ইরানে নারীর ভোটাধিকারের পঞ্চাশ বছর
১৯৬৩ সালে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলাভি’র আমলে তৎকালীন ‘সাদা বিপ্লব’ এর আওতায় আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের নারীদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়৷
‘সাদা বিপ্লব’
গত পঞ্চাশ বছর ধরে ভোটদানের ক্ষমতা রয়েছে ইরানের নারীদের৷ ১৯৬৩ সালে শাহ মোহাম্মদ পাহলাভির মেয়াদকালে এই অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়৷ সেবছরের ২৬ জানুয়ারি গণভোটের মাধ্যমে এটি অনুমোদন করা হয়৷ প্রথমদিকে এই ‘সাদা বিপ্লবের’ প্রতি জনগণের সমর্থন ছিল৷
ধর্মীয় নেতাদের তরফ থেকে বাধা
১৯৬৩ সালের মাঝামাঝি নারীর ভোটাধিকারসহ বিভিন্ন সংস্কার বাধার মুখে পড়ে৷ ইরানের ধর্মীয় নেতারা সাদা বিপ্লবের বিরোধিতা করেন৷ সেসময় রাজনীতির ময়দানে আয়াতোল্লা খোমায়েনির উত্থান ঘটে৷ তবে সরকার বিরোধীদেরকে কঠোর হাতে দমন করা শুরু করলে নির্বাসনে চলে যান তিনি৷
কয়েক দশকের সংস্কার
শাহ পাহলাভির চার দশকের শাসনকাল, মানে ১৯৪১ থেকে ১৯৭৯ সাল অবধি ইরানের নারীরা অনেক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন৷ এগুলোর মধ্যে সন্তানের দায়িত্ব গ্রহণের অধিকার এবং বিয়ের জন্য মেয়েদের নূন্যতম বয়সসীমা, ১৮ বছর৷ তারা সেসময় বিবাহবিচ্ছেদ এবং গর্ভপাতের অধিকারও পায়৷ অন্যদিকে, পুরুষের বহুবিবাহের প্রথা সীমিত করা হয়৷
ইসলামি বিপ্লবের ফলাফল
১৯৭৯ সালে শাহকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা হয়৷ সেসময় ইরানের নারীরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন৷ শাহ’র পতনের পর পরই প্রগতিশীল নারী অধিকার বিষয়ক আইনগুলো বাতিল করা হয়৷ নারীদের বিবাহবিচ্ছেদ এবং সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার অধিকার সঙ্কুচিত করা হয়৷ মেয়েদের বিয়ের নূন্যতম বয়স আবারো নয় বছর করে দেওয়া হয়৷ পুরুষকে ইচ্ছেমত বহুবিবাহের সুযোগ দেওয়া হয়৷
চাপ সত্ত্বেও এগনোর চেষ্টা
আইনিভাবে কম অধিকার থাকা সত্ত্বেও অনেক ইরানি নারী তাদের স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার চেষ্টা করেছেন, বিশেষ করে চাকুরির ক্ষেত্রে৷ যেসব কাজে সাধারণত পুরুষদের আধিপত্য থাকে, সেসব কাজও করছেন ইরানের মেয়েরা৷ আজকাল ইরানের নারীরা ট্যাক্সি এমনকি দূরপাল্লার ট্রাকও চালাচ্ছেন৷ তারা এখন শিক্ষক, চিকিৎসক, পুলিশ, সাংসদ এমনকি রাষ্ট্রপতির পরামর্শকও হচ্ছেন৷
মোহাম্মদ খাতামিকে সমর্থন
১৯৯৭ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন নারী এবং তরুণ সমাজ৷ তারাই সংস্কারপন্থী মোহাম্মদ খাতামিকে ক্ষমতায় আনেন৷ প্রথমবার জয়ের পর নারীদের সংগঠন ও ক্লাব তৈরির ক্ষেত্রে যে আইনি বাধা ছিল, তা শিথিল করেন খাতামি৷
নারী অধিকারের প্রতীক
ইরানে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে শিরিন এবাদির নাম৷ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ২০০৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয় করেন৷ ২০০৯ সালের শেষ অবধি ইংল্যান্ডে নির্বাসিত জীবন কাটান এবাদি৷ ইরান এবং ইরানের বাইরে অনেকে ‘আইকন’ হিসেবে বিবেচনা করেন এই আইনজীবী তথা অ্যাক্টিভিস্টকে৷
সবুজ আন্দোলনের দোসর
ইরানে নারীর সমানাধিকারের দাবিতে ২০০৬ সালে একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, যেখানে দশ লাখ মানুষের স্বাক্ষর আহ্বান করা হয়৷ সেই উদ্যোগের সূত্র ধরে ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সবুজ আন্দোলন গড়ে তোলা হয়৷ তখন নারীর সমানাধিকারের দাবিতে রাস্তায় নামে পুরুষরাও৷
‘আমার কণ্ঠ কোথায়?’
সবুজ আন্দোলনের সমর্থকরা ইরানের সংস্কারপন্থী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মির-হোসেন মুসাভিকে সমর্থন জানায়৷ কিন্তু অত্যন্ত বিতর্কিত নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায় পুর্ননির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদ আহমেদিনেজাদ৷ সেসময় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে হতাশ নারী-পুরুষরা৷ তারা ‘হোয়্যার ইজ মাই ভয়েস?’ শীর্ষক ব্যানার এবং শ্লোগানে তেহরানের রাজপথ ভরিয়ে ফেলে৷
আশা আছে?
চলতি বছরের জুন মাসে ইরানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আশাবাদী হয়ে উঠছেন ইরানের নারী অধিকার বিষয়ক অ্যাক্টিভিস্টরা৷ আগামী নির্বাচনকে তারা আবারো নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজে লাগাতে চান৷ এই লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছে সুনির্দিষ্ট দাবি৷ সেসব দাবির ভবিষ্যত অবশ্য সময়ই বলে দেবে৷