1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উত্তরপ্রদেশে মাঝরাত পর্যন্ত পণবন্দি ২৩টি শিশু

৩১ জানুয়ারি ২০২০

মধ্যরাত পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে পণবন্দি করে রাখা হল শিশুদের। পরে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় দুষ্কৃতীর। শিশুরা সুরক্ষিত।

https://p.dw.com/p/3X4yy
ছবি: Reuters

না, এ কোনও হলিউডের সিনেমা নয়। কোনও জঙ্গি সংগঠনের কাজও নয়। বৃহস্পতিবার ভারতের উত্তরপ্রদেশে ৮ ঘণ্টা ধরে পণবন্দির যে ঘটনা ঘটল, তা চমকে দিয়েছে সকলকে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরপ্রদেশের কাসারিয়া গ্রামে এক দম্পতি স্থানীয় শিশুদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন। বলা হয় জন্মদিন উপলক্ষে শিশুদের খাওয়ানো হবে। বিকেল থেকেই একে একে সেই বাড়িতে ভিড় জমায় ছোটরা। কিন্তু খানিকক্ষণের মধ্যেই বদলে যায় চিত্রনাট্য। বাড়ির দরজা বন্ধ করে সুভাষ বাথাম নামক ওই ব্যক্তি ঘোষণা করেন, তিনি শিশুদের পণবন্দি করলেন। তাঁর দাবি না মেটা পর্যন্ত তিনি শিশুদের ছাড়বেন না। রীতিমতো আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে বাড়ির সামনে জড়ো হওয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের তিনি জানিয়ে দেন কেউ বাড়ির ভিতর ঢোকার চেষ্টা করলে শিশুদের গুলি করা হবে। শুধু তাই নয়, বোমা দেখিয়ে তিনি হুমকি দেন, শিশুদের রেখে ওই বাড়ি উড়িয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তখনও জানা যায়নি, ওই ব্যক্তির দাবিগুলি কী?

ঘণ্টাখানেক এ ভাবে চলার পরে একটি এক বছরের শিশুকে বাড়ির বারান্দা থেকে জনতার হাতে তুলে দেন সুভাষ। সঙ্গে একটি ছাপানো দাবিপত্র। তাতে বলা হয়, গরিব মানুষের জন্য ভারত সরকার যে আবাসন এবং শৌচাগারের যোজনা ঘোষণা করেছে, তিনি তার দাবিদার হলেও সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সে জন্যই শিশুদের পণবন্দি করা হয়েছে।

ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাজ্যের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। সুভাষের সঙ্গে কথাও বলতে শুরু করেন তাঁরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ দাবি করে আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে। কিন্তু মাঝ রাত পেরিয়ে যাওয়ার পরেও শিশুদের মুক্ত করতে না পেরে গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে শুরু করে। এ দিকে রাজ্য সরকার জানায় প্রয়োজনে এনএসজি কম্যান্ডোদের সাহায্য নিয়ে শিশুদের উদ্ধার করা হবে।

রাত ১২টার পরে অপারেশন শুরু করে পুলিশ। গ্রামবাসীদের সাহায্যে অতর্কিতে ভেঙে ফেলা হয় দরজা। ভিতর থেকে এলোপাথারি গুলি ছুড়তে শুরু করে সুভাষ। পাল্টা জবাব দেয় পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশের গুলিতে নিহত হয় সে। ভিতর থেকে ২৩টি শিশুকে উদ্ধার করে গ্রামবাসীরা।

পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করে সুভাষের স্ত্রী। কিন্তু বাড়ির অদূরেই গ্রামবাসীরা তাকে ধরে ফেলে। অভিযোগ, তাকে পিটিয়ে মারা হয় সেখানেই। পরে পুলিশ ওই মহিলাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

উত্তরপ্রদেশের পুলিশ জানিয়েছে, সুভাষ দাগি আসামী। খুনের অভিযোগে এত দিন জেলবন্দি ছিল সে। কয়েক দিন আগেই প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিল। তার বাড়ি থেকে বন্দুক, পিস্তল, প্রচুর কার্তুজ, বোমা এবং বোমা তৈরির মশলা উদ্ধার হয়েছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে শিশুদের কোনও ক্ষতি হয়নি। ঘটনার পরে যোগী আদিত্যনাথের সরকার অপারেশনে থাকা প্রত্যেক পুলিশকে পুরস্কৃত করার কথা ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে তাঁদের বিশেষ শংসাপত্র দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

এ দিন উত্তরপ্রদেশের ঘটনায় স্তম্ভিত গোটা দেশ। অনেকেরই বক্তব্য, আরও আগেই শিশুদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। কারণ, যে ভাবে পুলিশ বাড়ির ভিতর ঢুকেছে, তাতে যে কোনও সময় অঘটন ঘটতে পারত। বাচ্চাদের ক্ষতি হয়ে যেতে পারত। ঘটনার পরে রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে, কী ভাবে দিনের পর দিন ওই বাড়িতে এত অস্ত্র মজুত করল সুভাষ? সিএএ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশ যে তৎপরতা দেখাচ্ছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেই তৎপরতা দেখানো হচ্ছে না কেন? কেন বেআইনি অস্ত্রের ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না উত্তরপ্রদেশে?

সরকারের অবশ্য বক্তব্য, অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে মাঝরাত পর্যন্ত অপারেশন চালিয়েছে পুলিশ। শিশুদের যাতে ক্ষতি না হয়, তার দিকে নজর রাখা হয়েছিল। তাই এই সময়ে এ সমস্ত প্রশ্ন তোলা অবান্তর।

এসজি/জিএইচ (এনডিটিভি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, পিটিআই)