1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিরলেন মোবাশ্বার, সন্দেহ রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে

সমীর কুমার দে ঢাকা
২২ ডিসেম্বর ২০১৭

সাংবাদিক উৎপল ফিরে আসার তিন দিন পর, ফিরে এলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান সিজার৷ ৭ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার ৪৪ দিন পর বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে দক্ষিণ বনশ্রীতে নিজের বাসায় ফিরে আসেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/2ppxE
Bangladesch Dhaka Politik   Khaleda Zia
ছবি: bdnews24.com

দীর্ঘ দু'মাস ১০ দিন নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার ফিরে আসেন সাংবাদিক উৎপল৷ ফিরে এসে তিনি বলেন, অপহরণকারীরা তাঁর কাছে টাকা চেয়েছিল৷ আড়াই মাস নিখোঁজ থাকা উৎপলকে একটি মাইক্রোবাসে করে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে রেখে যাওয়া হয়েছিল৷ এ ঘটনার তিন দিন পর, বাড়ি ফিরে সিজারও একই কথা বলেছেন৷ তিনি জানান, তাঁকেও বৃহস্পতিবার রাতে চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়৷ সেখান থেকে নিজেই বাসায় ফেরেন তিনি৷

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোন ফৌজদারি অপরাধী তাঁদের তুলে নিয়ে গেলে দাবি-দাওয়ার বিষয় থাকত৷ কিন্তু এখানে কোনো ধরনের মুক্তিপণ বা অপরাধীদের চাহিদা পূরণ করা ছাড়াই তাঁদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ অর্থাৎ এখানে কোনো লেনদেন হয়নি৷ একজন অপরাধী কাউকে তুলে নিয়ে গিয়ে কিছু প্রাপ্তি ছাড়াই দীর্ঘ সময় রেখে আবার ফেরত দিচ্ছে, সেটা তো হতে পারে না৷ আবার রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাঁদের খুঁজে পাচ্ছে না, সেটাই বা কীভাবে সম্ভব? তাই এখন রাষ্ট্রীয় বাহিনীকেই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে৷ রাষ্ট্রকেই এখন প্রমাণ করতে হবে যে তারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত না৷ না হলে মানুষের মনের মধ্যে একটা সন্দেহ থেকেই যাবে, যেটা রাষ্ট্রের জন্য ভালো হবে না৷''

Prof. Mizanur Rahman - MP3-Stereo

মোবাশ্বার যা বললেন

ফিরে আসার পর মোবাশ্বার হাসান সিজার শুক্রবার সকালে বাসার নীচেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন৷ সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে টাকার জন্য অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে হচ্ছে৷ কারণ আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আমার পরিচিত কেউ আছে কিনা যে টাকা দিতে পারবেন৷ তবে আমার কাছে সরাসরি কেউ টাকা চায়নি৷ ওদের (পরিবারের সদস্যদের) কাছে টাকা চেয়েছে৷'' যেখানে রাখা হয়েছিল, সেখানে টাকা-পয়সা নিয়ে কথা হয়েছিল জানিয়ে মোবাশ্বার আরো বলেন, ‘‘তারা (যারা তাকে আটকে রেখেছিল) ‘কনভারসেশন' করেছে টাকা-পয়সা নিয়ে৷ আমার কাছে ২৭ হাজার টাকা ছিল, সেটা তারা নিয়ে নিয়েছে৷ তবে একটা জিনিস নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ছিল – আমাকে ছাড়বে নাকি মারবে তা নিয়ে৷ তাদের কেউ একজন মিসিং ছিল, আমি ঠিক জানি না, যেটা নিয়ে ভয়ে ছিল তারা৷ এছাড়া তাদের মধ্যে অনেক ধরনের ‘ডিসকাসন' হয়েছে৷''

অপহরণের দিনের (৭ নভেম্বর) বর্ণনা দিয়ে মোবাশ্বার বলেন, ‘‘আমি আগারগাঁওয়ের ইউএনডিপি ভবন থেকে বের হয়ে উবার নিয়ে রোকেয়া সরণির দিকে যাওয়ার সময় মোবাইলে ‘ব্রাউজ' করছিলাম৷ তখন কয়েকজন গাড়িটা থামায়৷ বলে, এটা চোরাই গাড়ি, নামেন৷ নেমে আমি পেছনে অন্য কোনো গাড়ি খুঁজছিলাম৷ তখন পেছন থেকে কেউ একজন আমার চোখে কিছু একটা মাখিয়ে দেয়৷ তারপর ধাক্কা দিয়ে একটা গাড়িতে তোলে এবং একটা কাপড় আমার মুখে ধরে৷ তখন আমি ‘সেন্স' হারাই৷ এরপর অনেকক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম৷ ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমি একটা অন্ধকার রুমে বন্দি, পেছনে হাত বাঁধা৷ ময়লা একটা তোষক, ঘরের জানালা আছে কিন্তু বাইরে থেকে সিল করা৷ পাশে আরেকটা রুম আছে৷ চার-পাঁচজন কথা বলত, শুনতে পেতাম৷ হোটেল থেকে ঠান্ডা খাবার দিত খাওয়ার জন্য৷ আজ অনেকদিন পর দিনের আলো দেখলাম৷'' 

Nur Khan Liton - MP3-Stereo

ফিরে আসার প্রসঙ্গে মোবাশ্বার বলেন, ‘‘তারা আমাকে একটা গাড়ির মধ্যে বসায়৷ এক থেকে দেড় ঘণ্টা গাড়িটা চলে৷ চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল৷ পুরো সময়টা আমাকে একজনের কোলে শুইয়ে রেখেছিল তারা৷ তারপর একসময় নামিয়ে দিয়ে বলে, তুই চলে যা৷ পেছনে তাকালে মেরে ফেলবো৷ নেমে দেখি এয়ারপোর্ট রোড৷ ওখান থেকে একটা সিএনজি নিয়ে বাসায় আসি৷ আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না৷ সিএনজিওয়ালার ফোন থেকে বাবাকে ফোন দিয়েছিলাম৷ বাবা গেট খুলে পাঁচশ' টাকা নিয়ে এসে সিএনজিওয়ালাকে দেন৷''

মোবাশ্বারের বোন তামান্না তাসমিন ঐ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমার ভাই ফিরে এসেছে, আমরা এতেই খুশি৷ আমাদের কোনো প্রশ্ন নেই, কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই৷''

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মানবাধিকার কর্মীরা বারবার বলছি, যারা নিয়ে যাচ্ছে আবার দু-তিন মাস পর ফিরিয়ে দিচ্ছে, তারা যদি রাষ্ট্রীয় বাহিনী না হয় তাহলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চেয়ে শক্তিশালী৷ এরা সুরক্ষিতভাবে রাখছে, আবার ফেরত দিচ্ছে৷ যাঁরা ফিরে এসেছেন, তাঁদের একজনকেও তো রাষ্ট্রীয় বাহিনীর তৎপরতার কারণে ফিরিয়ে দেয়নি৷ যারা নিয়েছে তারা স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে দিয়েছে৷ ফলে যারা রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তাদের ব্যাপারে রাষ্ট্র চুপ কেন? রাষ্ট্রকেই কিন্তু এখন এ ব্যাপারে জবাব দিতে হবে৷''

রহস্যজনক ‘নিখোঁজের' তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ‘নিখোঁজ' হয়ে যাওয়ার তালিকা ক্রমশই লম্বা হচ্ছে৷ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বৃহস্পতিবার একটি টুইট করেছেন৷ সেখানে তিনি দাবি করেন, গত ১০ বছরে ৭৫০ জনকে গুম করেছে সরকারি বাহিনী৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, নিখোঁজদের একটি অংশ পরিবারকে না বলেই জঙ্গি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট হয়ে নিরুদ্দেশ হয়েছে৷ তবে এ সব ঘটনায় যে জিডি করা হয়, তার তদন্ত কাজ এগোয় না৷

গত বছরের ১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে একযোগে চারজন তরুণ নিখোঁজ হন৷ তাঁরা হলেন – সাফায়েত হোসেন, জায়েন হোসেন খান পাভেল, সুজন ঘরামি ও মেহেদী হাওলাদার৷ এঁদের মধ্যে সাফায়েত ও পাভেল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী৷ পরবর্তীতে ১৮ এপ্রিল মেহেদী হাওলাদার ও ২৮ মে সুজন ঘরামি ফিরে আসেন৷ তাঁদের ফিরে আসার বিষয়টিও রহস্যজনক৷ তাঁরা কীভাবে ফিরে এসেছেন, এতদিন কোথায় ছিলেন, কারা তাঁদের ধরে নিয়েছিল – এমন সব প্রশ্নের সদুত্তর পরিবারের কাছ থেকে মেলেনি৷ ঐ বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার মাটিকাটা এলাকা থেকে কেয়ার মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান ফরহাদ ও ৫ ডিসেম্বর বনানী এলাকা থেকে সাঈদ আনোয়ার খান নিখোঁজ হন৷ এমন অন্তত দুই শতাধিক মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব থেকে জানা যায়৷

এই গুম ও নিখোঁজের পিছনে কারা থাকতে পারে বলে আপনাদের মনে হয়? লিখুন নীচের ঘরে৷