1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আগুনের ঝুঁকিতে বেঁচে থাকা এবং আমাদের দায়

চিররঞ্জন সরকার
২৩ এপ্রিল ২০১৯

অগ্নি, আগুন, বহ্নি, অনল, পাবক, দাহন৷ একই জিনিসের ভিন্ন নাম৷ মানুষের জীবনে আগুন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কিন্তু আগুনের ব্যাপারে আমাদের আরো সাবধান হওয়া উচিত, কারণ, আগুন কেবল জ্বালাতেই জানে৷

https://p.dw.com/p/3H9ZH
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com

আদি মানবেরা আগুন আবিষ্কার করেছিলো লক্ষ লক্ষ বছর আগে৷ ক্রমান্বয়ে মানুষ আগুন নিয়ন্ত্রণ করে খাবার ঝলসে খেতে, তাপ ও আলো পেতে এবং শিকারিদের দূরে রাখতে শিখলো৷ আগুন মানব জীবনে এত বড় আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে, কিছু মানুষ আগুনের পূজা পর্যন্ত করতো৷

বৈদিক যুগের তিন প্রধান দেবতার একজন হলেন অগ্নি; তিনি মর্ত্যের দেবতা, অন্য দু'জন হলেন স্বর্গের ইন্দ্র এবং অন্তরীক্ষের বরুণ৷ অগ্নিকে বলা হয় দেবতাদের মুখ বা দূত৷ কারণ, যজ্ঞে যে আহুতি দেওয়া হয় তা অগ্নির মাধ্যমেই অন্য দেবতারা পেয়ে থাকেন৷ বৈদিক ঋষিরা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, আগুন, অর্থাৎ তাপ হচ্ছে জীবনের উৎস এবং জীবের বেঁচে থাকার অন্যতম প্রধান উপাদান এবং সে কারণেই অগ্নিকে দেবতা হিসেবে পূজার প্রচলন শুরু হয়৷ অগ্নি একাধারে যজ্ঞ, গৃহ ও অন্নের অধিপতি৷

উপনিষদের ব্রহ্মা-র মতো অগ্নি সর্বভূতে বিরাজমান৷ আধুনিক যুগেও খাবার তৈরি, তাপ ও আলো দেওয়ার পাশাপাশি আগুন কখনো মোমবাতি বা মশালে প্রতিবাদের প্রতীক, আবার কখনো ফানুস বা আতশবাজিতে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ৷ নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা, বিবর্তনের মাধ্যমে আমাদের আজকের মানুষে পরিণত হওয়ায় আগুনের ভূমিকা অপরিসীম৷

এক সময় আমাদের এই উপমহাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সতীদাহ বা সহমরণ প্রথা চালু ছিল৷ স্বামী মরে গেলে স্ত্রীকেও চিতায় উঠতে হতো৷  রামমোহন-বিদ্যাসাগর প্রমুখ মহামহিম ব্যক্তির কল্যাণে সমাজ থেকে সতীদাহ বা সহমরণ প্রথা উঠে গেছে৷

তবে যুগের পরিবর্তনে ‘পতিহারা সতী নারী' নয়,  উচ্ছেদের নামে আগুন দেওয়া হয় গরিবের আবাস বস্তিতে৷  সতীদাহ হতো প্রকাশ্যে৷ আর বস্তি-দাহ করা হয় গোপনে৷ তবে শুধু বস্তিতেই আগুন দেওয়া হয় না, বিভিন্ন জনের বাড়িঘরে, এমনকি অফিসেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷ আগুন এখন স্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার৷ ক্ষোভ প্রকাশ, ষড়যন্ত্র নথিপত্র গায়েব করার জন্য আগুন ধরিয়ে দেওয়া একটি লাগসই প্রযুক্তি হয়ে উঠেছে৷

তবে আগুন বড়ই মারাত্মক জিনিস৷ আগুন জ্বলে, জ্বালায়৷ আগুন লাগে, আবার লাগানোও হয়৷ কোনটা যে লাগে আর কোনটা যে লাগানো হয় এই রহস্যঘেরা দেশে এটা বেশিরভাগ সময়ই জানা যায় না৷ দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানা রকম আগুনের দেখা পাই৷ চুলার আগুন,  চিতার আগুন, বনের আগুন, মনের আগুন, ক্ষোভের আগুন, লোভের আগুন, দেহের আগুন, চোখের আগুন৷ জ্ঞাত আগুন, অজ্ঞাত আগুন৷ বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আগুন৷ এই ‘শর্ট-সার্কিটের আগুন' খুবই অভিনব ও রহস্যময়৷ আগুন লাগার পর যদি তার উৎস সম্পর্কে কোনো রকম কূল-কিনারা করা না যায় তখনই বলা হয়, এটা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আগুন!

