1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইসলাম কি জার্মানিকে বদলে দিচ্ছে?

২৩ জুলাই ২০১৭

জার্মানিতে ৪০ লাখেরও বেশি মুসলিম বাস করে৷ তাঁরা কি এই দেশটিকে বদলে দিচ্ছে৷ যদি দেয়, তাহলে সেটা কীভাবে? ডয়চে ভেলে এর উত্তর খুঁজেছে জার্মানির সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কোলন এবং এর আশেপাশের এলাকায়৷

https://p.dw.com/p/2gyH0
Köln Muslimische Demonstration gegen Terror
ছবি: DW/S. Niloy

২০১৫ সালে প্রায় ১০ লাখ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেয়ার পর, জার্মানিজুড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তুতে পরিণত হয় ইসলাম৷ বিশেষ করে দেশটির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়ার অন্যতম শহর কোলন এবং তার আশেপাশের এলাকায়৷ জার্মানিতে থাকা প্রায় ৪০ লাখ মুসলিমের ১৪ লাখের বাস এই রাজ্যে৷

আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জার্মানির সংসদীয় নির্বাচন উপলক্ষ্যে দেশটির ছয়টি বড় শহরে নানা প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি হন ডয়চে ভেলের দুই প্রতিবেদক নিনা হাসে এবং সুমি সমাস্কান্দা৷ তাঁদের মতে, এবারের নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনার সময় সবচেয়ে কঠিন ছিল ইসলাম নিয়ে কথা বলা৷  

ইসলাম জার্মানিকে ধারণ করে কিনা – এই প্রশ্ন উঠলেই ছড়িয়েছে, ছড়াচ্ছে উত্তাপ, জমে উঠছে আলোচনা৷ অনেকে এটাকে ‘শান্তি ও সহিষ্ণুতার' ধর্ম হিসেবে দেখেন৷ অনেকে আবার এটাকে মনে করেন, ‘ঘৃণার বাহক' বলে৷ কারো কারো কাছে রাস্তায় চলা নারীদের স্কার্ফ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার অংশ৷ আবার কারো মতে, এটা নিপীড়নের প্রতীক৷

জার্মানির মুসলমানরা ইসলামের নানা ধারার প্রতিনিধিত্ব করে৷ এই রাজ্যেও একই অবস্থা৷ জার্মান সংস্কৃতির কেন্দ্র কোলন শহরে গত মাসে নতুন একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ উদ্বোধন হয়৷ অটোমান তুর্কীদের ধাঁচে নির্মিত এই মসজিদের গ্লাস ও পাথরে চকচক করে৷ ৫৫ মিটার উঁচু মিনার জানান দিচ্ছে মসজিদের অস্তিত্ব৷ তারকা খচিত মসজিদের ভেতরটায় একত্রে হাজারেরও বেশি মানুষ নামাজ পড়তে পারেন৷

এই মসজিদটি অনেক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে৷ কোলনের প্রধান গির্জার গম্বুজ শতাব্দীর পর শতাব্দী আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷ সেই আকাশে ভাগ বসাবে মিনার – এটা যেন মানতে পারছিলেন না অনেক খ্রিষ্টান নেতা৷

তাই এই স্থাপনা নিয়ে নগরের প্রধান স্থপতির দপ্তরকে রাজি করাতে টার্কিশ-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ারকে (ডিআইটিআইবি) বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে৷ জার্মানিতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ডিআইটিআইবি৷ এটি তুরস্ক সরকারের ধর্ম বিষয়ক কর্তৃপক্ষের অংশ৷ দলটিকে ঘিরে সম্প্রতি তুরস্ক-জার্মানির সম্পর্ক অবনতি হয়েছে৷ দলটির বিরুদ্ধে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের স্বার্থে কাজ কাজ করার অভিযোগ রয়েছে৷ আন্তঃধর্মীয় জীবন এখানে কতটা জটিল-এটা যেন সেটারই একটা চিত্র৷

পরিসংখ্যানের অধ্যাপক ও পরামর্শক ইউসেফ এল ওয়াদুদী বাস করেন কোলনে৷ তিনি মরোক্কো থেকে ১৮ বছর আগে জার্মানিতে আসেন৷ এরপর এখানে এসে তিনি একজন ভিন্নধর্মী নারীকে বিয়ে করেন৷ পালন করতে থাকেন সংসার-ধর্ম৷ তাঁর মুসলিম পরিচয় এখন অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে৷ গতানুগতিক ছাঁচ এবং পক্ষপাতিত্বে ইসলামকে ঘিরে থাকা রাজনৈতিক ডিসকোর্স ক্রমেই দূষিত হয়ে যাচ্ছে বলে তাঁর মত৷

