1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একুশের চেতনায় বইমেলা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অমর একুশে গ্রন্থমেলা সাধারণভাবে প্রকাশকদের প্রথাগত বইমেলা নয়৷ এই বইমেলার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদদের স্মৃতি৷ এর সঙ্গে মিশে আছে বঙালির চেতনা, মাতৃভাষার জন্য আবেগ-ভালোবাসা৷

https://p.dw.com/p/2XxLr
একুশে বইমেলা
ছবি: DW/M. M. Rahman

বইমেলা একাকার হয়ে যায় এই দিনটিতে৷ বাঙালির সাহস, ভালোবাসা এবং প্রতিবাদের প্রতীক এই বইমেলা৷ একুশের ইতিহাস তাই আজও শাসন জুগিয়ে চলেছে লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের৷ জোর করে তাঁদের মুখ বন্ধ করা যায়নি৷

জাগৃতি প্রকাশনীর ফয়সাল আরেফির দীপনকে জঙ্গিরা হত্যা করে ২০১৫ সালের ৩১শে অক্টোবর৷ অপরাধ, ব্লগার ও লেখক ড. অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করতেন তিনি৷ প্রকাশ করতেন মুক্তমনাদের বই৷ কিন্তু তাঁকে হত্যা করেও থামানো যায়নি তাঁর প্রকাশনাকে৷ থামানো যায়নি মুক্তমনাদের বই প্রকাশকেও৷

বর্তমানে সেই প্রকাশনা সংস্থার হাল ধরেছেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া রহমান জলি৷ একুশে বইমেলায় জলির হাত ধরে জাগৃতি প্রকাশনীর বড় স্টল হয়েছে এবার৷ তবে গতবছরও জগৃতির স্টল বাদ পড়েনি৷ দীপন হত্যার তিন মাসের মাথায় বইমেলা হলেও শোক কাটিয়ে দীপনের প্রকাশনা সংস্থার স্টল দিয়েছিলেন স্ত্রী জলি৷

রাজিয়া রহমান জলি

জলি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি চেষ্টা করছি দীপনের কাজকে এগিয়ে নিতে৷ ব্যক্তি দীপনকে হত্যা করা যায়৷ কিন্তু তাঁর কাজ বা বিশ্বাসকে হত্যা করা যায় না৷ আমরা এখনো মুক্তমনা এবং নতুন লেখকেদের বই প্রকাশ করছি৷ এবারো অনেক নতুন বই নিয়ে এসছে বইমেলায়৷''

তিনি বলেন, ‘‘একুশ যেমন আমাদের একটি শক্তি, তেমনি একুশের বইমেলাও আমাদের শক্তি৷ এই মেলা আমাদের সব ভয় আর শঙ্কা দূর করে দেয়৷''

অমর অকুশের দিনের বইমেলার দিনটি সব সময়ই আলাদা৷ এদিন সকাল আটটা থেকে মেলার গেট খুলে যায়৷ আর শহিদ মিনারের পথ গিয়ে মেশে বইমেলায়৷

মেলার দোকান খোলার পর থেকেই বইপ্রেমী আর ভাষাপ্রেমীরা ভিড় জমান স্টলে৷ মেলায় সকালে সপরিবারে আসেন হাসানুল কাদির৷ তিনি বলেন, ‘‘গত ২০ দিন ধরে বইমেলা চললেও আসিনি৷ তবে আজ সকালে শহিদ মিনারে ফুল দিয়েই সরাসরি বইমেলায় চলে এসছি৷ পছন্দের বই কিনবো৷ সন্তানদের কিনে দেবো৷ ইচ্ছা আছে সারাদিন কাটাবো বইমেলা এবং সংলগ্ন এলাকায়৷'' তিনি বলেন, ‘‘মেলার পরিসর বেড়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সন্তোষজক৷''

এবারের বইমেলার শুরু হওয়ার আগেই দু'টি বিষয় নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়৷ ব-দ্বীপ প্রকাশনের মালিকের মুক্তি দাবি করায় রবিন আহসানের শ্রাবণ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেয়ার সিদ্ধান্ত এবং বইয়ের ওপর পুলিশের নজরদারির ঘটনা ঘটে৷ প্রতিবাদেও মুখে শ্রাবণ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়৷ কিন্তু পুলিশের নজরদারি অব্যাহত থাকে৷ পুলিশ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘত লাগে এমন বই খুঁজছে মেলায়৷ তবে দু'দিন আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত আমরা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কোনো আপত্তিকর বই পাইনি৷''

বইমেলায় এবার চার হজারেরও বেশি নতুন বই প্রকাশের আশা করছেন লেখক-প্রকাশকরা৷ গত বছর নতুন বই প্রকাম হয়েছে সাড়ে তিন হাজার৷ বই বিক্রি হয়েছে ৪০ কোটি টাকারও বেশি৷ এবার যা পরিবেশ, তাতে বই বিক্রি বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

শাকুর মজিদ

লেখক শাকুর মজিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবারের বইমেলার সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হলো নতুন লেখকদের, তরুণ লেখকদের বই বেশি আসছে৷ এর থেকে যদি শতকরা ১০ ভাগও লেখক হিসেবে শেষ পর্যন্ত টিকে যান, তবে তা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যেও জন্য অনেক কাজের হবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এবার বইমেলার পরিবেশ ভালো, স্টল বেশি, নতুন বইও বেশি৷ শুরুতে পুলিশের নজরদারি বিতর্কে ভীতির সৃষ্টি হয়েছিল৷ তবে  তা কেটে গেছে৷ আমি মনে করি ইচ্ছে করেই একটি ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়েছিল৷''

প্রসঙ্গত, এবারের বইমেলায় প্রায় সাতশ' স্টল আর প্রকাশনা সংস্থা চারশ'রও বেশি৷

অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ সৃজনশীল বই প্রকাশ হয়৷ আর এই বইমেলা একুশের চেতনা থেকে উৎসারিত৷ একুশের আত্মত্যাগের কারণে আজ আমাদের মাতৃভাষা বাংলা রাষ্ট্রভাষা৷ ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস৷ তারপরও বাংলা তার কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি আজও৷ তাই তো একুশের সকালে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে শহিদ মিনারে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে হয়, স্বীকার করতে হয় ব্যর্থতা৷

তিনি মঙ্গলবার সকালে শহিদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের পর বলেন, ‘‘সরকারি অধিদপ্তরগুলোয় বাংলা চালু হলেও আদালতে সেটা বাস্তবায়ন করা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি৷ এ জন্য আমরা খুবই দুঃখিত৷ অবশ্য হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারক খুব সুন্দরভাবে বাংলায় রায় লিখছেন৷ এটা অন্যদের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে৷ আপিল বিভাগেও আমরা এটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি৷ প্রযুক্তির এই যুগে যদি কোনো ডিভাইস আসে, যার মাধ্যমে আদালতে ঘোষণা করা রায় বাংলায় রূপান্তর হয়ে যাবে, তাহলে অনায়াসে বাংলা ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব৷''

এবারের বইমেলা নিয়ে আপনার ভাবনা জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান