1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর্থিক অনটনে ধুঁকছে যেসব খেলা

আলী সেকান্দার ঢাকা
১৯ মে ২০২৩

গুলিস্তানের ক্রীড়া কমপ্লেক্সে গেলে যে কারো মনে হতে পারে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বড়সড় কোনো বাজার দেখছেন৷ অথচ সেটা দেশের খেলাধুলার ‘হাব’৷ একই জায়গায় সন্ধ্যায় গেলে মনে হবে ভবঘুরেদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র৷

https://p.dw.com/p/4RaU8
বাংলাদশের একটি কারাতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র৷
অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, টেনিস বা হকি স্পন্সর থেকে আয় করে খেলা চালাতে পারলেও কারাতে, কুস্তি, বক্সিং, জুডো, শরীর গঠন, রাগবি, বাস্কেটবল, উশুর মতো ‘ভাসমান’ ফেডারেশনগুলোর কার্যক্রম চলে নামে মাত্র৷ছবি: DW/M. Mamun

পুঁতিগন্ধময় স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ বলতে যা বোঝায় ঠিক সেই অবস্থা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের৷ স্টেডিয়ামের এই বাহ্যিক চিত্র দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও প্রভাব ফেলে৷

ছোট ছোট এক-দুই কক্ষের অফিস নিয়ে একেকটি ফেডারেশন, যাদের অনেকের খেলার নিজস্ব মাঠ নেই৷ অন্যের মাঠ ধার নিয়ে বছরে একবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করা হয়৷ আন্তর্জাতিক আসরে খেলার সুযোগ পেলে সরকারি অনুদানে এক বা দুই মাসের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে তাতে অংশগ্রহণ করতে হয়৷

ঢাকার কয়েকটি ক্রীড়া ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আর্থিক সংকটে বিপর্যস্ত অবস্থার কথাই জানা গেছে৷ ‘জাদুর শহর’ ঢাকার ক্রীড়াঙ্গন বলতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম আর মাওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে কিছু চেয়ার-টেবিল সর্বস্ব এক-দুই কক্ষের ছোট্ট অফিস৷

বিশ্বের যে-কোনো দেশ সম্পর্ক এখন মুহূর্তেই জানা যায় সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তায়৷ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন সম্পর্কে সার্চ ইঞ্জিনে ঢুঁ দিলে প্রতি ক্লিকেই থাকবে ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের কথা৷ সেখানে বাংলাদেশের ক্রীড়াদূত সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমানরা৷

অথচ বাংলাদেশে ৫২টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে৷ বেশিরভাগ খেলাকে নিজস্ব মাঠ বা প্রশিক্ষণের সুযোগ-সুবিধা দিতে পারেনি রাষ্ট্র৷ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর না আছে আর্থিক সক্ষমতা, না আছে দক্ষ সংগঠক, প্রশিক্ষক৷

ফেডারেশনের কর্মকর্তারা মনে করেন, যুগের পর যুগ ধরে তাদের যে ব্যর্থতার গল্প, তার পেছনে রয়েছে আর্থিক অস্বচ্ছলতা৷ এ কারণে বছরের পর বছর কাজ করেও দীর্ঘমেয়াদে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন না তারা৷

কেন এই অনটন তার খোঁজ করতে গেলে বেরিয়ে  আসে সরকারের অপ্রতুল অনুদান, পৃষ্ঠোপোষকতায় অনাগ্রহ, খেলোয়াড়দের কর্মসংস্থান না থাকার মতো বিষয়গুলো৷

তবে বিপরীত চিত্রও দেখা যায়৷ সংগঠকরা নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে খেলা চালান এবং পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকেন অনেকটা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতোই৷  

অ্যাথলেটিক্স বিশ্বের বড় খেলাগুলোর একটি হলেও বাংলাদেশে নয়৷ এই খেলায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করায় বড্ড অনিহা৷ কালেভদ্রে স্পন্সর পাওয়া গেলেও তা খুব একটা আকর্ষণীয় নয়৷ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু জানান, পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা দিতে রাজি থাকে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান৷ অথচ একটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ করতেই খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা৷ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের বার্ষিক আয় এক কোটি টাকার মতো৷

স্পন্সর না থাকায় সবকিছু ছোট পরিসরে করতে হয়: আব্দুর রকিব মন্টু

সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু বলেন, ‘‘আমরা ফেডারেশনের খরচ বাবদ ১৯ লাখ টাকা পাই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)-র কাছ থেকে৷ উন্নয়ন কার্যক্রমের প্রস্তাবনা দেওয়া হলে প্রশিক্ষণ, বিদেশের খেলায় অংশগ্রহণে বছরে আরও ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দেয় এনএসসি৷ এই টাকা দিয়ে অ্যাথলেটিক্স চালানো যায় না৷ আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন থেকেও বছরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার ডলার পাওয়া যায়৷ এই টাকা দিয়ে অ্যাথলেটিক্সের কার্যক্রম চলে৷ খেলার থেকেও বেশি বাজেট লাগে প্রশিক্ষণে, বিদেশি কোচ নিয়োগ দিতে৷ স্পন্সর না থাকায় সবকিছু ছোট পরিসরে করতে হয়৷ এছাড়া আমাদেরকে সাশ্রয়ও করতে হয় ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে৷ কিছু অর্থ বাঁচিয়ে দুই কোটি টাকার মতো ফান্ড রেখেছি৷ কারণ, অস্বচ্ছল অ্যাথলেটদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে৷’’

মন্টু দাবি করেন, প্রতিটি টাকার হিসেব রাখতে হয়৷ সরকারি টাকার হিসাব সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হয়৷ আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন তাদের হিসেব বুঝে নেয় নিজস্ব অডিট প্রক্রিয়ায়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আয়-ব্যয়ের হিসাব কমিটিতে উপস্থাপন করি৷ এজিএমএ উপস্থাপন করি৷ ক্রীড়া পরিষদ থেকে যে টাকা দেওয়া হয় তা থেকে ট্যাক্স এবং ভ্যাট ১৫ শতাংশ কেটে রাখে৷ তারাও হিসেব নেয়৷ আন্তর্জাতিক ফেডারেশনকে আমরা কার্যক্রমের প্রস্তাবনা দিলে সে আনুযায়ী অনুদান দেয় এবং সেগুলো মনিটরিং করে৷''

সে তুলনায় সাঁতার ফেডারেশনের অবস্থা বেশ ভালো৷ পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকে৷ সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা বদরুল সাইফ বলেন, ‘‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে বছরে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা আসে৷ আমরা স্পন্সর থেকে বাকি টাকা জোগাড় করি৷ আমাদের বিভিন্ন রকম প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়৷ রাষ্ট্রীয় যে কাঠামো সেভাবে আমাদের চলা সম্ভব না৷ কয়েকটি ভালো মানের স্পন্সর থাকায় সাঁতারের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারি৷ আমরা যখন ক্যাম্প করি তখন অনেক টাকা লাগে৷ বছরে আমাদের বিদ্যুৎ বিলই আসে ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা৷ ক্যাম্প চললে ৩ কোটি টাকার প্রয়োজন হয়৷ যেমন আমরা একটা প্রোগ্রাম করেছি ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ৷’ এজন্য তিন বছরে ১৪ কোটি টাকা লেগেছে৷ আমি বলবো অন্য ফেডারেশনের থেকে অনেক ভালো আছি৷’’

পৃষ্ঠপোষকতা থাকার পরও ক্যাম্পের খেলোয়াড়দের হাত খরচ দেওয়া হয় সপ্তাহে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা৷ এর বেশি দেওয়া সম্ভব হয় নয় বলে জানান সাইফ৷ সাঁতার ফেডারেশনে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় আয়-ব্যয়ের হিসাব অডিট করা হয় বলে দাবি এই কর্মকর্তার৷ বিশেষ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান সাঁতার ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ায় তাদের দিক থেকেও অডিট হয়৷

দলগত খেলা হ্যান্ডবলের খরচ বেশি হলেও বছরের বাজেট দুই কোটি টাকা রাখতে হয়, যার সিংহভাগ আসে স্পন্সর থেকে৷ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে প্রাপ্ত ১৭ থেকে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে অফিসের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হয় না বলে দাবি বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুরের৷ তিনি বলেন, ‘‘এনএসসি ছাড়াও মন্ত্রণালয় থেকে কিছু বরাদ্দ আসে৷ সে টাকা ছাড় করাতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়৷ অনেক সময় পাওয়া যায় না৷ সব মিলিয়ে সরকারি অনুদান ৩০ লাখ টাকার মতো৷ যেখানে প্রতি মাসে স্টাফদের বেতন-ভাতা দিতে হয় দুই লাখ টাকার বেশি, সেখানে এই টাকায় কিছুই হয় না৷ আমরা স্পন্সর থেকে যে টাকা পাই সেগুলো দিয়ে কোনোরকমে খেলা চালাই৷ আমি যদি ফেডারেশনকে ভালোভাবে চালাতে চাই, তাহলে অনেক টাকা লাগবে৷ বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা সম্ভব নয়৷ সরকার থেকে আমাদের প্রশিক্ষণের খরচ এবং আবাসন খরচ দিলে হ্যান্ডবল উন্নতি করবে৷ যদিও সবগুলো ফেডারেশনকে টাকা দিতে পারবে না সরকার৷ সেটা করতে হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খেলা বাছাই করতে হবে৷’’

এ এস এম হায়দার, বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন
এ এস এম হায়দার, বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনছবি: privat

টেনিস বিশ্বে দামি এবং জনপ্রিয় খেলা হলেও বাংলাদেশে এ খেলার বিশেষ  কদর নেই৷ কারণ, আন্তর্জাতিক সাফল্য নেই বললে চলে৷ অথচ এই ফেডারেশনের দারুণ কিছু কোর্ট রয়েছে দেশজুড়ে৷ ঢাকার রমনা টেনিস কমপ্লেক্স মূল্যবান সম্পদ হলেও এর সুবিধা নিতে পারছে না ফেডারেশন৷ স্থায়ী আয়ের পথ না থাকায় কর্মকর্তাদের কেউ কেউ নিজেদের গাঁটের টাকা খরচ করে খেলা চালান৷ বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম হায়দারের দাবি, বিগত সময়ে আয়-ব্যয়ের কোনো হিসেব উপস্থাপন কারা হতো না৷ সম্প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর অডিট করে তা সরকারি কর্তৃপক্ষ এবং নির্বাহী কমিটিতে উস্থাপন করা হয়৷ তার দাবি, ‘‘আমরা স্পন্সর থেকে টাকা বাঁচিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছি৷ বিদেশি কোচ নিয়োগ দিয়েছি৷ এনএসসিকে অনুরোধ করেছি টেনিসের আয়ের জন্য স্থায়ী একটা অবকাঠামো করে দেওয়ার জন্য, যেহেতু আমাদের একটা বড় জায়গা রযেছে৷ আমাদের কিছু টুর্নামেন্টে আন্তর্জাতিক সাফল্য পেলে স্পন্সর পাওয়া সহজ হবে৷ এখন আমাদের খরচ আকাশ-ছোঁয়া৷ কারণ, দল বিদেশে খেলতে যাচ্ছে৷ দেশে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে৷ এই টাকা কোথায় পাবো জানি না৷ আমার ব্যবসায়ী বন্ধুদের কাছ থেকে স্পন্সর নিয়েছি৷ আমাদের মন্ত্রী মহোদয় (শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী-ফেডারেশনের সভাপতি) কিছু স্পন্সর আনছেন৷ এভাবে আমরা চালিয়ে নিচ্ছি৷’’

অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার, টেনিস বা হকি স্পন্সর থেকে আয় করে খেলা চালাতে পারলেও কুস্তি, বক্সিং, জুডো, কারাতে, শরীর গঠন, রাগবি, বাস্কেটবল, উশুর মতো ‘ভাসমান' ফেডারেশনগুলোর কার্যক্রম চলে নামে মাত্র৷