তিনি বলেন, সমস্যা হচ্ছে, সব ধর্মই মনে করে, সেই একমাত্র সত্য৷ মানুষ ধর্মকে বিভিন্নভাবে দেখে৷ যেমন কালো চুলের একজন মানুষ মানেই মনে করা হয়, তিনি মুসলিম৷ সুতরাং মুসলিম যদি কারো শত্রু হয়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে চিনুক না চিনুক, কালো চুল দেখলেই শত্রু মনে করা হয়৷ আপনি ধার্মিক কিনা, সেটা বিষয় নয়, এই সামাজিক সমস্যা আমাদের সবার জীবনকে প্রভাবিত করছে৷''

এল ওয়াদুদীর আশেপাশে হাত বাড়ালেই মরোক্কান দোকান, রেস্তোরাঁ এবং মসজিদ; যেখানে অধিকাংশ মানুষই রক্ষণশীল৷ তাঁর মতে, মুসলমানদের ভেতরের সমস্যাটাও গভীর৷ এর ফলে নিজস্ব কমিউনিটির ভেতরেও গঠনমূলক সংলাপ হয় না৷

উদার এবং রক্ষণশীল মুসলমানদের মাঝেও খুবই কম যোগাযোগ হয়, তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বললেও ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থেকে যায়৷ এটার সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে, ইসলামের বিভিন্ন শাখার মধ্যে একটা আলোচনার সূত্রপাত করা৷

অন্যদিকে রক্ষণশীল মুসলমানরাও বলছেন, তাঁরা সংলাপের জন্য প্রস্তুত৷

যদিও তরুণ মুসলিমদের মাঝে ইসলামিক উগ্রপন্থার বিস্তারের ফলে একটা আশঙ্কার কালো মেঘ জমা হয়েছে৷ ভায়োলেন্স প্রিভেনশন নেটওয়ার্কের মতে, কেবল নর্থ-রাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যেই উগ্র সালাফিদের আক্রমণের পরিমাণ ২০১৫ সালে ৩০০ ছিল, যা পরের বছর দ্বিগুণ হয়ে গেছে৷

বনের পাশেই বাড গোডেসবার্গ আল-আনসার মসজিদের ইমাম আবদেলকাদের ইজেইম বলেন, যে সব রক্ষণশীল মুসলিম তাঁদের পছন্দসই বিশ্বাসকে আঁকড়ে বাঁচতে চায়, এই ধারা খুব গভীরভাবে তাদের জীবনকে প্রভাবিত করেছে৷

তিনি বলেন, এ সব ঘটনায় অনেক নেতিবাচক চিত্র তৈরি হয়েছে৷ অনেক মুসলিম রয়েছে, যারা আমাদের সম্মিলিত ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়েছে৷ ফলে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে য, মুসলিম এবং ইসলাম এ রকমই৷ আমরা এই সব উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করছি৷ জার্মানদের দেখাতে চাই, এটা বাস্তবতা নয়৷ ভালো ভালো কাজ করাই ইসলামের মূল শিক্ষা৷ অন্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলাম ও মুসলিমদেরকে ভয় করা উচিত নয়৷ কারণ ইসলাম শান্তির ধর্ম৷ সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷

কোলনে লিবারেল ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে এর সংগঠক আনিকা মেহমেতি বলেন, তরুণ মুসলিমরা আধুনিক পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামের মতামত জানতে চায়৷ যেমন সমকামিতা ইসলামে বৈধ কিনা, খ্রিষ্টান ছেলে-বন্ধু রাখা যাবে কিনা ইত্যাদি৷

মেহমেতি বলেন, এখানে ৪ মিলিয়ন মুসলিম বাস করেন৷ তাঁরা সবাই বিভিন্নভাবে তাদের ধর্ম এবং সংস্কৃতি পালন করেন৷ তাঁদের জীবনও আলাদা৷ আরো বড় পরিসরে চিন্তা করলে একটা খোলামেলা এবং আন্তরিক সংলাপ সম্ভব৷

জার্মানির উচিত, ইসলামকে তাঁদের দেশের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা৷ এটা জার্মানিকে আরো উন্মুক্ত এবং সহিষ্ণু সমাজ উপহার দেবে, বলেন মেহমেতি৷ তাঁর কথায়, ‘‘কিছু কিছু মানুষ এটাকে দূরে ঠেলে দেয়৷ তাঁরা বলে, এখানে ইসলামের কোনো অস্তিত্ব নেই৷ কিন্তু তাঁরা বাস্তবতায় নেই৷ ইসলাম এখানে রয়েছে এবং সেটা একটা ভালো বিষয়৷ অবশ্যই ইসলামের উচিত অন্য ধর্ম এবং গণতন্ত্রের সাথে একই সমতলে এখানে অবস্থান করা৷''

বলেন, ‘‘ইসলাম ও মুসলিমরা জার্মানিকে ধারণ করে না – আমি এটা আর শুনতে চাই পারছি না৷''

নিনা হাসে, সুমি সমাস্কান্দা/এসএন/ডিজি

আসলেই কি ইসলাম জার্মানিকে বদলে দিচ্ছে? মন্তব্য লিখুন নিচের ঘরে৷