1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বড় ধরনের গবেষণা দরকার

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৫ মার্চ ২০১৯

স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হন৷ বহু গণহত্যা সংগঠিত হয়৷ কিন্তু এখনও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি৷ কেন? জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ’-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ৷

https://p.dw.com/p/3FZAy
ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলে: গণহত্যা নিয়ে গবেষণা কেমন হয়েছে?

অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ: না, আসলে গণহত্যা নিয়ে সেই পরিমাণে গবেষণা কম৷ তবে গবেষকদের আগ্রহ বাড়ছে৷ অন্যান্য দেশের ‘জেনোসাইড' নিয়ে যদি তুলনা করি তাহলে আমাদের গবেষণা কম৷

১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হয়েছেন৷ এখনো কেন তাহলে এর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান?

এর দু'টো কারণ হতে পারে৷ একটা হলো ‘জেনোসাইড’ শব্দটার আইনগত যে বিষয় আছে, যাঁরা বিতর্ক করছেন তাঁরা হয়ত এই শব্দের মানেটা সেভাবে জানেন না৷ এখানে সংখ্যাটা বিষয় না৷ অনেকে মনে করেন, ‘জেনোসাইড' হতে হলে সংখ্যাটা অনেক হতে হবে৷ বিষয়টা আসলে তা নয়৷ আসলে ‘জেনোসাইড’-এর অনুবাদটা ঠিক হয়নি৷ গণহত্যা যেমন ‘জেনোসাইড' হতে পারে, তেমনই গণহত্যা ছাড়াও ‘জেনোসাইড' হতে পারে৷ এমনকি মানুষের মৃত্যু না হলেও ‘জেনোসাইড' হতে পারে৷ অনেকে মনে করেন, সংখ্যাটা বাড়লেই ‘জেনোসাইড' হয়৷ এটা ছিক নয়৷ আরেকটা কারণ, এটা নিয়ে যেহেতু কোনো জরিপ হয়নি, তাই সবাই মনে করছেন এই সংখ্যাটা কোথা থেকে আসল? যদি হিসাব করা যায় তাহলে সংখ্যাটা আরো বাড়তে পারে৷ তখন যে ১০ মিলিয়ন মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকের গর্ভপাত হয়ে গেছে, অসুখে মারা গেছেন – এগুলো কিন্তু হিসেবে আনতে হবে৷ কারণ ওগুলো তো কোনোটাই স্বাভাবিক মৃত্যু ছিল না বা তাঁরা নিজের ইচ্ছায় সেখানে যাননি৷ বাধ্য হয়েই তাঁদের যেতে হয়েছে৷ সংখ্যা নয়, আসলে ‘ইনটেনশন' কী ছিল সেটাই আসল কথা৷ 

‘এখনও প্রচুর তথ্য-উপাত্ত রয়ে গেছে’

এই গণহত্যার এখনো স্বীকৃতি মেলেনি কেন?

এর জন্য গবেষণা করা প্রয়োজন৷ আমরা হয়ত কিছু কথা বলতে পারি৷ কিন্তু এর জন্য বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা প্রয়োজন৷ এখন অবশ্য আর্ন্তজাতিকভাবে ‘জেনোসাইড' নিয়ে কিছু লেখালেখি হচ্ছে এবং সেখানে বাংলাদেশের কথাও আছে৷ তবে যেটা নেই, সেটা হলো জাতিসংঘের স্বীকৃতি এখনো আসেনি৷ এর মধ্যে একটা রাজনীতি আছে, আরেকটা যেটা বললাম গবেষণা হওয়া দরকার৷ ‘আলজেরিয়ান জেনোসাইড'-এর স্বীকৃতি পেতে কিন্তু ১০০ বছর লেগেছে৷ প্রচুর গবেষণা হয়েছে বলেই সেটা এক সময় এসে স্বীকৃতি পেয়েছে৷ তাই গবেষণা ব্যতিত এই স্বীকৃতি কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব না৷ যদি বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা করা হয়, তাহলে আজ না কাল জাতিসংঘের অনুমোদন অবশ্যই পাওয়া যাবে৷ তাতে সমস্যা হবে না৷

এ নিয়ে মত-দ্বিমত কীভাবে দূর করা যায়?

এখানে আসলে সংখ্যাটা বিষয় না৷ ১০ জন মারা গেলেও ‘জেনোসাইড' হতে পারে, আবার ১০০ জন মারা গেলেও হতে পারে৷ এখানে ‘জেনোসাইড'-এর বাংলা করা হয়েছে গণহত্যা, যার ইংরেজি ‘মাসকিলিং'৷ ‘মাসকিলিং' অবশ্যই গণহত্যা হতে পারে, কিন্তু সব ‘মাসকিলিং' কিন্তু গণহত্যা নয়৷ যেমন ধরুন অ্যামেরিকানরা যে আফগানিস্তানে বোমা ফেলছে, সেটা কিন্তু ‘জেনোসাইড' না৷ তারা কিন্তু একদল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মারার চেষ্টা করছে৷ এখানে হয়ত সাধারণ মানুষও মারা যাচ্ছে, তারপরও এটা ‘জেনোসাইড' হবে না৷ ‘জেনোসাইড' হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি শব্দ৷

আপনি বারবারই গবেষণার কথা বলছেন৷ এটা কীভাবে হতে পারে? রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে না ব্যক্তি পর্যায় থেকে?

