1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইন্দিরা গান্ধীর স্মৃতি ফেরালেন প্রিয়াঙ্কা

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

‌পুরোনো কংগ্রেস কর্মীরা তাঁর মধ্যে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে খুঁজে পাচ্ছেন৷ তাঁর আগমনে দল যেন নতুনভাবে উদ্বুদ্ধ৷ সমাজের উচ্চবর্ণ তাঁকে ভাবছে আপনজন৷তবে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর পাস-‌ফেল নির্ভর করছে নির্বাচনি ফলাফলে৷

https://p.dw.com/p/3DHrN
Indien Priyanka Gandhi
ছবি: picture-alliance/AP Photo/R.K. Singh

‌ বিগত এক দশক ধরে দলের অন্দরে ব্যাপক চাহিদা ছিল প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে সক্রিয় রাজনীতিতে নামানোর৷কিন্তু পারিবারিক কারণে তা হয়ে ওঠেনি৷ এখন ছেলেমেয়েরা অনেকটা বড় হয়েছে৷ মা সোনিয়া গান্ধী প্রায়শই অসুস্থ থাকছেন৷ দাদা রাহুল গান্ধী দলের সভাপতির গুরু দায়িত্ব বহন করছেন৷ তাই রাজনীতির অমোঘ টান আর উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি৷ তাঁর শাড়ি, চওড়া হাসি, কব্জির ঘড়ি, কেশবিন্যাস, মঞ্চে বাচনভঙ্গি, এমনকি করজোড়ের কায়দা অনেককেই অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়৷ মনে করিয়ে দেয় ঠাকুরমা ইন্দিরা গান্ধীর কথা৷

সম্প্রতি লখনউ শহরে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ জুড়ে ‘‌রোড-‌শো'-‌তে কয়েক দশক আগের প্রিয়দর্শিনীকে (‌‌ইন্দিরা গান্ধী)‌ চাক্ষুষ করল আম জনতা৷ জনসমুদ্র আছড়ে পড়েছে লখনউয়ের সড়কে৷ লখনউ বিমানবন্দর থেকে নেহরু ভবন, প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যালয়ের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার৷ এই পথ পার হতে বড়জোর মিনিট চল্লিশ সময় লাগে, প্রিয়াঙ্কার র‌্যালি সেই পথ পার হতে সময় নিয়েছে প্রায় ছয়‌ ঘণ্টা৷ পথের দু' ‌পাশ থেকে স্লোগান ভেসে আসছিল, ‘‌‘‌আ গ্যায়া বদলাওকি আঁধি, রাহুল সঙ্গ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী৷'‌'

‌রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘‌‘‌প্রিয়াঙ্কাকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আনা হয়েছে শুধু লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি'‌কে পরাস্ত করার জন্যই নয়, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের মতাদর্শের মুখ্যমন্ত্রী চাই৷'‌'‌ স্বভাবতই বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছে কংগ্রেস৷ উজ্জীবিত কর্মীরা৷

‘শুধুমাত্র কারো মতো দেখতে বলেই রাজনীতিতে বাজিমাত করা যাবে ভাবার কোনো কারণ নেই’

নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, প্রিয়াঙ্কা কি সত্যিই কংগ্রেসের হারানো জমি ফিরিয়ে দিতে পারবেন? নিখুঁত জবাব মিলবে মাস দেড়-‌দুই পরে, নির্বাচনের ফল ঘোষণা হলে৷ তবে ইন্দিরা-সদৃশ চেহারা অথবা ইন্দিরার নাতনি বলেই রাজনীতিতে ‘মিরাকল' ঘটিয়ে ফেলবেন তিনি, এমনটা মনে করছেন না অনেকেই৷ অভিনেত্রী, তথা ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ রূপা গাঙ্গুলী তাঁদের মধ্যে একজন৷

তাঁর মতে, ‘‌‘‌ওঁর স্বামীকেই বেশি মানুষ চেনেন৷ ওঁদের বিরুদ্ধে পারিবারিকভাবে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আছে, মানুষ সেসব জানেন৷ ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে সবাই সব খবর পায়৷ ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে চেহারার মিল থাকলে রাজনীতির সঙ্গে কী সম্পর্ক৷ আগেকার দিনে অভিনেত্রীরা বিয়ের পর তাঁদের কদর কমে যাওয়ার ব্যাপার ছিল৷ তখন জনপ্রিয়তায় চেহারা গুরুত্ব পেতো৷ এখন শুধুমাত্র কারো মতো দেখতে বলেই রাজনীতিতে বাজিমাত করা যাবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই৷ রাজনীতি এত সহজ নয়৷'‌'‌

ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তরপ্রদেশে মোট ৮০টি লোকসভা কেন্দ্র৷ পূর্বীয় উত্তরপ্রদেশে ৪০টি, পশ্চিমে ৪০টি৷ এই দুই ভাগের দায়িত্ব পেয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া৷  প্রিয়াঙ্কা যে অংশের দায়িত্ব পেয়েছেন,তার মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনি কেন্দ্র বারাণসি এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গোরখপুরের মতো কেন্দ্র৷ একদা কংগ্রেসের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত ছিল রাজ্যের পূর্ব ভাগ৷ এখান থেকেই জয়ী হয়েছেন জওহরলাল নেহরু, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীরা৷ এ পর্যন্ত দেশের ৭ জন প্রধানমন্ত্রী এসেছেন এই রাজ থেকে৷ কিন্তু গত কয়েক দশকে সেই হিসেব বদলেছে৷ রাজ্যে এখন কংগ্রেসের গড় ভোট ১০ শতাংশে এসে ঠেকেছে৷ এমন একটা পরিস্থিতি থেকে দলকে ঘুরে দাঁড় করাতে শুধুই গ্ল্যামার বা ইন্দিরার স্মৃতি উসকে দেওয়া যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন অনেকে৷ প্রয়োজন সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত রণকৌশল৷

‘প্রিয়াঙ্কার জনসমর্থন আসবে সুনামির মতো’

কংগ্রেস নেতারা সংগঠন এবং উপযুক্ত রণকৌশলের কঠিন, কঠোর পরিধি মাড়াতে চাইছেন না৷ তাঁরা ভরসা রাখছেন ‘‌প্রিয়াঙ্কা ম্যাজিক'‌-‌এর ওপর৷ কেউ বলছেন, প্রিয়াঙ্কা সুনামির মতো জয় নিয়ে আসবেন৷ কেউ বলছেন, প্রিয়াঙ্কা মাঠে নামলে জনপ্লাবনে ভেসে যাবে বিরোধীরা৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ঘনিষ্ঠ বাংলার নেতা শুভঙ্কর সরকারও তাই মনে করেন৷

তাঁর কথায়, ‘‌‘‌‌প্রিয়াঙ্কাকে কেউ আঁধি বলছেন, কেউ তুফান বলছেন৷ রাহুল গান্ধী তাঁকে সামনে এনে আসলে মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তুলতে চাইছেন৷ লক্ষ্য শুধু লোকসভা নির্বাচন নয়৷  আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা আশির দশকের সেই ইন্দিরা জমানার উত্তরপ্রদেশ ফিরিয়ে দেবেন৷ সুপ্রিম কোর্ট, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সিবিআই, ইডি-‌সহ সব সংস্থা ধুলিসাৎ হয়ে গেছে৷ উত্তরপ্রদেশ-‌সহ গোটা ভারত প্রিয়াঙ্কার হাত ধরে আলোর দুনিয়ায় পৌঁছতে চাইছেন৷ বিরোধীরা ভয় পেয়েছে৷ প্রিয়াঙ্কার জনসমর্থন আসবে সুনামির মতো৷ মানুষের আঁধি আসবে৷ তাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাহুল৷'‌'