1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক সিলিন্ডারেই ১৫ হাজার টাকা লাভ!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ জুন ২০২০

বাংলাদেশে করোনার মধ্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুতের হিড়িক পড়েছে৷ সেই সুযোগে ১০ হাজার টাকার সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ হাজার টাকায়৷ কিন্তু ঘরে সিলিন্ডার ব্যবহারে বিপদের শঙ্কাও আছে৷

https://p.dw.com/p/3dkam
Deutschland Recklinghausen | Coronavirus | Sauerstoff für Beatmungsgeräte
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Güttler

কয়েকদিন আগে স্ত্রীর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে বিপদে পড়েন ঢাকার ফয়সাল আহমেদ৷ কারণ তাকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে চাননি তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালগুলোর অবস্থা খারাপ৷ সেখানে রোগী নিয়ে যেতে ভরসা পাইনি৷'' সংক্রমণের ভয়ে তাই বাসায় রেখেই স্ত্রীর চিকিৎসা করানো শ্রেয় মনে করেছেন তিনি৷ ‘‘কিন্তু সেখানেও অক্সিজেনের সংকট আছে৷ তাই ঘরেই সিলিন্ডার কিনে এনেছি,'' বলেন ফয়সাল৷

সিলিন্ডারের বাজারের বিষয়ে আগেই তার ধারণা ছিল৷ তারপরও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাকে৷ অন্তত ১৬ জন বিক্রেতার কাছে ধরনা দিয়েছেন তিনি৷ শেষ পর্যন্ত ২৭ হাজার টাকা খরচ করেছেন, কিন্তু পছন্দের ব্র্যান্ডেরটি কিনতে পারেননি৷ ফয়সাল বলেন, ‘‘করোনা শুরুর সময় সবচেয়ে ভালো একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম ছিলো ১০-১২ হাজার টাকা৷ আর রিফিল করতে লাগত তিনশ টাকা৷ কিন্তু এখন সেই সিলিন্ডারের দাম ৩০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা৷ রিফিল এক থেকে তিন হাজার টাকা৷’’

আবু তাহের

একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাথে ট্রলি, ফ্লো মিটার, ক্যানোলা ও মাস্ক দেয়া হয়৷ সাধারণত বাড়িতে ব্যবহারের জন্য একটি সিলিন্ডারে এক হাজার ৪০০ লিটারের (১ দশমিক ৪ কিউবিক মিটার) অক্সিজেন থাকে৷ ব্যবহার করা যায় এক হাজার ২০০ মিনিট৷

আগে সিলিন্ডার ভাড়া পাওয়া গেলেও এখন আর তা পাওয়া যাচ্ছে না৷ তার উপর এক প্রতিষ্ঠান থেকে কিনলে আরেক প্রতিষ্ঠান ‘রিফিলও’ করতে চায় না৷ তার বদলে প্রতিটি সিলিন্ডার বিক্রি করে কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকার ব্যবসায় বেশি মনোযোগ বিক্রেতাদের৷

বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘লিনডে’ কোম্পানির উৎপাদিত সিলিন্ডারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি৷ এছাড়াও চীন ও তাইওয়ান থেকে আনা সিলিন্ডারও বিক্রি হয়৷ তেজগাঁও কলোনী বাজার এলাকার লিনডের পরিবেশক আবু তাহের৷ তিনি দাবি করেন, সরবরাহ না থাকায় কয়েকদিন ধরে কোম্পানিটির সিলিন্ডার দিতে পারছেন না৷ তবে তিনি ৩৫ হাজার টাকায় এক ধরনের ‘প্রাইভেট’ সিলিন্ডার বিক্রি করেন৷ আর দুই-একদিন পরে লিনডের সিলিন্ডার দিতে পারবেন, কিন্তু দাম পড়বে ৪৫ হাজার টাকা৷ দাম এত বেশি কেন? জানতে চাইলে বলেন, ‘‘এখন চাহিদা অনেক বেশি৷ আর সিলিন্ডারগুলো আমদানি করা হয়৷ চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করা যাচ্ছে না৷’’

ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার

পরিবেশকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন তারা যে সংখ্যক সিলিন্ডার পান তার চেয়ে চাহিদা চার-পাঁচ গুণ বেশি৷ প্রয়োজন না থাকলেও অনেকে আতঙ্কে ঘরে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করছেন বলে জানান তারা৷ তাদের কেউ কেউ বিক্রির আগে তাই নিশ্চিত হতে চান গ্রাহকের আসলেই প্রয়োজন আছে কিনা৷ তেমনই একজন পরিবেশক শাকিল আহমেদ৷ তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ইমারজেন্সি অক্সিজেন হোম সার্ভিস'৷ শাকিল বলেন, ‘‘প্রয়োজন না থাকার পরও অনেকেই সিলিন্ডার কিনে বাসায় রেখে দিচ্ছেন৷ তিন-চারটাও কিনে রাখছেন কেউ কেউ৷ তাই আমরা চেষ্টা করছি যাদের আসলেই প্রয়োজন তাদের কাছে বিক্রি করতে৷’’

অক্সিজেন সিলিন্ডার গ্রাহকের বাসায় গিয়ে সরবরাহ করেন অনেক বিক্রেতা৷ কিন্তু এভাবে ঘরে সিলিন্ডার ব্যবহারের ঝুঁকিও আছে৷ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সিলিন্ডারের ব্যবহার এমনকি মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে মনে করেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার৷ তিনি বলেন, ‘‘এর ফলে যাদের প্রয়োজন নাই তারা বাসায় মজুত করছেন৷ যাদের প্রয়োজন তারা পাচ্ছেন না৷ আর রোগীর জন্য অক্সিজেন ব্যবহার কোনো যেকারো কাজ না৷ এর প্রবাহ নির্ধারণ করতে হয়৷ কমাতে হয়, বাড়াতে হয়৷ কতটুকু অক্সিজেন প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে হয়৷ এটা না করে রোগীকে অক্সিজেন দেয়া বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ চোখ ও শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য