এটা যৌথভাবে হতে পারে৷ একটা ‘ফেলোশিপ' অথবা একটা ‘স্কলারশিপ' দিয়ে তো হতেই পারে৷ এই ‘জেনোসাইড' নিয়ে যদি প্রতি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মেলন করা হয় তাহলে কিন্তু বিশ্ববাসীও এ বিষয়ে জানবে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চার-পাঁচ বছর ধরে এটা করছে৷ আমরা একটা ‘সেন্টার' করেছি, যার নাম ‘সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ'৷ এটা যদি আগে করা হতো, তাহলে গবেষণাটা অনেক এগিয়ে যেত৷ এখানে ডিপ্লোমা কোর্স হচ্ছে, মানুষ জানছে যে আসলে ‘জেনোসাইড' কী? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু প্রতি বছর একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে৷ ক'বছর ধরে এটা হচ্ছে৷ এবারও ২৪ ও ২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা আয়োজিত হবে৷ এটা যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে করা যায় – সেটা দেশে হতে পারে আবার দেশের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় হতে পারে – তাহলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা আসবেন, তাঁরাও বিষয়টা জানবেন৷ 

আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের আইন-কানুন কী?

এটা সরকারিভাবে জাতিসংঘে পেশ করতে হবে৷ তবে এই ধরনের প্রস্তাব আনার আগে বড় আকারের গবেষণা দরকার৷ যখন টেবিলে সেই গবেষণা দেওয়া হবে, তখন যেন কারো মনে কোনো প্রশ্ন না থাকে৷ সেই ধরনের গবেষণা হতে হবে৷ সরকারি চ্যানেলেই জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেতে হবে৷

বাংলাদেশ সরকারের এক্ষেত্রে কী করা উচিত?

কয়েকটা জিনিস করতে হবে৷ প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে আন্তর্জাতিক কনফারেন্স বা সম্মেলন করতে হবে দেশে এবং বিদেশে৷ সেই আলোচনায় অন্য সব ‘জেনোসাইড'-ও আসতে পারে৷ দ্বিতীয়ত যে গবেষণার কথা বলা হচ্ছে, তার জন্য সরকারের বড় আকারের একটা বাজেট দরকার৷ সময়ও প্রয়োজন৷ তিন-চার বছর ধরে যদি গবেষণা করা যায়, তাহলে ভালো ‘রিপোর্ট' আসতে পারে৷ এছাড়া একটা ‘ক্যাম্পেইন' করা দরকার৷ দূতাবাসগুলো এক্ষেত্রে কাজ করতে পারে৷

এত বছর পর গণহত্যার একটা ভালো চিত্র পাওয়া কি সম্ভব?

এটা অসম্ভব না৷ নাৎসি গণহত্যা নিয়ে এখনো কাজ হচ্ছে৷ আলজেরীয় গণহত্যা নিয়ে এখনো কাজ হচ্ছে৷ অনেক দেশেই, যেখানে বড় বড় ‘মাসকিলিং' হয়েছে, সেখানেও এখনও গবেষণা হচ্ছে৷ বিজ্ঞানের অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ এখন ডিএনএ পরীক্ষা করা যায়৷ তাই অনেক কিছুই করা সম্ভব৷ এখানে শুধু সমাজবিজ্ঞানী না, বিজ্ঞানীরাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন৷ আমাদের ৭১-এর ব্যাপারে খুব একটা সমস্যা হবে না৷ এখনও প্রচুর তথ্য-উপাত্ত রয়ে গেছে৷ বহু তথ্য সংগ্রহ করা আছে৷ তবে পরে এগুলো জার্মান, ফরাসি বা ইংরেজি ভাষায় করতে হবে৷ শুধু বাংলায় করলে হবে না৷ এখানে অনুবাদেরও কিছু বিষয় আছে৷ এর সঙ্গে ইংরেজি ভাষাতেও কাজ বাড়ানো দরকার৷

গণহত্যার স্বীকৃতিতে দেশের কী লাভ? না পেলে ক্ষতিই বা কী?

গণহত্যার বিচার এই জন্য করা হয়, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে৷ ১৯৭১-এর পরও কিন্তু কম্বোডিয়া, রুয়ান্ডাতে বড় ধরনের ‘জেনোসাইড' হয়েছে৷ বলতে গেলে বাংলাদেশ আবারো ‘জেনোসাইড'-এর শিকার হয়েছে প্রতিবেশী মিয়ানমারের কারণে৷ এটা ঢেকে রাখা যাবে না৷ পাকিস্তানিদের নিয়ে যদি ‘জেনোসাইড'-এর বিচার করা যেত, তাহলে এখন সেখানে যে ধরনের ‘কিলিং' হচ্ছে সেটা হয়ত হতো না৷ আমি মনে করি, তাহলে পাকিস্তানের ‘মরাল স্ট্যান্ডিং'-টা আরো বাড়ত৷ যেমন ধরুন যারা ‘জেনোসাইড' করেছে, তারা বড় বড় ‘পোস্ট' পেয়েছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ এর ফলে রাষ্ট্রের মধ্যে একটা ঘুন ধরে গেছে৷ যার বড় উদাহরণ পাকিস্তান৷ এ সমস্ত ঘটনার বিচার না হলে ঘুরে-ফিরে মানুষের মধ্যে এটা রয়ে যায়৷ এবং পরে আবারো বড় আকারে দেখা দেয়৷ সর্বপরি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এর বিচার করা ভীষণভাবে দরকার৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য