘণ্টায় ৪১৫ কিলোওয়াট৷ এটা অবশ্য উন্নত বিশ্বের চেয়ে অনেক কম৷ উন্নত বিশ্বে পার ক্যাপিটা বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ হাজার কিলোওয়াট পার আওয়ার বা ৭ হাজার কিলোওয়াট পার আওয়ার৷ ওদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করাটাও ঠিক হবে না৷ কারণ পার ক্যাপিটা নির্ধারণ হয় মোট উৎপাদনকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে৷ এদিকে আমাদের যে পরিমাণ ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল' হওয়ার কথা ইতিমধ্যে, সেই পথটাও অত্যন্ত ধীর গতিতে এগোচ্ছে৷ এ কারণে শিল্প ও বাণিজ্যের চেয়ে আবাসিক খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি৷ সরকার ১০০টির মতো ‘ইকোনোমিক জোন' করছে৷ এটা হলে পরিস্থিতির উন্নতি অবশ্যই হবে৷ 

২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ নাগরিককে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আনার অঙ্গীকার করেছে সরকার৷ এটি এখন পর্যন্ত কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? ২০২১ সাল নাগাদ আমরা এটা বাস্তবায়ন করতে আদৌ সক্ষম হবো কি?

এখন পর্যন্ত আমরা ৮০ ভাগ নাগরিককে বিদ্যুৎ সেবার আওতায় আনতে পেরেছি৷ এর মধ্যে ৭০ ভাগ গ্রিডের মাধ্যমে, ১০ ভাগ অগ্রিডের মাধ্যমে৷ তাই আমি বলবো, আমাদের ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা নাও লাগতে পারে৷ যেভাবে কানেকশন লাগছে, তাতে আগেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারি আমরা৷ তাছাড়া ইতিমধ্যে আমরা বেশ কিছু উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুৎ সেবার আওতায় এনেছি৷ স্বপ্ন, এভাবেই পুরো দেশকে নিয়ে আসব৷