1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বইমেলা: কাছের দেখা, দূরের ভাবনা

রাজীব নূর
২৯ জানুয়ারি ২০১৮

অমর একুশে বইমেলার তিনটি পর্যায় খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় আমার৷ নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মেলা যখন মেলা হয়ে উঠছে, তখনই এই দেখার শুরু৷ এর আগে আশির দশকের মাঝামাঝিও মেলায় আসা হয়৷ তারপর আবার ২০১৪ সাল থেকে৷

https://p.dw.com/p/2rcXT
ছবি: DW/M. Mamun

আশির দশকের ওই সময়টায় আমি কলেজের ছাত্র এবং থাকি ঢাকার অদূরের একটি জেলা শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়৷ সকালের ট্রেনে ঢাকায় এসে মেলা ঘুরে রাতেই ফিরে যেতে পারতাম আমরা৷ নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে আসতাম আরো দূরের শহর চট্টগ্রাম থেকে৷ তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি এবং দলেবলে বছরে অন্তত একবার ঢাকায় আসি সেটা বইমেলার সময়৷ অপার কৌতূহল নিয়ে আসতাম বইমেলায়৷ আসা-যাওয়া এবং থাকা-খাওয়ার খরচেই আমার পকেটের টাকা ফুরিয়ে যেত, বই কেনা হতো না খুব একটা৷ তবু আমরা আসতাম এবং যতদিন বেশি সম্ভব থাকতাম ঢাকায়৷ কেননা, ততদিনে একুশের বইমেলা প্রকাশকদের কাছে তো বটেই, যাঁদের লেখালেখির অভ্যাস আছে, যাঁরা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন এবং যাঁরা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাঁদের সবার কাছে সারা বছরের সবচেয়ে বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে৷ নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে মেলাটি প্রকৃতই মেলার রূপ পেয়েছিল৷ তবে এর একটা মন্দ দিক ছিল, বইয়ের চেয়ে বারোয়ারি পণ্যই মেলায় গুরুত্ব পেতে শুরু করেছিল৷

নব্বইয়ের দশকের শেষে বারোয়ারি মেলাটিকে যখন শুধুই বইয়ের মেলায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখন ‘ভোরের কাগজ' পত্রিকার একজন রিপোর্টার হিসেবে ‘মেলার প্রতিবেদন' লিখে বইপ্রেমীদের জানাচ্ছি আমি৷ পরে টানা সাত বছরের মতো একই কাজ করেছি ‘প্রথম আলো'-য়৷ তবে ২০১৪ সালে মেলাটিকে যখন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের বাইরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিয়ে বিশাল বিস্তৃতি দেওয়া হয়েছে, তখন থেকে মেলার সঙ্গে আমার দেখাদেখিতে একটু ভাটা পড়েছে৷ মাঝে অবশ্য নিজেই একটি প্রকাশনা সংস্থা গড়ার চেষ্টা করে বিফল হয়েছি৷ বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্প বহুদিন ধরে বইমেলাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে, ফলে মাঝের ওই সময়টাতেই আমি প্রবলভাবেই বইমেলায় উপস্থিত ছিলাম৷ নানান ভূমিকায় বইমেলাকে দেখার কারণে মেলা নিয়ে আমার অবস্থা হয়েছে সবজান্তা শমসেরের মতো৷ বোধ হয় এই কারণেই ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে আবেদন হারিয়েছে বইমেলা৷ অথচ একদা ফেব্রুয়ারি মাসে এমন দিন ছিল দুর্লভ, যেদিন একেবারে শেষবেলায় হলেও মেলার আড্ডায় হাজির হইনি৷ ‘ভোরের কাগজ' থেকে ‘প্রথম আলো'-য় বইমেলা নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন লিখতে হয়েছে আমাকে৷ এই কাজের জন্য প্রায় প্রত্যেকদিনই মেলা শুরু হতে না হতেই মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছি আমি৷ খবর সংগ্রহ করে অফিসে ফিরেছি, প্রতিবেদন জমা দিয়ে একেবারে শেষবেলায় আবার মেলায় ফিরে গেছি৷ মেলা ভেঙে যাওয়ার পর বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিয়েছি, মেলার বাইরে, বাংলা একাডেমির সামনের রাস্তায়, টিএসসিতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে৷

এখন আর মেলার আড্ডায় ওই টান পাই না৷ আড্ডা কি তাহলে ‘কম বয়সের কথকতা'? নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে মেলা করতে আসার কথা আগেই বলেছি৷ একবার, সেটা সম্ভবত ১৯৯৪ সালের কথা, আমরা তিন বন্ধু শাহীনুর রহমান, রোকন রহমান ও আমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে প্রায় পুরো ফেব্রুয়ারিটাই ঢাকায় কাটিয়ে দিয়েছিলাম৷ তখন মেলা ছাড়া ঢাকার অন্য কোথাও যাইনি বললেই চলে৷ মেলার তোরণ উন্মুক্ত হতে না হতেই আমরা উপস্থিত হয়ে যেতাম মেলার মাঠে৷ প্রায় একই সময়ে আসতেন হুমায়ুন আজাদ৷ মাঝেমধ্যে আমাদের তিনজনের সঙ্গে যোগ দিত, ঢাকার বন্ধু শিশুসাহিত্যিক রুদ্রাক্ষ রহমান৷ বন্ধুমহলে ফজলু নামে পরিচিত রুদ্রাক্ষ রহমানের সঙ্গে হুমায়ুন আজাদের ছিল অম্লমধুর সম্পর্ক৷ আমরা গিয়ে বসতাম বর্ধমান হাউস সংলগ্ন আম গাছটির নীচে এবং তার বিপরীতেই ছিল আগামী প্রকাশনীর স্টল৷

ফজলু এলে হুমায়ুন আজাদ স্যারের সঙ্গে আমাদের খুনসুটি ভালো জমত৷ পাঠকের ভিড় জমে যাওয়ার আগে আজাদ স্যারের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারার সুযোগ ব্যক্তিগতভাবে আমাকে সমৃদ্ধ করেছে, তবে ওই আড্ডা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়৷ সেবারই মেলায় বরিশালের হেনরী স্বপনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো আমাদের৷ আমরা একে একে সবাই ঢাকায় চলে এলেও হেনরী রয়ে গেছে তার প্রিয় শহর বরিশালে৷ চিঠিপত্রে আগে থাকতে যোগাযোগ থাকলেও সেবারই সাক্ষাৎ-পরিচয় হলো ময়মনসিংহের মুজিব মেহদী, আশরাফ রোকন ও নেত্রকোনার মাহবুব কবিরের সঙ্গে৷ কবির হুমায়ুন, মুজিব ইরম, শাহেদ কায়েস, নজরুল কবীর প্রমুখের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল আগে থাকতেই, সেবার বন্ধুত্ব নিবিড় হলো৷ নজরুলের মাধ্যমে পরিচয় হলো আহমাদ মোস্তফা কামালের সঙ্গে৷ আমি যে সময়টার কথা বলছি, তখন বইমেলা ছিল দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা তরুণ লেখকদের অপরিচয়ের ব্যবধান ঘুচিয়ে আনার একটা ক্ষেত্রও৷

বইমেলার সঙ্গে আমার সম্পর্ক আরও নিবিড় হলো তারও কয়েক বছর পর ১৯৯৮ সালে৷ সেবার ‘ভোরের কাগজ' পত্রিকায় চাকরি পাওয়ার পরীক্ষা দিচ্ছিলাম বইমেলা নিয়ে প্রতিদিনের প্রতিবেদন লিখে৷ তখন পর্যন্ত আমাদের জানা ছিল মুক্তধারার চিত্তরঞ্জন সাহা বইমেলার সূত্রপাত করেছিলেন ১৯৭২ সালে৷ ওই বছর একুশের অনুষ্ঠানের দিন বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে ৩২টি বই সাজিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি৷ ওই ৩২টি বই ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ, যা পরে ‘মুক্তধারা' নামে পরিচিতি পায়, সেই প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত৷ বইগুলোর লেখকরা সবাই ছিলেন যুদ্ধের সময় ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত বাংলাদেশি৷ অবশ্য বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে বইমেলা সংক্রান্ত একটি লেখায় দাবি করেন, বাংলাদেশে প্রথম বইমেলা হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে, ১৯৬৫ সালে, সরদার জয়েনউদদীনের উদ্যোগে৷ আজকের দিনের অমর একুশে বইমেলা সম্পর্কে শামসুজ্জামান খানের লেখায় মনে হয় চিত্তরঞ্জন সাহার চেয়েও বড় ভূমিকা ছিল রুহুল আমিন নিজামী নামে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের প্রকাশকের৷