কুস্তি ফেডারেশনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন আজাদের বক্তব্য হলো, ‘‘সরকারি অনুদান পাই বছরে ৫ লাখ টাকা, যা দিয়ে অফিস খরচ বহন করা হয়৷ খেলা চালাই কিছু স্পন্সর এনে৷ শুধু বছরে একটা-দুটা ইভেন্ট করা যায়, এর বেশি কিছু করার সুযোগ থাকে না৷ কারণ, স্পন্সরদের কাছেও আমাদের গুরুত্ব কম৷ ভেন্যু নেই, থাকার জায়গা নেই৷ অন্যের জায়গায় ইভেন্ট করতে হয়৷ শুধু  রেসলিং না, আমাদের মতো যে সকল ফেডারেশন আছে সবগুলো একই রকম৷ আমরা কোনোরকমে আছি৷ স্পন্সর হলে খেলা চলে৷ না পেলে চলে না৷’’

এত শূন্যতার মাঝেও আশার আলো ছড়ায় কিছু কিছু খেলা৷ আর্চারি, স্যুটিং তার অন্যতম৷ দক্ষিণ এশিয়া এবং কমনওয়েলথ গেমস থেকে মাঝে মধ্যে পদক উপহার দেয় দেশকে৷

এই জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে প্রতিটি ফেডারেশন চায় বিকেএসপিতে তাদের খেলাটি অন্তর্ভুক্ত করতে৷ ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কিছু কিছু খেলা প্রতিষ্ঠানটিতে সংযোজন করেছেও৷ দেশের এই ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর ভালো মানের কিছু খেলোয়াড় সৃষ্টি হলেও ধরে রাখা যাচ্ছে না৷ আন্তর্জাতিক গেমসে অংশগ্রণ করতে গিয়ে উন্নত জীবনের আশায় পালিয়ে অবৈধ শ্রমবাজারে ঢুকে পড়ছেন তারা৷ ১৯৯৩ সালের সাফ গেমসের দ্রুততম মানব বিমল চন্দ্র তরফদার, স্বর্ণজয়ী সাঁতারু কারার মিজান যেমন অ্যামেরিকায় পালিয়েছিলেন৷ একক গেমসগুলোতে খেলোয়াড়দের উপার্জনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় সম্ভাবনাময় আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটদের উন্নত বিশ্বে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা এখনও থেমে নেই৷

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আছে: সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বেহাল দশা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন বাংলাদেশ অলিম্পক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)-র মিডিয়া কমিটির সদস্যসচিব সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, ‘‘আমি সংগঠক হিসেবে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করেছি৷ অন্য  খেলায় যখন যুক্ত হলাম, তখন ভিন্ন চিত্র দেখলাম৷ সম্প্রতি আমি ইসলামি সলিডারিটি গেমসে শেফ দ্য মিশন হয়ে গিয়েছিলাম৷ ১০০ অ্যাথলেট অংশগ্রহণ করেছিল৷ ওখানে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, ক্রিকেট ছাড়া দেশের বাকি ফেডারেশন লক্ষ্যহীন৷ আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ নেই৷ সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছুই নেই৷ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাব আছে৷ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নজরদারি নেই৷ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন চাইলেও কিছু করতে পারে না৷ শুধু গেমসগুলোতে কিছু আর্থিক বরাদ্দ দিয়ে থাকে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে যে ইভেন্টগুলোতে কিছু পদক পাই, সেগুলো হাতে গোনা পাঁচ ছয়টি-আর্চারি, স্যুটিং, কারাতে, তাইকোয়ান্দো৷ কমনওয়েলথ লেভেলেও কিছু সফলতা আছে৷ বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ সুবিধা একেবারে নেই৷ দেশের কোথাও স্পোর্টস সেন্টার তৈরি করা হয়নি৷’’

সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘‘বিকেএসপিতে সুযোগ-সুবিধা আছে, কিন্তু কোচিং স্টাফ ভালো মানের না৷ যারা খেলে, তাদের প্রধান লক্ষ্য থাকে জাতীয় পর্যায়ে একটি পদক জিতে বাহিনীগুলোতে চাকরি নেওয়া৷ এরপর তারা শুধু জাতীয় পর্যায়ে পদকের জন্য খেলে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাওয়ার জন্য যা যা করতে হবে সে চেষ্টা থাকে না৷ অথচ অনেক প্রতিভা আছে, তাদের আধুনিক সুযোগসুবিধা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদ পাওয়া যাবে৷ যারা এশিয়ান মানেও ভালো করতে পারবে৷''

‘‘ফেডারেশনগুলো চলছে পেটে ভাতে৷ তারা জাতীয় পর্যায়ের একটি টুর্নামেন্ট করে, বিদেশে খেলা থাকলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে কিছু টাকা নিয়ে যায়৷ কোচদের কেউই আন্তর্জাতিক মানের না৷ বিশ্বের সব দেশ যেখান তিন বছর আগে থেকে একটি গেমসকে টার্গেট করে প্রশিক্ষণ দেয় সেখানে বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ শুরু হয় একমাস আগে৷ ক্রিকেট ছাড়া বাংলাদেশের বাকি কোনো স্পোর্টস ফেডারেশেনের অবকাঠোমা নেই৷ আর্থিক সক্ষমতাও নেই৷''

তিনি মনে করেন এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার একটাই পথ- ভারতের মতো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু খেলাকে মোটা অংকের টাকা রাষ্ট্রকে দিতে হবে এবং দেশে আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে৷

এদিকে খেলোয়াড়রা মনে করেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা একযোগে স্পন্সরের জন্য কাজ করলে এবং আর্থিক সক্ষমতা বাড়লে বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হবে৷

আল আমিন, বক্সার
আল আমিন, বক্সার ছবি: Privat

অ্যাথলেট মো. ইসমাইলের মতে, ‘‘সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী থেকে যারা খেলেন তারা প্রথমে সৈনিক তার পর খেলোয়াড়৷ এই বাহিনীগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না৷ অ্যাথলেটিক্সে উন্নতি করতে হলে ফেডারেশনকে খেলোয়াড় তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে৷ এজন্য স্পন্সর আনতে হবে৷ ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের বড় বড় কোম্পানিগুলোর কাছে যেতে হবে৷ কর্মকর্তাদের সবাইকে কাজ করতে হবে স্পন্সর আনার জন্য৷ তা না হলে আমাদের পিছিয়েই থাকতে হবে, কারণ আর্থিক কারণে ক্যাম্প করাতে পারে না বা খেলোয়াড়দের পুষতে পারে না৷ ক্রিকেট বোর্ড আগে কেমন ছিল এখন কোথায় গেছে! তাই সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীর দিকে তাকিয়ে না থেকে ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের একযোগে স্পন্সরের জন্য কাজ করতে হবে৷’’

বক্সার আল আমিন বলেন, ‘‘বক্সিং ফেডারেশন যে খেলাগুলো আয়োজন করে তা অ্যামেচার৷ এখান থেকে পদক প্রাপ্তি ছাড়া কোনো লাভ নেই৷ ফেডারেশন বক্সিংকে পেশাদার কাঠামো দিতে পারলে ভবিষ্যতে কিছু হতে পারে৷ তার জন্য টাকা লাগবে৷ আর টাকা আসবে স্পন্সর থেকে৷ এখানে যেটা নেই বললেই চলে৷''

কারাতে খেলোয়াড় হুমায়রা অন্তরা বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কারাতের মতো খেলাকে পেশা হিসেবে নেয়ার সুযোগ নেই৷ খেলাটা শখ হিসেবে নিলে খেলে আনন্দ পাওয়া যাবে৷ আমি স্টুডেন্ট, লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলি৷ বাংলাদেশ দলে খেলার কারণে আনসারে চাকরি পেয়েছি, মাসে মাসে চলার মতো ভাতা পাই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য