1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবার বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ

১৬ অক্টোবর ২০২০

কলকাতায় আবার বিতর্কের কেন্দ্রে পুলিশ। তাদের কয়েকটি আচরণ ও সিদ্ধান্ত নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন দেখা দিয়েছে। 

https://p.dw.com/p/3k0gR
ছবি: DW/P. Samanta

করোনাকালে কলকাতায় পুলিশই ছিল ত্রাতা। বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া, বয়স্কদের দেখভাল, ফুটপাথবাসীদের সাহায্য করা, রোগী ভর্তি করা, গান গেয়ে মানুষকে সচেতন করা-- সবই করেছে পুলিশ। সাধারণ মানুষ তাদের সাধুবাদ দিয়েছেন। কিন্তু করোনার প্রকোপ সত্ত্বেও এখন আবার অফিস-কাছারি সব খুলে গেছে। প্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে সাধারণ মানুষ। এবং পুলিশও।

সম্প্রতি কলকাতা পুলিশকে নিয়ে এমন কয়েকটা ঘটনা সামনে এসেছে, যা নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ, পুলিশ যে রাজনৈতিক চাপে কাজ করে অথবা মানুষের হয়রানির কারণ হয়, এই সব ঘটনা থেকে তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। করোনার সূচনায় যে পুলিশ ছিল নায়কের ভূমিকায়, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল উঠছে।

এক নম্বর ঘটনা

ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং পুলিশ অফিসারদের একটা হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটের অংশবিশেষ ফাঁস করে দাবি করেছেন, তাঁকে ফাঁসানোর জন্য পুলিশ উদ্যোগী হয়েছে। অর্জুন সিং আগে তৃণমূলে ছিলেন। তিনি বাহুবলী নেতা বলে এলাকায় পরিচিত। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-তে যোগ দিয়ে সাংসদ হয়েছেন। সম্প্রতি তাঁর অনুগামী মনীশ শুক্লা খুন হয়েছেন। তাতেই তাঁকে ফাঁসাবার চেষ্টা হচ্ছে বলে সাংসদের অভিযোগ।

অর্জুন যে হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট ফাঁস করেছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ কর্তারা তাঁকে নিয়ে আলোচনা করছেন। একজন বলেছেন, 'শুনেছি, চার্জশিটে অর্জুনের নাম আছে। খবর পেলাম।' তার জবাবে অন্য এক অফিসার বলেছেন, 'ওটা তো রাখতেই হবে।' বলে একটা হাসির ইমোজি দিয়েছেন তিনি। আরেকজন বলেছেন, তিনি আবার মনীশ খুনের সঙ্গে জড়িত।

এই চ্যাট নিয়েই আলোড়ন শুরু হয়। আনন্দবাজারের রিপোর্ট বলছে, যাঁদের নাম চ্যাটে আছে, তাঁদের দাবি, অর্জুন যে চ্যাট ফাঁস করেছেন বলে দাবি করেছেন সেটা জাল। কেউ জাল স্ক্রিনশট বানিয়েছে।

এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন অর্জুন সিং। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''আমি চ্যালেঞ্জ করছি, যে হোয়াটস অ্যাপ চ্যাট ফাঁস হয়েছে, তা যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমার নামে মামলা করুক পুলিশ।'' তাঁর বক্তব্য, ''রাজনৈতিকভাবে তৃণমূল হেরে গেছে বলে প্রশাসনকে দিয়ে চাপ তৈরির চেষ্টা করছে। এটা পশ্চিমবঙ্গে আগেও হয়েছে। বুদ্ধদেববাবু করেছেন। যাঁরা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যায়, তারা তখন পুলিশ দিয়ে, প্রশাসনকে দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে।''

যে চ্যাট ফাঁস হয়েছে, তাতে ১৯৯৮ ব্যাচের অফিসাররা ছিলেন। এই নিয়ে বিতর্ক শুরুর পর সেই গ্রুপ ডিলিট করে দেয়া হয়েছে।