শামসুজ্জামান খান লিখেছেন, ‘‘১৯৭২ সালে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে কোনো বইমেলা হয়নি৷ তবে বাংলা একাডেমির দেয়ালের বাইরে স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্সের রুহুল আমিন নিজামী তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রগতি প্রকাশনীর কিছু বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেন৷ তাঁর দেখাদেখি মুক্তধারা প্রকাশনীর চিত্তরঞ্জন সাহা এবং বর্ণমিছিলের তাজুল ইসলামও ওভাবেই তাঁদের বই নিয়ে বসে যান৷ ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে একটি বিশাল জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়৷ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মেলার উদ্বোধন করেন৷ সে উপলক্ষ্যে নিজামী, চিত্তবাবু এবং বর্ণমিছিলসহ সাত-আটজন প্রকাশক একাডেমির ভেতরে পূর্ব দিকের দেয়ালঘেঁষে বই সাজিয়ে বসে যান৷ সে বছরই প্রথম বাংলা একাডেমির বইয়েরও বিক্রয়কেন্দ্রের বাইরে একটি স্টলে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়৷ এভাবেই বিচ্ছিন্ন বই বিক্রির উদ্যোগের ফলে ধীরে ধীরে বাংলা একাডেমিতে একটি বইমেলা আয়োজনের জন্য গ্রন্থমনস্ক মানুষের চাপ বাড়তে থাকে৷ ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা সাহেব যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, তখন তিনি বাংলা একাডেমীতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা'-র আয়োজন সম্পন্ন করেন৷ কিন্তু স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষা ভবনের সামনে ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দিলে দুজন ছাত্র নিহত হয়৷ ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর সেই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি৷ ১৯৮৪ সালে সাড়ম্বরে বর্তমানের অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়৷''

১৯৮৪ থেকে ১৯৯৮ বইমেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ কালপর্ব৷ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে বইমেলা ততদিনে মাসব্যাপী একটি উৎসবে রূপ পেয়েছে৷ তবে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝিতে এসে মেলার বারোয়ারি রূপটি এতটাই প্রকট হয়েছিল যে স্টলগুলো থেকে উচ্চস্বরে বাজানো কবিতা ও গানের ক্যাসেটে কান পাতা দায় ছিল৷ ভেঁপু-বাঁশির সুর শোনা যেত টিএসসি কিংবা দোয়েল চত্বরে পৌঁছার আগেই৷ পুরো শাহবাগ থেকেই শুরু হয়ে যেত শিল-পাটা থেকে শুরু করে নিত্যপণ্যের পসরা৷ সম্ভবত ১৯৯৭ সালে বইমেলাকে শুধুই বইয়ের মেলায় রূপান্তরের একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল৷ তবে বাংলা একাডেমির সেই সময়কার মহাপরিচালক সৈয়দ আনোয়ার হোসেনকে উদ্যোগটা সফল করতে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যায়৷ আমিও ঠিক ওই বছর ‘বইমেলা প্রতিবেদন' লিখে ভোরের কাগজে চাকরি পাওয়ার পরীক্ষায় অবতীর্ণ হই৷ আমার মনে আছে বাংলা একাডেমির ছোট্ট চত্বরেই সেবার বইমেলাটি বেশ বড় লাগছিল৷ মেলা শুরুর দু-চার দিনের মধ্যেই আমি একটা প্রতিবেদন লিখেছিলাম, যার শিরোনাম ছিল ‘কোকিলেরও ডাক শোনা যায়'৷ 