আমাদের দেশে অনেক সময় শ্বশুরবাড়িতে মেয়েদের মেরে-পিটিয়ে হত্যা করে যেমন ‘আত্মহত্যা' বলে চালানো হয়, আগুন লাগানোর বেশিরভাগ ঘটনার ক্ষেত্রে ‘শর্টসার্কিট' হিসেবে চালানো হয়! বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের আগুন সত্যিই অনেক ধন্বন্তরী৷ বহু ষড়যন্ত্রকারীর পিঠের চামড়া বাঁচানোয় তা যুগে যুগে ভূমিকা পালন করেছে৷

যা হোক, আগুনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটাই এখন আমাদের জীবনে বিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে৷ দেশে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে৷ সেসব আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে মানুষ এবং সম্পদ৷ যখন মানুষ মারা যাচ্ছে, তখন বেশ হৈ-চৈ হচ্ছে৷ দেশজুড়ে আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে, সবাই নড়েচড়ে বসছেন, কর্তৃপক্ষ পরিত্রাণের উপায় খুঁজছেন, তদন্ত কমিটি হচ্ছে, তদন্ত কমিটি রির্পোট জমা দিচ্ছে, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারপর আবার সব চুপচাপ৷ আবার যখন কোনো জায়গায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে, তখন আগুন লাগার কারণের চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়৷ সেই নিমতলী থেকে মানুষ পুড়ছে, তারপর চকবাজার আর তারপর বনানীর এফআর টাওয়ার৷

শুধু রাজধানীই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিনই প্রায় ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে৷ সেসব আগুনে মানুষ না পুড়লে পুড়ছে মানুষের স্বপ্ন৷ অগ্নিকাণ্ড এখন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ কেন এত ঘনঘন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে সে প্রশ্নই এখন সবার মনে৷ কিন্তু আগুনের ধোঁয়ার মতোই এর উত্তরও ধোঁয়াশায় ভরা৷

ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএসএসএবি)-এর তথ্য মতে, দেশে প্রতি বছর আগুনে ২৩৩ জন মানুষ মর্মান্তিক মৃত্যুর শিকার হচ্ছেন৷ আহত হচ্ছেন প্রায় পাঁচ হাজার৷ এছাড়া আগুনে প্রতি বছর গড়ে ৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার মালামাল ভস্মীভূত হচ্ছে৷ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে৷ গত ৮ বছরে সারা দেশে ১ লাখ ৩০ হাজার ২১৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে৷ এতে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৯২৮ জন৷ আহত হয়েছেন ১২ হাজার ৮২৫ জন৷ ক্ষতির পরিমাণ সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি৷ সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে ঘটছে৷ এসব অগ্নিকাণ্ডের ভেতর ১ হাজার ৪১১টি অগ্নিকাণ্ডের কোনো কারণ জানা যায়নি৷ দেশে বিদ্যুৎ ও আগুনের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও বাড়ছে৷ কিন্তু আমরা সচেতন হচ্ছি না৷ এ কারণে আগুন লাগছে, ক্ষয়-ক্ষতি বাড়ছে, সেগুলো সমাধানের পথে হাঁটছি না৷

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর নিমতলী ও চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে৷ এই দুই এলাকার দুরুত্ব বেশি নয়৷ দুই জায়গাতেই আগুনের সূত্রপাত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে৷ আর আগুন দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করেছিল কেমিক্যালের কারণে৷ নিমতলীতেও ভয়াবহ আগুনের পেছনে এই কেমিক্যাল ছিল৷ নিমতলীর এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মারা যাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়৷ তদন্ত কমিটি সেখান থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানোসহ ১৭টি সুপারিশ করেছিল৷ তারপর বহু বছর পার হয়ে গেছে, সুপারিশ কাগজেই রয়ে গেছে৷ তারপর চকবাজার ট্রাজেডি এবং বনানী ট্র্যাজেডি৷ এবারও তদন্ত কমিটি হয়েছে৷ সেই সুপারিশ এবং তা বাস্তবায়নের কথা ঘুরেফিরেই আসছে৷ কারণ, সুপারিশ যদি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে সেই সুপারিশে মানুষের লাভ কোথায়? মানুষ শুধু তদন্ত কমিটি দেখতে চায় না৷ মানুষ চায়, তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা তা দেখতে৷

কোনো ঘটনা থেকে কেবল শিক্ষা নিয়ে বসে থাকলেই পরবর্তী ঘটনা আটকানো যায় না৷ কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তার যথাযথ কারণ বের করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাই যে কোনো সভ্য সমাজের রীতি৷ কিন্তু আমরা তা করি না৷ আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে যেমন আইন মেনে চলার অভ্যেস নেই, সাধারণ মানুষকে আইন মানানোর বাধ্যকতা সৃষ্টির জন্য যে সব কর্তৃপক্ষ আছেন, তারাও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেন৷ অনেক ক্ষেত্রে টাকা খেয়ে সব অনিয়মকে জায়েজ করে দেন৷ ফলে একের পর এক ট্রাজিক দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে৷

আসলে আইন বা নিয়ম না-মানার কারণেই আমাদের দেশে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে৷ একের পর এক বহুতল ভবন গড়ে উঠেছে একটার সঙ্গে আরেকটার গা ঘেঁষে৷ কোনো নিয়মের তোয়াক্কা ছাড়াই গড়ে উঠেছে ভবন৷ উপর মহলকে ‘ম্যানেজ' করে দশ তলা বিল্ডিংয়ের অনুমতি এনে গড়ে তুলছে পনেরো তলা ভবন৷ যে এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৫ জন মানুষ পুড়ে ছাই হলো, সেই ভবনের ২২ তলা পর্যন্ত অনুমতিই ছিল না৷ তাহলে কোন ক্ষমতারবলে তারা ভবন ২২ তলা পর্যন্ত করেছিল? আমাদের দেশে ক্ষমতাশালীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে যায় আর দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হয় সাধারণ মানুষকে৷ হাতেগোনা দু-একটা ছাড়া ঢাকার বহুতল ভবনগুলোয় পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই৷ নেই ঠিকঠাক জরুরি নির্গমন ব্যবস্থাও৷ আর আইন অমান্য এবং বিল্ডিং কোড যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় বিল্ডিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে৷

আমাদের দেশে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলিতেও নিয়মিত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷ কিন্তু এসব কারখানায় সব সময়ই দেখা যায়, আগুন লাগলে ভবন থেকে বের হবার পর্যাপ্ত সিঁড়ি, দরজা এবং ঝুলন্ত সিঁড়ি (ফায়ার এক্সিট) থাকে না৷ ফলে বের হতে না পেরে আগুনে পুড়ে, পদদলিত হয়ে অথবা উঁচু ভবন থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে লাফ দিয়ে, অকালে প্রাণ হারান শ্রমিকরা৷

দেশে আইন আছে প্রতিটি কারখানায় পর্যাপ্ত দরজা থাকতে হবে, প্রশস্ত সিঁড়ি থাকতে হবে৷ বিল্ডিংয়ের উপরের তলাগুলো থেকে দ্রুত বের হওয়ার জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক ঝুলন্ত সিঁড়ি (ফায়ার এক্সিট) থাকতে হবে৷ শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি অগ্নি নির্বাপণের যন্ত্রপাতিসহ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকতে হবে৷ কিন্তু অনেক গার্মেন্টস মালিক এসব আইন-কানুন মানছেন না৷ যাঁরা মানছেন, তাঁরা পুরোপুরি মানছেন না৷ এক্ষেত্রে অবহেলাজনিত কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দায়-দায়িত্বও তাঁদের ওপর বর্তায়৷ এমনকি যেসব কর্তৃপক্ষের এইসব আইন কার্যকর করার কথা, তারাও দায়িত্ব এড়াতে পারেন না৷ আমাদের দেশে দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি খুবই অপ্রতুল৷ বিশেষ করে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে৷ যে ক্ষেত্রে আগুন নেভানো, মানুষকে সরিয়ে নেওয়া এবং জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনা করা দরকার, সেসব ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো প্রস্তুতি নিতে হবে৷

সমালোচনা হচ্ছে অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়েও৷ এ মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন ফায়ার সার্ভিস ব্যবস্থার আধুনিকায়ন৷ অগ্নিনির্বাপণে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে পানির পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা৷ কিন্তু আমাদের দেশে বেশির ভাগ বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পানি সরবরাহের সীমাবদ্ধতা লক্ষ্য করা গেছে৷ তাই অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন হতে পারে একটি কার্যকর উদ্যোগ৷

অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় দ্রুত পানি সরবরাহের প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ফায়ার হাইড্রেন্ট (অগ্নিনির্বাপণ কাজে ব্যবহৃত বিশেষ পাম্পযুক্ত পানিকল) স্থাপন করা খুবই জরুরি৷ কারণ, ফায়ার হাইড্রেন্ট হচ্ছে পানির একটি সংযোগ উৎস, যা পানির প্রধান উৎসের সঙ্গে যুক্ত থাকে৷ যে-কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে এই উৎস থেকে পানি ব্যবহার করা যায়৷ এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, লম্বা পাইপের সাহায্যে ইচ্ছেমতো যে-কোনো দূরত্বে পানি সরবরাহ করা যায়৷

তাছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকার যেসব রাস্তায় অগ্নিনির্বাপক গাড়ি সহজেই প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে এই ব্যবস্থায় পানি সরবরাহ বেশ কার্যকর৷ এটি রাস্তার ধারে স্থাপিত এক ধরনের পানির কল বা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প, যেখান থেকে প্রয়োজনের সময় পানি ব্যবহার করা যায়৷

আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আরেকটি ব্যবস্থা করা যেতে পারে৷ প্রতিটি রেজিস্ট্রার্ড কোম্পানির দপ্তরকে বাধ্যতামূলকভাবে সর্বাঙ্গীন ভবন বিমা (কমপ্রিহেন্সিভ বিল্ডিং ইন্স্যুরেন্স) নিতে বাধ্য করা৷ বড় ব্যাংক-ঋণের জন্যও এই বিমা বাধ্যতামূলক করা যায়৷ এই বিমার পলিসির শর্ত হিসাবে প্রয়োজনীয় ইমারত সুযোগ-সুবিধা ও রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত বিধি সংযুক্ত করা যায়৷ বিমা কোম্পানিগুলো নিজ স্বার্থেই এসব ভবন পুঙ্খণুপুঙ্খভাবে পরিদর্শন ও সংরক্ষণের জন্য চাপ দেবে৷ ভবনের সামনেই ভবনটি কোনো বিমা কোম্পানি কর্তৃক বিমাকৃত ও ভবনের নিরাপত্তা পরিদর্শন-সংক্রান্ত তথ্য প্রদর্শন করতে হবে৷ বিমা কোম্পানিগুলো নিয়মিত তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদন জয়েন্ট-স্টক রেজিস্ট্রার ও সিকিউরিটিজ-এক্সচেঞ্জ কমিশনে দেবে৷ এই সংক্রান্ত ‘জোচ্চুরি' ঠেকাবার জন্য অবশ্যই বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পর্যবেক্ষণ করতে হবে৷

মূল কথা হলো, যেহেতু আগুন লাগলে বিমা কোম্পানির ক্ষতি হবে, কাজেই তারা তৎপর থাকবে যাতে ভবন মালিকরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন৷ আবার অগ্নিনির্বাপণ ঝুঁকির উপর যেহেতু বিমার চাঁদার পরিমাণ নির্ভর করবে, সেহেতু ভবন মালিকরাও চাইবেন ঝুঁকি কমাতে৷ এই পদ্ধতি প্রথম-প্রথম বড় কোম্পানির বেলায় চালু করা গেলে পরে হয়তো সব ভবনের জন্যই করা যাবে৷

আগুনের ব্যাপারে আমাদের আসলে আরো সাবধান হওয়া উচিত৷ আগুন কেবল জ্বালাতেই জানে৷ এই অগ্নিক্ষুধা এতটাই একপাক্ষিক ঘটনা যে, জান-মালসহ কিছুই আর অবশিষ্ট রাখে না৷ আগুন আর লোভ বাড়তে দিলে সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে৷ কাজেই আগুন যেন না লাগে, তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সব কিছুই করতে হবে৷ আগুন নিয়ে ‘প্রতিশ্রতির খেলা' বন্ধ করতে হবে এখনই, তা না হলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই একদিন পুড়ে-ছারখার হয়ে যাবে৷

পুনশ্চ: ইন্টারভিউ বোর্ডে একজন চাকরিপ্রত্যাশীকে এক প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন করলেন, ‘‘কল্পনা করো তো, তুমি একটা ২০ তলা বাড়ির ১৫ তলায় আছো৷ এমন সময় ভীষণ আগুন লেগে গেল, সবাই ছোটাছুটি শুরু করল, তুমি কী করবে?''

চাকরিপ্রার্থী: আমি কল্পনা করা বন্ধ করব!

ঢাকা শহরে বিল্ডিং-কোড না মানা হাজার হাজার বহুতল ভবনে যদি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা চলতেই থাকে, তাহলে কী হবে? আপাতত ‘কল্পনা বন্ধ' করা ছাড়া অন্য কোনো কিছু চিন্তা করা যাচ্ছে না!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান