1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমাদের দেশে বিদ্রুপাত্মক টক শো’র অভাব কেন?

২৩ অক্টোবর ২০১৮

জার্মানিতে ইয়ান ব্যোমারমান এক অতি পরিচিত মুখ৷ বছর দুয়েক আগে এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে এক ছড়া আবৃত্তি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন তিনি৷ রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিদ্রুপ করতে বেশ পারদর্শী এই কমেডিয়ান৷

https://p.dw.com/p/36tFh
ছবি: picture alliance/dpa/A. Arnold

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান জার্মানিতে এক আলোচিত চরিত্র৷ তাঁর দেশের অনেক মানুষ ইউরোপের কেন্দ্রের দেশটিতে থাকেন৷ তাঁদের আবার তুরস্কের নির্বাচনে ভোট দেয়ারও সুযোগ আছে৷ ফলে, এর্দোয়ান সেই ভোট ব্যাংক যত্নের সাথে রক্ষার চেষ্টা করেন৷

সমস্যা হচ্ছে, এর্দোয়ানের অনেক কাণ্ডকীর্তি আবার জার্মান সরকার, জার্মান গণমাধ্যমের পছন্দ নয়৷ তিনি বিরোধী দলের উপর তীব্র দমনপীড়ন চালান, গণমাধ্যমকে কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন৷ এসব কারণে জার্মানির মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে এর্দোয়ানের দূরত্বটা মাঝেমাঝেই পরিষ্কার হয়৷

তো, সেই এর্দোয়ানকে নিয়ে বছর দুয়েক আগে নিজের ‘লেট নাইট শো'-তে এক বিদ্রুপাত্মক ছড়া পাঠক করেন ব্যোমারমান৷ ছড়াটির মাধ্যমে এর্দোয়ানের আমলে তুরস্কে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যেভাবে চাপের মুখে পড়েছে তার প্রতি ব্যঙ্গ করা ছিল তাঁর উদ্দেশ্য৷ আর সেটা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ছাগল ও ভেড়ার সঙ্গে এর্দোয়ানের যৌন সম্পর্ক আছে বলেও বিদ্রুপ করেন তিনি৷

ব্যোমারমানের এই বিদ্রুপের তীব্র প্রতিবাদ জানান এর্দোয়ান৷ জার্মান আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়৷ দীর্ঘদিন সেই মামলা নিয়ে শোরগোল হয়েছে৷ তবে শেষমেষ জার্মান সরকার ব্যোমারমানের পক্ষেই থেকেছে৷ এমনকি এটা করতে একটি আইনেও পরিবর্তন এনেছে জার্মান সংসদ

শুধু ব্যোমারমানের কথা বলছি কেন, পশ্চিমা বিশ্বে টক শো বা লেটনাইট শো-তে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, বাঘা রাজনীতিবিদদের নিয়ে বিদ্রুপ করতে হরহামেশাই দেখা যায়৷ স্টেফেন কোলবেয়ার তো তাঁর ‘লেট শো'তে নিয়মিত বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্পকে তুলাধুনা করেন৷ আর সেগুলো ট্রাম্পের নজর এড়িয়ে যায় এমনও না৷ বরং গত বছর একবার কোলবেয়ারকে ‘মেধাহীন' আখ্যা দিয়েছিলেন তিনি৷

স্টেফেন কোলবেয়ার তাতে দমে যাননি৷ বরং বিপুল উৎসাহে ট্রাম্পকে নিয়ে বিদ্রুপ করা অব্যাহত রেখেছেন৷ তাঁর মতো আরো অনেক জনপ্রিয় টেলিভিশন উপস্থাপকই ট্রাম্পের সমালোচনায় পঞ্চমুখ৷ আর তাঁদের কেউই এই কাজ করে কোনো বিপদে পড়েছেন এমন খবর শোনা যায়নি৷

আমাদের দেশে এ ধরনের বিদ্রুপাত্মক শো করা হয় না কেন জানতে চেয়েছিলাম এক সহকর্মীর কাছে৷ তিনি এক কথায় উত্তর দিলেন, ‘‘ভয়ে৷'' তাঁর এই উত্তর কিছুক্ষণের জন্য ভাবনায় ফেলে দিয়েছিল৷ ভয়টা আসলে কিসের? আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের তো সরাসরি কোনো সাংবাদিককে হুমকি দিতে দেখা যায় না৷ তাহলে? 

ডয়চে ভেলের সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম
আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

আসলে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করা হয় নানাভাবে৷ অতীতেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে৷ এই তো প্রখ্যাত আলোকচিত্রী, অ্যাক্টিভিস্ট শহীদুল আলম দু' মাসের বেশি সময় ধরে জেলে আছেন৷ না, তিনি কাউকে নিয়ে বিদ্রুপ করেননি৷ তবে কঠোর ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেছিলেন৷ আর সেটা করাতে রাতের আধারে তাঁকে অপহরণের মতো করে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো, নির্যাতন করা হলো৷ আর সবশেষে আইনের প্যাঁচে ফেলে এখন হাজতবাস নিশ্চিত করা হলো৷

শহীদুল আসলে অনেক সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের জন্য এক শিক্ষা৷ সরকারের সমালোচনা বেশি করলে পরিণতি এমনটা হতে পারে৷ পাশাপাশি আইনি দিক দিয়েও গণমাধ্যমকে চাপে ফেলার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে৷ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর পর এখন টক শো পর্যবেক্ষণের জন্যও তৈরি হচ্ছে আইন, আর তাতে ‘মিথ্যা, অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দিলে' শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷

এখন কথা হচ্ছে, এই ভয়ের সংস্কৃতি আর আইনের মারপ্যাঁচের মধ্যে যেখানে স্বাভাবিক আলোচনা চালানোই দুরুহ, সেখানে বিদ্রুপাত্মক রাজনৈতিক টক শো' করবার সাধ্য কার! তাই সহকর্মীর সঙ্গেও আর কথা বাড়াইনি – ‘ভয়ে৷'

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