1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উষ্ণায়ন গল্পকাহিনি নয়, কঠিন বাস্তব

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সচক্ষে ও ক্যামেরার চোখ দিয়ে উষ্ণায়ন প্রত্যক্ষ করেছেন এক জার্মান আলোকচিত্রী: একা গ্রিনল্যান্ডের উপকূলে ঘুরে বেরিয়েছেন, গ্রিনল্যান্ডের চিরতুষার কীভাবে গলছে, তাও দেখেছেন ও তার ছবি তুলেছেন৷

https://p.dw.com/p/2tBvT
ছবি: Olaf Otto Becker

ওলাফ অটো বেকার ২০০৩ সাল যাবৎ হিমশৈল আর হিমবাহের জগতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন – নিজের চোখে দেখেছেন, সেই আশ্চর্য জগত কীভাবে ধীরে ধীরে উধাও হচ্ছে৷ শতাব্দী শেষ হওয়ার আগে যদি বিশ্বের তাপমাত্রা পাঁচ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পায়, তাহলে বেকারের তোলা ছবিগুলো বাস্তবে আর দেখতে পাওয়া যাবে না৷

ওলাফ বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের কথা জানা থাকলে আর এ ধরনের একটা হিমশৈল দেখলে মনে হয়, হিমশৈলটা যেন গরমে ঘামছে! হিমশৈলের গায়ের গোটা বরফটাই ভেজা, আলোয় যেন চকচক করছে৷ চতুর্দিক থেকে পানি চুঁইয়ে সাগরে পড়ছে৷ তখন বোঝা যায়, কি তাড়াতাড়ি এই পরিবর্তন ঘটছে৷’’

উষ্ণায়ন কল্পকাহিনি নয়...

ওলাফ তাঁর ক্যামেরা নিয়ে গ্রিনল্যান্ডের গোটা পশ্চিম উপকূলে ঘুরে বেরিয়েছেন – একটি রাবারের ডিঙিতে ৪,০০০ কিলোমিটার যাত্রা করেছেন৷ এভাবেই তাঁর ‘‘ব্রোকেন লাইন’’ পর্যায়ের আলোকচিত্রগুলি সৃষ্টি হয়েছে৷ মুগ্ধ করার মতো সব ছবি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘হিমশৈল যখন পানির উপর ভাসে, তখন কাচ ঘষলে যেমন আওয়াজ হয়, তেমন একটা শব্দ শোনা যায়৷ হিমশৈলের নতুন কোনো অংশ ভেঙে পড়লে, বরফের টুকরোগুলো পানিতে ফুঁসিয়ে ওঠে, সোডা গ্যাঁজানোর মতো আওয়াজ হয়৷ এ যেন বরফের গান, সাথের গেলাসে শ্যাম্পেন৷’’

বড় ফরম্যাটের ছবি

ওলাফ অটো বেকার বড় ফরম্যাটের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলেন৷ ছবিগুলো দেখলে মনে হয় যেন পুরনো আমলের স্ট্যান্ড ক্যামেরা দিয়ে তোলা৷ ওলাফ বলেন, এ যেন চিত্রশিল্পীদের মতো খোলা আকাশের নীচে ইজেল খাড়া করে ছবি আঁকা৷ প্রতিটি ক্যাসেটে মাত্র দু'টি করে ছবি তোলার ব্যবস্থা আছে৷ কাজেই ওলাফকে মনের মতো দৃশ্য খুঁজে পাবার জন্য দিনের পর দিন ঘুরে বেড়াতে হয়৷ পরে ডার্করুমে ফিল্ম ডেভেলপ করার সময় কোনো ভুল হলে গোটা কাজটাই মাটি৷  

ওলাফ এককালে ছুতোর মিস্ত্রির কাজ করেছেন, গ্র্যাফিক ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেছেন – কিন্তু সে সব কাজে তাঁর মন বসেনি৷ তাই তিনি আইসল্যান্ড ও গ্রিনল্যান্ড সফরে যান৷ আজ তাঁর তোলা ছবি বিশ্বের অনেক বড় বড় মিউজিয়ামে ঝোলে৷

বিপদসঙ্কুল সব যাত্রায় ওলাফ সাধারণত কাউকে সাথে নেন না৷ একবার তিনি দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন – সেই কাহিনি শোনালেন তিনি:-

‘‘তখন প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ধরে আমি নৌকোতে একাই পথ চলেছি৷ রাত তিনটে বা চারটের সময় আমি খুব সম্ভবত সোজা উত্তরে যাচ্ছিলাম, যেদিকে সূর্য দিগন্তের উপর ঝুলে ছিল৷ সূর্যের আলোয় আমার চোখ ধাঁধিঁয়ে গিয়েছিল৷ তার পরেই সব কিছু অন্ধকার হয়ে গেল... কিছুক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরলে মনে হল আমার খুতনির কাছে ঠান্ডা, সুঁচলো কিছু একটা আছে – আর আমি ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারছি না৷ চোখ খুলে দেখি, বরফ৷ তখন বুঝলাম যে আমি একটা হিমশৈলের ওপরে এসে পড়েছি, আর আমার বোধহয় একটা কংকাসান হয়েছে৷ মাথা থেকে রক্ত পড়ছে, একটা পাঁজর ভেঙে গেছে, নৌকোটাও কোথায় ভেসে গেছে৷ চারপাশে কোথাও কেউ নেই৷’’

তবে প্রাণে বেঁচেছেন৷ কাজেই কাজ বন্ধ করার কোনো প্রশ্ন ওঠে না৷ দিনের পর দিন কোনো মানুষের দেখা নেই৷ কোনো সহযোগী নেই, নেই কোনো সময় কাটানোর পন্থা৷ এমনকি ফিল্মের ছবিগুলোও তিনি নিজেই তোলেন৷

বরফ গলছে...

গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরে চিরতুষারের উপর তিনি চারটি নদীর যাত্রাপথ উৎস থেকে সাগর পর্যন্ত ঘুরে দেখেছেন – উষ্ণায়নের নাটকীয় ফলশ্রুতি নিজের চোখে দেখার এর চাইতে ভালো জায়গা আর হতে পারে না৷ গ্রিনল্যান্ডে নাকি প্রতিবছর সাতাশ হাজার কোটি টন বরফ গলতে চলেছে!

ওলাফ জানালেন, ‘‘গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরে আমি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সঙ্গে তাদের মাপজোকের কেন্দ্র পর্যন্ত গেছি৷ বিজ্ঞানীরা সেখানকার তথ্য সংগ্রহ করে যা দেখেছেন, তা তাদের নিজেদের ভবিষ্যদ্বাণীকেও ছাড়িয়ে গেছে – এতো দ্রুত আর এতো বেশি পরিবর্তন ঘটেছে৷ দেখে বিজ্ঞানীরা নিজেরাই চমকে গেছেন৷’’

গ্রিনল্যান্ডে প্রতিবছর বরফ গলে যে পরিমাণ পানি সৃষ্টি হচ্ছে, তা দিয়ে গোটা জার্মানিকে মাটি থেকে এক মিটার উচ্চতা পর্যন্ত ঢেকে দেওয়া যায়৷ হিমশৈলগুলো গলে যাচ্ছে৷ ওলাফ অটো বেকারের ছবিগুলি তার নীরব সাক্ষী৷

আন্দ্রেয়াস ক্রিগার/এসি