1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিউত্তর অ্যামেরিকা

৯/১১: দুনিয়া বদলে দেওয়া দিনটির দুই দশক পূর্তি

১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

ঠিক বিশ বছর আগে, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করে একদল সন্ত্রাসবাদী৷ জবাবে, ‘ওয়ার অন টেরর' শুরু করে অ্যামেরিকা৷ সেই দিন থেকে বদলে গেছে বিশ্ব রাজনীতি৷

https://p.dw.com/p/40C3C
USA | Terroranschlag am 11. September 2001
ছবি: picture alliance / Newscom

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলার পর কেটে গেছে বিশ বছর৷ যেখানে এক সময় জ্বলজ্বল করতো ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, তার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে নতুন ভবন৷ আজ সে্ই স্থানের নাম রাখা হয়েছে ‘গ্রাউন্ড জিরো'৷ সেখানে রয়েছে প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যুর স্মৃতি বহনকারী স্মারক৷ ঘুরে দাঁড়িয়েছে নিউ ইয়র্কও৷ ২০০১ সালের তুলনায় নিউ ইয়র্কের বাসিন্দার সংখ্যা বেড়েছে অনেকটাই৷ অতিমারির ধাক্কার আগে পর্যন্ত, এই শহরের অর্থনীতি ছিল তুলনাহীন৷

কিন্তু অ্যামেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানের জন্য কিছুই আগের মতো নেই৷ তালেবান আবার ক্ষমতায় ফিরে এলেও, কাবুল বিমানবন্দরের সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস-এর সম্পৃক্ত থাকা দেখিয়ে দিচ্ছে গত দুই দশকে কতটা বদলেছে বাস্তবতা৷ দুই দশক আগে, যে আইএস/এর অস্তিত্বই ছিল না, সেই সংগঠনের উত্থানকেও অনেকে মনে করছেন ‘ওয়ার অন টেরর'-এর সাথে সম্পর্কিত৷

ইতিহাসবিদ বের্নড গ্রাইনার জানান যে আইএস-এর শুরু দিকের সদস্যরা অনেকেই সাদ্দাম হুসেনের সেনাবাহিনীতে ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি যে আইএস-এর উত্থান ২০০৩ সালে সাদ্দাম হুসেনের সরকার পতনের সাথে সরাসরি জড়িত৷ যেভাবে মার্কিন কর্তৃপক্ষ সাদ্দাম হুসেনের সরকারের পতন ঘটায়, তাতে হঠাৎ করে সেখানে একটা গোটা প্রজন্মের সৃষ্টি হয়, যাদের হাতে কোনো কাজ ছিল না৷ এই ধরনের পরিস্থিতি থেকেই মৌলবাদী চিন্তার শুরু হয়৷''

শোক থেকে রাগ

২০০১ সালে নিছক বক্স-কাটারের সাহায্যে ওসামা বিন লাদেনের আদেশে সন্ত্রাসবাদীরাএকটি গোটা বিমানকে বোমায় পরিণত করে৷ তারা হামলা চালায় সেই সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকের ওপর৷

প্রাথমিকভাবে, হামলার ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি শোকগ্রস্ত করে তোলে গোটা অ্যামেরিকাকে৷ এই সময় তাদের পাশে থেকেছিল গোটা বিশ্ব৷ এরপর, উত্থাপিত হয় রাগ ও ক্ষোভ৷ প্রথমবারের মতো ন্যাটোর ‘মিউচুয়াল ডিফেন্স ক্লজ' চালু হয় ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থনে আফগানিস্তানে তালেবানকে নিরস্ত করতে সক্ষম হয় ন্যাটো বাহিনি৷

কিন্তু ২০০৩ সালে ইরাকে সাদ্দাম হুসেনের সরকারের বিরুদ্ধে জর্জ বুশের পদক্ষেপ আস্তে আস্তে হারাতে থাকে সমর্থন৷

অন্যদিকে, ৯/১১ পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে ‘বিশ্বের অপরিহার্য রাষ্ট্র' হিসাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করতে থাকে, বলে মত মার্কিন ইতিহাসবিদ স্টিফেন ভের্টহাইমের৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘এই ‘অপরিহার্য' চরিত্রের সমর্থনে একটা গোটা দেশ ও একটা গোটা অঞ্চলের কাঠামো বদলে দিতে চায় অ্যামেরিকা৷''

কিছুটা দ্বিমত পোষণ করে গ্রাইনার বলেন, ‘‘আসলে এটা ক্ষমতাচ্যুত হবার ও এই ধরনের অসম হামলার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয় পড়ার প্রতিক্রিয়া, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখিয়েছে৷'' ইরাক ও আফগানিস্তানের দুটি যুদ্ধকেই প্রবলভাবে সাংকেতিক ও অর্থবহ বলে মনে করেন গ্রাইনার৷ তিনি বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে অ্যামেরিকা গোটা বিশ্বকে, বিশেষ করে আরববিশ্বকে, বার্তা দিতে চেয়েছে যে, যে কোনো সময়ে অ্যামেরিকার সাথে লড়তে গেলে ছেড়ে কথা বলবে না তারা৷''

পাশাপাশি, যেহেতু ‘মুসলিম বিশ্বে থাকা অ্যামেরিকার কড়া সমালোচকরা অ্যামেরিকার কালিমালিপ্ত মুখ দেখতে চেয়েছিল, সে কারণেই শুধু আফগানিস্তানে থেমে যাওয়া যথেষ্ট ছিল না'', মনে করেন জর্জ বুশের বক্তৃতা লেখক মাইকেল গেরসন৷

শেষ পর্যন্ত যা

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কস্ট অফ ওয়ার' প্রকল্পের গবেষণা বলছে, ওয়ার অন টেরর কেড়েছে প্রায় নয় লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণ, যাদের মধ্যে চার লাখ মানুষই ছিলেন সাধারণ নাগরিক৷

শুধু তাই নয়, ২০১০ সালে যখন উইকিলিকস উদঘাটন করে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনির আসল ভূমিকা, তখন সেই তথ্য চমকে দেয় দুনিয়াকে৷ কস্ট অফ ওয়ার প্রকল্পের তথ্য বলছে, ‘ওয়ার অন টেরর' খাতে খরচ হয়েছে আট ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিকল্পিত অবকাঠামো বাজেটের কয়েকগুণের সমান৷ ফলে, বের্নড গ্রাইনারের মত, ‘‘ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন খরচের পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত করছে দেশটির নিজস্ব ভাবমূর্তিকে৷''

ভেরটহাইমও একসুরে বলেন, ‘‘১১ সেপ্টেম্বরের হামলার উত্তরে সহিংস, বিধ্বংসী পন্থা না নিয়ে নিজের বিশাল পরিমাণ অর্থ, সামর্থ্য ও লোকবলকে আরো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় করতে পারতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷''

মাটিয়াস ফন হাইন/এসএস