দুই নম্বর ঘটনা

সম্প্রতি কলকাতার দুইটি স্পা-তে হানা দিয়ে কলকাতা পুলিশ মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তারকরে। তার মধ্যে একজন বাংলা টিভি সিরিয়ালের অভিনেতা। পুলিশের অভিযোগ, স্পা-এর আড়ালে মধুচক্র বা যৌন ব্যবসা চলত। আটজন মেয়ে, স্পা-র মালিক থেকে শুরু করে ওখানে উপস্থিত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিতর্ক শুরু হয় এরপরে। অভিনেতাকে কেন্দ্র করে। ওই অভিনেতা আনন্দবাজারে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। অভিনেতার নাম সৌগত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, তিনি স্ত্রী-কে বলে মাসাজ নেয়ার জন্য ওই স্পা-তে গেছিলেন। যাওয়ার পর একজন তাঁকে ভিতরে নিয়ে যায় এবং তিনি ওয়াশ রুমের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। সে সময় পুলিশ হানা দেয় এবং তাঁকে ধরে নিয়ে যায় ও গ্রেপ্তার করে। ওই স্পাতে তিনি প্রথমবার গেছিলেন।

স্পাতে যাওয়া অন্যায় নয়। বহু মানুষ, বিশেষ করে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যান। কোনো স্পা-র আড়ালে যৌন ব্যবসা হচ্ছে কি না, তা বাইরের লোকের জানার কথা নয়। কিন্তু পুলিশ কোনো যুক্তি না শুনে তাঁকে গ্রেপ্তার করে, ফোন নিয়ে নেয়া হয় এবং পরের দিন আদালতে তিনি জামিন পান। সৌগত লিখেছেন, স্ত্রী পাশে না থাকলে তিনি হয়তো আত্মহত্যা করতেন।

এরপর এই ঘটনা নিয়ে প্রবল আলোড়ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, সৌগতর বয়ান ঠিক হলে পুলিশ এরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে কী করে। তাদের একটা পদক্ষেপে তো একজনের জীবন কলঙ্কিত হয়ে যায়।

বিজেপি নেতা সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''কলকাতায় স্পা-এর নামে এই ব্যবসা চলছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেখানে পুলিশ বা শাসক দলের নেতার মদত থাকে। চাপে পড়লে পুলিশ যাঁকে গ্রেপ্তার করার নয়, তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। আর এর মালিকদের শেষ পর্যন্ত শাস্তি হয় কি না, তা জানা যায় না।''

দীর্ঘদিন ধরে কলকাতায় পুলিশের খবর করেছেন প্রবীণ সাংবাদিক সোমনাথ চক্রবর্তী। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''শুধু কলকাতা কেন, রাজ্যে মধুচক্র ভাঙার জন্য পুলিশ মাঝেমধ্যেই হানা দেয়। অতীতে এর বহু উদাহরণ আছে।''

তিন নম্বর ঘটনা

পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরে পুলিশি হেফাজতে বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়। তাঁর দেহের ময়না তদন্ত এসএসকেএম হাসপাতালে হয়। কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আরজিকর হাসপাতালে আবার ময়নাতদন্ত করতে হবে। বিভাগীয় প্রধান করবেন। পুরো ময়না তদন্ত ভিডিওতে ধরে রাখতে হবে। আদালতে ২১ অক্টোবর সেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। 

বেআইনি কাজকারবার হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে এটাই প্রত্যাশিত। সে দিক থেকে স্পা-র আড়ালে যৌন ব্যবসা হলে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে ভুল করেনি। প্রশ্নটা উঠছে, যদি কেউ  নিরপরাধ হন, তা হলে তাঁকে এরকম স্পর্শকাতর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা নিয়ে। তার জন্যই বিতর্কের মুখে পুলিশ। প্রশ্ন উঠছে, যদি সৌগত কোনো অপরাধ না করে থাকেন, তা হলে একজনের কেরিয়ার ও জীবন এরকমভাবে একটি সিদ্ধান্তে শেষ করার ক্ষমতা কি পুলিশের আছে?

জিএইচ/এসজি(আনন্দবাজার, এই সময়)