1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উৎকণ্ঠায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা

সমীর কুমার দে, ঢাকা৯ আগস্ট ২০১৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মিজানুর রহমান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্যানাডিয়ান নাগরিক৷ বিদেশি পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন তিনি৷

https://p.dw.com/p/1JdIE
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মিজানুর রহমান
ড. এম মিজানুর রহমানছবি: DW/S. K. Dey

ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জঙ্গি দমনে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ড. রহমান৷ সাম্প্রতিককালের জঙ্গি হামলাগুলো তাঁর মনে শঙ্কা তৈরি করেছে৷

ডয়চে ভেলে: আপনি তো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্যানাডিয়ান নাগরিক৷ সম্প্রতি দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেল এরপর আপনি নিরাপত্তা নিয়ে কী ভাবছেন?

অধ্যাপক মিজানুর রহমান

অধ্যাপক ড. এম মিজানুর রহমান: একটু তো উদ্বিগ্নতা আছেই৷ অতীতে আমরা কিন্তু এই ধরনের ঘটনা দেখিনি৷ সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, উদ্বিগ্নতা আছে, পাশাপাশি সরকারও পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছে৷ সঙ্গে দেশের আপামর জনতা এ সব জঙ্গিবাদ প্রতিহত করতে প্রস্তুত আছে৷ এই ধরনের ঘটনা কোনো সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না৷ তারপরও একটা শঙ্কা ভেতরে তো কাজ করেই৷

দেশে আছেন কত বছর? অর্থাৎ ক্যানাডিয়ান নাগরিকত্ব নেয়ার পর কত বছর আগে দেশে এসেছেন?

ক্যানাডা থেকে ২০০৭ সালে দেশে ফিরে আসি৷ তারপর থেকে দেশেই আছি৷

সাম্প্রতিক ঘটনার আগে কি আর কখনও আপনার মধ্যে এই ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে?

না৷ আগে কখনও হয়নি৷ এবারের সন্ত্রাসী হামলাটা তো নতুন ধরনের৷ অতীতে অনেক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এবারেরটা একেবারেই নতুন ধরনের সন্ত্রাস৷ আমার সাদামাটা উত্তর হলো – এই ধরনের পরিস্থিতি আমি আগে কখনও দেশে দেখিনি৷ ২০০৭ সাল থেকে নয়, আগেও কিন্তু কখনও এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি৷ মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই ধরনের পরিস্থিতি আর কখনও দেশে আসেনি৷

এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কিছু ভাবছেন কি?

আসলে ভাবনার জায়গা তো আছেই৷ কিছুটা হলেও আমরা তো দেশকে নিয়ে চিন্তা করি৷ এ দেশটা আমাদের সবার৷ বিশেষ করে আমাদের যে নতুন প্রজন্ম, তাদের নিয়ে চিন্তাটা তো আছেই৷ বাংলাদেশে আমরা যে ধরনের আলামত দেখছি তা যদি আমরা সবাই মিলে প্রতিহত করতে সক্ষম হই, তাহলে ভালো৷ আর যদি সফল না হই তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্ম তো একটা শঙ্কার মধ্যে থাকবে৷ সেখানে একটা ভাবনা তো আমাদের আছেই৷ যেমন ধরেন ব্রিটিশ কাউন্সিল আমার বাসার পাশেই৷ কিছুদিন হলো এটা বন্ধ ঘোষণা করেছে৷ আমার বাচ্চা এখানে যে স্কুলে পড়ে সম্প্রতি আমাকে সেখান থেকে ‘মেসেজ' দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, অনির্দিষ্টকালের জন্য এটা বন্ধ৷ পাশাপাশি বাবা হিসেবেও আমরা খানিকটা উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি৷

এমন পরিস্থিতিতে আপনি ক্যানাডায় ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে কিছু ভাবছেন?

উৎকণ্ঠা একটা আছে এটা সত্যি৷ কিন্তু এটার ভিত্তিতে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেব, সেটা হয়ত আমরা বলছি না৷ তবে ভবিষ্যতে যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে তখন হয়ত বিকল্প চিন্তা করতে হবে৷ এখন পর্যন্ত এই চিন্তাগুলো মাথার মধ্যে নেই৷ পরবর্তী পরিস্থিতি বলে দেবে ভবিষ্যতে আমাদের প্ল্যান অফ অ্যাকশন কী হতে পারে৷ বিশেষ করে আমাদের বাচ্চাদের জন্য৷

সাম্প্রতিককালে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেল, এরপর থেকে ক্যানাডিয়ান দূতাবাস আপনার খোঁজখবর রাখে নিয়মিত? তাদের নতুন কোনো নির্দেশনা কি আছে?

এমনি যারা ক্যানাডিয়ান নাগরিক তাদের প্রতি তো একটা নির্দেশনা আছেই – একটু সতর্কভাবে চলা৷ একেবারে লিখিত ফর্মে কোনো নির্দেশনা আসেনি৷ আমি যতটুকু জানি, যারা বাই বার্থ ক্যানাডিয়ান, অথচ এখানে কাজ করছেন তাদের জন্য কিছু বিশেষ নির্দেশনা তো আছেই৷ আর আমরা তো বাংলাদেশিই৷ আমাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব৷ এ দেশেই তো আমরা জন্মগ্রহণ করেছি, বড় হয়েছি৷ একটা নির্দিষ্ট সময় ক্যানাডায় ছিলাম, তাই তাদের দেশের পাসপোর্টটা পেয়েছি৷ তবে সার্বিকভাবে যে নির্দেশনা আছে, অনেক মানুষের জমায়েতের জায়গাগুলো যেন আমরা এড়িয়ে চলি এবং সতর্কভাবে যেন চলাফেরা করি৷

আমাদের সরকার বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আপনাদের কী ধরনের নিরাপত্তা দিচ্ছে?