মেলার মাঠ থেকে কোকিলের ডাক শুনতে পাওয়ার তাৎপর্য নতুনদের বলে বোঝানো যাবে না, অন্তত যারা ২০১৪ সাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল পরিসরে মেলা দেখে অভ্যস্ত হয়েছেন৷ বাংলা একাডেমিতে মেলার অনুষ্ঠানাদি চললেও ওই বছর থেকে মূল ধারার প্রকাশকদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে উদ্যানে এবং প্রতিবছরই উদ্যান অংশে বাড়ানো হচ্ছে মেলার পরিসর৷ এবারও গতবারের তুলনায় প্যাভিলিয়ন বাড়ছে ১০টি৷ মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে মেলা পরিচালনা কমিটির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গতবার প্যাভিলিয়ন পাওয়া দু'টি প্রকাশনা সংস্থা এবার প্যাভিলিয়ন না নেওয়ায় নতুন ১২টি প্রকাশনা সংস্থা প্যাভিলিয়ন পাচ্ছে৷ প্যাভিলিয়ন পাওয়া প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যা হচ্ছে ২৩টি৷ সব মিলিয়ে এবার ৩৪০টি প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো মেলায় অংশ নিতে যাচ্ছে ২১টি প্রকাশনা সংস্থা৷ এবারের মেলায় ৬৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, যা গতবারের চেয়ে ১৪টি ইউনিট বেশি৷

একুশের বইমেলা বড় হয়েছে, তবে বাংলাদেশের বইয়ের বাজার ছোট হয়েছে৷ মেলা নিয়ে বিগত কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা থেকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, প্রকৃত পাঠক ও বইয়ের ক্রেতার সংখ্যা আনুপাতিক হারে বাড়েনি৷ মানুষ বেড়েছে, বেড়েছে প্রকাশনা সংস্থার সংখ্যাও৷ একুশের বইমেলা আমাদের প্রকাশনাকে উন্নত করেছে এমন দাবি করবার অবকাশ নেই৷ বইমেলার উদ্দেশ্য বইয়ের প্রচার, বইকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা, বইয়ের বিক্রি বাড়ানো৷ কিন্তু আমাদের একুশের বইমেলা মূলত খুচরা বই বিক্রির মেলায় পরিণত হয়েছে এবং ফলে মাসব্যাপী এর বিস্তৃতি৷ উন্নত বিশ্বের বইমেলা প্রধানত প্রচার, বিপণন ও বাজারজাত করার উদ্দেশে আয়োজন করা হয়৷ যতদূর জানি ওই সব মেলায় খুচরা বিক্রি হয় খুব সামান্য৷

রাজীব নূর, সাংবাদিক, দৈনিক সমকাল
রাজীব নূর, সাংবাদিক, দৈনিক সমকালছবি: privat

একুশের বইমেলাকে কেন্দ্র করে আমাদের প্রকাশনা শিল্প হয়ে পড়েছে ফেব্রুয়ারিকেন্দ্রিক৷ বাংলাদেশে প্রকাশিত অধিকাংশ বইই এখন আর মফস্বল শহরে পাওয়া যায় না৷ এমনকি ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বইয়ের দোকানেও পাঠ্যপুস্তকের বাইরে কোনো বই পাওয়া পাওয়া যায় না বললেই চলে৷ কোনো একটি বইয়ের খবর পেয়ে যদি আমার সেই বইটি কিনতে ইচ্ছা করে তাহলে বইটির প্রকাশকের বাংলাবাজারের দোকানে যেতে হবে বা অপেক্ষা করতে হবে আগামী বইমেলা পর্যন্ত৷ অবশ্য আজকাল অনলাইনে বই কেনার মতো কিছু প্রতিষ্ঠান সেই কষ্ট লাঘব করেছে এবং একই সঙ্গে শুধুমাত্র বই কিনতে যারা মেলায় যেতেন, তাদের মেলায় যাওয়াটাও বন্ধ করে দিতে চলেছে৷

প্রকাশনাকে শিল্প বলা হলেও এই শিল্পে বিনিয়োগ করে জীবিকা নির্বাহ করাই দূরুহ৷ আমাদের প্রকাশকদের একটা বড় অংশ মূলত পাঠ্যপুস্তক ও নোটবুকের প্রকাশক৷ সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর জন্য তাদের অনেকেই লোকসান দিয়ে হলেও কিছু সৃজনশীল বই প্রকাশ করেন৷ বনেদী কিছু প্রকাশনা সংস্থাও সক্রিয় রয়েছে, প্রকাশনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকার মায়া-মোহ কাটাতে না পেরে৷ এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বইমেলাকেন্দ্রিক প্রকাশনাকে সারা বছরের প্রকাশনায় রূপান্তর করতে হবে৷ দূরের এই ভাবনাটা না ভাবলে বইমেলা বইকে কেন্দ্র করে নিছক একটা মেলার অনুষঙ্গে পরিণত হবে৷

ব্লগটি কেমন লাগলো লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