1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগান শান্তি কতদূর?

১ আগস্ট ২০১৯

সহিংস হামলার মধ্যেও আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে কাতারে চলছে তালিবান আর যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনা৷ আন্তর্জাতিক এই উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা৷

https://p.dw.com/p/3N8rB
Anschlag in Afghanistan Nähe der Bagram Air Base
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Rahmat Gul

বুধবার এক বোমা হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ আফগান নাগরিক৷ যাঁদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু৷ প্রাদেশিক পুলিশের মুখপাত্র মহিবুল্লাহ মহিব জানিয়েছেন, আফগান ও বিদেশি নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পরিকল্পনামাফিক হামলাটি চালিয়েছে তালিবান বিদ্রোহীরা৷ যদিও হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো পক্ষ৷

দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরেও থামেনি তালিবান হামলা৷ ফলে, দেশটিতে চলমান এই সহিংসতা বেশকিছু প্রশ্নেরও জন্ম দিচ্ছে৷ দোহার শান্তি আলোচনা আদৌ কি কোনো ফল আনবে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কি তালিবানদের বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে? অথবা এই শান্তি চুক্তি কি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে রক্তপাত বন্ধ করতে পারবে?

 

সেনা প্রত্যাহার কি তবে ভুল?

শান্তি স্থাপনে বিদেশি সেনাদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছে তালিবান৷ যতোক্ষণ পর্যন্ত বিদেশি সেনা প্রত্যাহার না হবে, আফগান সরকারের সঙ্গে কোনো সরাসরি আলোচনায় না যাওয়ার কথাও বলেছে তালিবানরা৷

Katar Doha | Friedenkonferenz für Afghanistan
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar

আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও তালিবানদের শর্ত মানার দিকেই যাচ্ছেন৷ সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পিও বলেছেন, ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনের আগেই আফগানে মার্কিন সেনা কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প৷

২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে আফগান কমব্যাট মিশন শেষ করে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে আফগান বিমান বাহিনীকে সহযোগিতা এবং সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণে এখনও ১৪ হাজার মার্কিন সেনা আছে দেশটিতে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক হামলাগুলো বলছে, সেনা প্রত্যাহার করা বড় ভুল হতে পারে৷ নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দাবি, বিদেশি সেনা প্রত্যাহার মানে দেশটিতে তালিবানরা আরো শক্তিশালী হবে৷ কারণ এখনই দেশটির অর্ধেকটা জুড়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে তাঁরা৷

কাবুলের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ওয়াহিদ মুজদা বলেন, ‘‘তালিবান তো আরো শক্তিশালী হবেই৷ এমনকি দেখা যেতে পারে, পরবর্তীতে আফগান সরকারের সঙ্গে কোনো আলাপে যেতেই রাজি হবে না তাঁরা৷''

 

শক্তিশালী অবস্থান

জাতিসংঘের দেয়া পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে বিভিন্ন হামলায় তিন হাজার ৮০৪ আফগান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে৷ যাদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৯২৭৷ চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ন্যাটোর হিসেব বলছে, তালিবান হত্যা করেছে এক হজার ৭৫ বেসামরিক নাগরিককে৷

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শান্তি প্রক্রিয়ার মাঝেই ইসলামি জঙ্গিরা তাঁদের শক্তিমত্তা দেখানোর চেষ্টা করছে৷ আফগান সিভিল সোসাইটি ফোরামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজ রাফি বলেন, ‘‘চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যে হামলা কমে আসবে বলে আমরা মনে করি না৷ বরং রক্তপাত আরো বেড়ে যেতে পারে৷''

Bombenanschlag in der afghanischen Provinz Herat
ছবি: picture-alliance/AA/M. A. Firooz

সহিংস আক্রমণ শুধু তালিবানরাই করছে না, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইএস এবং তালিবানের একটি অংশ, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে৷ তাঁদের লক্ষ্যও আফগানের বেসামরিক নাগরিকরা৷ শেষ তিনটি বিস্ফোরণের দুটির দায় নিয়েছে আইএস৷ যার মধ্য দিয়ে দেশটির পূর্বাঞ্চলে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে তাঁরা৷ রাফি মনে করছেন, শান্তি আলোচনায় সবার অংশগ্রহণ না থাকলে আফগানিস্তানে সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ হবে না

 

সংকটে কাবুল, পাকিস্তানের উত্তরণ?

ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের ইচ্ছের বিষয়টি আর গোপন নেই৷ তাঁর প্রশাসন কাতারে এই জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনাতেও বসেছে৷ ওয়াশিংটনের আশা, তালিবানদের অস্ত্রবিরতিতে জোর ভূমিকা রাখবে পাকিস্তান৷

অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাই বলে থাকেন, ১৯৯০ সালের দিকে তালিবান উত্থানে প্রত্যক্ষ মদদ ছিল পাক সেনাবাহিনীর৷ এখনও তালিবানের কিছু অংশকে সহযোগিতা করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী৷ আফগানিস্তানের সাবেক কূটনীতিক আহমেদ সাইদি বলেন, শান্তি আলোচনায় সহযোগিতার বিষয়ে পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি দিলেও সামনের দিনগুলোতে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আছে৷ তিনি জনান, ‘‘এর আগে পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখে নি৷ তাই এবারও নিশ্চয়তা নেই৷''

এদিকে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই জানিয়েছেন, শান্তি আলোচনার পক্ষে আছেন তিনি৷ তবে আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের স্বার্থে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো চুক্তি মেনে নেবেন না৷

শামিল শামস, মাসুদ সাইফুল্লাহ/টিএম/কেএম