সরকার তো বলেছে, আমরা সর্বাত্মক নিরাপত্তা দেব বা আমরা দেয়ার চেষ্টা করছি৷ আসলে নিরাপত্তার বিষয়টা শুধু সরকারই দেখবে সেটা তো না৷ দেশে ১৬ কোটি মানুষ সবাইকে আলাদাভাবে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব না৷ সেক্ষেত্রে নিজের নিরাপত্তার বিষয়ে নিজেকে ঠিক থাকতে হবে৷ একই সঙ্গে প্রয়োজন হলে সরকারের সহযোগিতা নিতে হবে৷ আইন-শৃঙ্খলার কাজে যারা নিয়োজিত তাদের যথেষ্ট তৎপর মনে হয়েছে৷ তারপরও কিছু বিষয় তো থেকেই যায়৷

এই পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আপনার পরামর্শ কি হবে?

সরকার শুধু বলব না, গোটা জাতির এই ধরনের সস্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে৷ এটা কিন্তু শুধু সরকারের নয়৷ যারা সাধারণ জনগণ তাদেরও ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঘটনাগুলো প্রতিহত করা দরকার, কারণ সরকার তো সরকারই৷ এখন এক সরকার, আগামীতে আরেক সরকার আসবে৷ এই সমস্যাটা শুধু সরকারের না৷ গোটা জাতির৷ সেক্ষেত্রে আমি মনে করি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এটা প্রতিহত করা উচিত৷ সরকারের প্রতি আমার আহবান থাকবে, সরকার যেন আরো বেশি তৎপর থাকে৷ সরকারের বেশি বেশি এদিকে মনোনিবেশ করা দরকার৷ একইভাবে সরকারের প্রতি আমার একটা বিশেষ অনুরোধ থাকবে এগুলো কেন ঘটছে, এর ‘রুটকজ' কী সেটা বের করে আনা দরকার৷ কারণ রুটকজ যদি সরকার বের করে না আনতে পারে তাহলে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো খুব বেশি কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়৷ রুটকজটা বের করা কিন্তু একটা গবেষণার বিষয়ও৷ আমি মনে করি সরকারের সে দিকে মনোনিবেশ করা দরকার৷ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির দিকেও সরকারের মনোনিবেশ করা দরকার৷ এ সব কিছুর উপরই নির্ভর করবে আমাদের দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিটা কী হবে৷

আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রদের পড়ান৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও ক্লাস নেন৷ কেন তারা জঙ্গি তৎপরতার দিকে যাচ্ছে? এখানে শিক্ষকদের কোনো গাফিলতি বা কোনো ব্যর্থতা আছে কি?

আমার ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই জঙ্গি তৎপরতায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে এই ধরনের হীন কর্মকাণ্ডকে কখনোই উৎসাহিত করতে পারে না৷ এটা অসম্ভব ব্যাপার৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৎপর থাকতে হবে এবং ক্লাসরুমে এর খারাপ প্রভাব তুলে ধরতে হবে৷ এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগ নেয়া উচিত৷ একটা সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার৷ এখন আমাদের উচিত হবে এ সব ছেলের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা, যাতে তারা বিপথগামী না হয়৷

এখন কি আপনারা ক্লাসে এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে?

এখন তো বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জঙ্গি বিরোধী একটা প্রচারণা চালাচ্ছে৷ এ ব্যাপারে সরকার যে নির্দেশনা দিয়েছে সেটা অবশ্যই খুব ভালো৷ তবে এ সব বিষয় তো আমাদের ক্লাসের বিষয়বস্তু না৷ তবে ক্লাসরুম মানেই যে পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে থাকতে হবে এমনটি নয়৷ সেক্ষেত্রে অবস্থাভেদে, সুযোগ-সময় থাকলে আমরা তাদের বলি এ সমস্ত জিনিস ঠিক না৷ এটা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা দরকার এমন একটা অবস্থা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা করে থাকি৷ কারণ এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে আমি খুবই ঘৃণা করি৷

শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার আহ্বান কী হবে?

তারা যেন পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়৷ একইসঙ্গে কোনোভাবেই যেন বিপথগামী না হয়৷ কেউ যদি তাদের বিপথগামী করার চেষ্টা করে তাহলে সেটা যেন সাথে সাথেই প্রতিষ্ঠানের যাঁরা দায়িত্বে আছেন – যেমন চেয়ারম্যান হোক, প্রিন্সিপাল হোক বা প্রক্টর হোক তাঁদের জানানো উচিত এবং একইসঙ্গে পার্শ্ববর্তী থানাতে জানানো উচিত যে, এই সমস্ত লোকজন আমাদের বিপথে নেয়ার চেষ্টা করছে৷ তাহলে হবে কী – যারা মদদ দেয়ার চেষ্টা করছে তারাও ঝুঁকির মধ্যে থাকবে৷ ছেলেরাও তখন মনে করবে তাদের নৈতিক দায়িত্ব এটা প্রতিরোধ করা৷

বন্ধু, ড. এম মিজানুর রহমানের সাক্ষাৎকারটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান