1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উৎসব শেষ, ভোগান্তি চলছে

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২২ অক্টোবর ২০১৮

চার দিনের পুজো গড়িয়েছে দশ দিনে৷ কিন্তু তার পরেও উৎসবের ঘোর যেন কাটছে না শহর কলকাতার৷

https://p.dw.com/p/36x4q
Hindus feiern  Durga Puja
ছবি: Jibon Ahmed

পঞ্জিকা মেনে চললে, এবারের দুর্গাপুজো শেষ হয়েছে ১৮ অক্টোবর, গত শুক্রবার৷ তারপর শনি-রবি পাওয়া গেছে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য৷ কিন্তু না, কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরজুড়ে এখনো অনেক এলাকার রাস্তা অবরুদ্ধ পুজোর মণ্ডপ এবং যান শাসনের কারণে৷ এমনকি ভিড় সামলানোর জন্য রাস্তার মাঝে যে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়, সেটাও খোলা হয়নি অনেক জায়গায়৷ অনেক রাস্তা এখনো ‘‌নো এন্ট্রি'৷ তারও কোনো আগাম বিজ্ঞপ্তি নেই৷ ফলে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে৷ যানজট হচ্ছে প্রায় সব রাস্তাতেই৷ গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে বিস্তর৷ অথচ পুজোর ছুটি শেষ হয়ে কাজের দিন শুরু হয়ে গেছে৷ কিন্তু সময় নষ্টের ব্যাপারে, সাধারণ নাগরিকের অসুবিধের ব্যাপারে পুলিশ বা প্রশাসনের কোনো হেলদোল নেই৷ তার একটিই কারণ৷ স্বয়ং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কলকাতার বড় বড় পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের দিন বেঁধে দিয়েছেন ২৩ অক্টোবর, মঙ্গলবার৷ রেড রোডের দু'ধারে গ্যালারি তৈরি হয়েছে৷ সারিবদ্ধ শোভাযাত্রার মাধ্যমে একে একে প্রতিমা হুগলি নদীতে বিসর্জনের জন্যে যাবে৷ দশমীর পাঁচ দিন পরে বিসর্জনের এই যে সরকারি ব্যবস্থাপনা, তাতে যেহেতু খোদ মুখ্যমন্ত্রীর শিলমোহর আছে, প্রশাসনিক কর্তারা বাকিটা নিয়ে আদৌ ভাবিত নন৷ নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য রক্ষা করার কোনো দায়ই তাঁদের নেই৷

একই কারণে, পঞ্জিকা নির্ধারিত ষষ্ঠীর বোধনেরতিন-চার দিন আগেই এবার পুজোর ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে গেছে, কারণ,সদাব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রীকে যেহেতু প্রচুর পুজোর উদ্বোধন শুরু করতে হয়, তিনি শুরু করেছেন অনেক আগে থেকে এবং লোকেও তার পর মহা উৎসাহে রাস্তায় নেমে পড়েছে৷ ফলে শহরের যত্রতত্র যানজট হয়েছে৷ অনেকে আগাম পরিকল্পনা করে পুজোর ছুটি পড়তেই শহর ছেড়ে দূরে কোথাও বেড়াতে চলে গিয়েছেন৷ যাঁদের সেই সময়, সুযোগ বা সঙ্গতি ছিল না, তাঁরা পড়েছেন চূড়ান্ত দুর্ভোগে৷ সোমবার সংবাদপত্রেই প্রকাশিত হয়েছে এক পরিবারের কথা, যারা লেকটাউন এলাকায় নিজেদের বাড়িতেই কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে, শেষ পর্যন্ত পুজোর দিনগুলো কাটাতে বাধ্য হয়েছেন শহরের উপকণ্ঠে এক রিজর্টে৷ কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে এ অভিযোগও এবার জোরদার হয়েছে যে, শহরের বড় বড় রাস্তা যানজট মুক্ত রাখার তাগিদে বহু রাস্তায় আসা-যাওয়া আটকে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে চূড়ান্ত নাকাল হয়েছেন বড় বড় পুজোর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা৷ তাঁদের যাতায়াত করতে হয়েছে অনেক ঘুরপথে, তা-ও ব্যাপক যানজট আর লোকের ভিড় সহ্য করে৷

আর এর পাশাপাশি ক্ষমতা এবং অর্থের অশ্লীল প্রদর্শনী তো হয়েছেই৷ কোথাও আস্ত মণ্ডপ তৈরি হয়েছে রূপো দিয়ে, তো কোথাও প্রতিমার গা ঢেকেছে বহুমূল্য সোনার গহনায়৷ মণ্ডপ তৈরি হয়েছে হিট হিন্দি সিনেমার সেটের নিখুঁত নকল করে৷ তার বাজেটও কোনো হিন্দি ছবির থেকে কম নয়৷ মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়্যারের ওই রূপোর মণ্ডপটি বানাতেই ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন উদ্যোক্তারা৷ আর সাধারণভাবে বড় পুজোগুলোর বাজেট হয় ১০/‌১২ কোটি৷ সেই হিসেবে কয়েকশ' কোটি টাকা খরচ হয়েছে এবারের পুজোয়৷ যদিও তাতে অর্থনীতির স্বাস্থ্য কতটা ভালো হয়েছে, সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়৷ কারণ, লোকের হাতে খরচ করার মতো যথেষ্ট অর্থ না থাকায়, পাশাপাশি ঊর্ধমুখী জ্বালানির দাম, জিনিসপত্রের দাম লাগাতার বেড়ে চলা— সব মিলিয়ে প্রাক পুজো খুচরো ব্যবসা যথেষ্ট মন্দা ছিল৷ এ দাবি শহরের হকারদের, যাঁরা রাস্তার ধারে দোকান চালান৷ ফলে পুজোকে কেন্দ্র করে যে সমান্তরাল অর্থনীতির শ্রীবৃদ্ধির কথা বড়মুখ করে বলা হয়, তার হিসেব খতিয়ে দেখলে খুবস্বস্তিদায়ক অনুভূতি হবে না৷