1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘এবার নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সীমিত হবে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১০ ডিসেম্বর ২০১৮

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা অনেকাংশেই নির্ভর করে পর্যবেক্ষকদের মতামতের ওপর৷ আসন্ন সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সার্বিক বিষয় নিয়েই কথা বলেছেন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতী’র নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ৷

https://p.dw.com/p/39kNw
Bangladesch Wahlen 04. Januar 2014
ছবি: Reuters

ডয়চে ভেলে: সামনেই আরেকটি সংসদ নির্বাচন৷ এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?

শারমিন মুরশিদ: আমাদের সব সময়ই প্রস্তুতি থাকে৷ তবে এবার একটু জটিলতা আছে৷ এবার নির্বাচন কমিশন আমাদের অনুমতি দেয়নি৷ ফেমা আর ব্রতী-কে তারা অনুমোদন দেয়া হয়নি৷ যা-ই হোক, ‘একটা টেকনিক্যাল ডিফিকাল্টি'-র কথা বলে তারা এর ব্যাখ্যা দিয়েছে৷ যেহেতু পর্যবেক্ষণ একটি নাগরিক দায়িত্ব, এ কারণে আমরা মনে করি যে, সকল নাগরিকের নিজ এলাকায় সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত৷ যে নির্বাচনটি হচ্ছে, সেটা নিয়ে আমাদের একটা অবস্থান হলো – সবাই যার যার জায়গায় এটা পর্যবেক্ষণ করবে৷ আমরা আমাদের কাজটি আমাদের মতো করে করে যাবো৷ আমাদের কাজটি মূলত গবেষণাধর্মী৷

এবারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক কি আগের চেয়ে বাড়ছে, না কমছে?

আপাতদৃষ্টিতে আমরা যা দেখছি-জানছি তাতে মনে হচ্ছে কমছে৷ দেখুন, এবার আমরা তো আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে কোনো প্রতিশ্রুতি পাইনি৷ জাতীয় পর্যায়ের কিছু সংগঠন আছে, তাদের মধ্যেও একটা চিন্তা-ভাবনা চলছে৷ কতটুকু করবে, কীভাবে করবে, কেমনভাবে করবে? তবে আগের তুলনায়, বিশেষ করে ২০০৮ সালে যে বিপুল পর্যবেক্ষকের অংশগ্রহণ ছিল, সেটা এবার হবে না৷ তবে এবার নতুন কিছু জোট আমরা দেখছি, তারা বড় আয়োজন করে নামছে৷ কিন্তু তারা একেবারে নতুন৷ ফলে তাদের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে আছে সেটা এখনই বলা মুশকিল৷ 

‘ওদের অগ্রাধিকারের জায়গা ভিন্ন’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কেন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না?

আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করবেন যে, ওদের অগ্রাধিকারের জায়গা ভিন্ন৷ আরেকটি বিষয় হলো যে, ২০১৪ সালে কোনো আন্তর্জাতিক মহল পর্যবেক্ষণ করেনি৷ কারণ, সেটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছিল না৷ এবার কিন্তু বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এজেন্সি বলেছে যে, তাদের গুরুত্ব রোহিঙ্গা ইস্যুসহ অন্যান্য জায়গায়৷ এ কারণে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তারা খুব একটা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না৷ তবে তারা বলেছে যে, তাদের বিশেষজ্ঞ দল উপস্থিত থাকবে, তবে ছোট আকারে৷ তাদের সর্বশেষ অবস্থান কী হবে, সেটা জানতে পারবো দু-চারদিনের মধ্যেই৷ তাদের সাথে আমাদের মিটিং আছে৷ আমরা আমাদের কথা বলব, ওদের দিক থেকেও ওদের জায়গাটা বোঝার চেষ্টা করব, শোনার চেষ্টা করব৷ আমি জানার চেষ্টা করব তাদের কেন অনীহা? আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক মহল থেকে একটা পর্যবেক্ষণ হওয়া উচিত৷

এবার বিদেশি পর্যবেক্ষক কমছে ,না বাড়ছে?

এখনো আমরা কোনো ‘কমিটমেন্ট' পাইনি৷ তাই এই মুহূর্তে বলা মুশকিল৷ এখন পর্যন্ত কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কেউ বলেনি যে, তারা আসছে কিনা৷ বিশেষ করে যারা এই কাজগুলো করে থাকে, তারা কেউই স্পষ্টভাবে কোনো ঘোষণা দেয়নি৷ সেই জায়গা থেকে আমরা অপেক্ষা করতে পারি৷ আমার মনে হয়, কয়েকদিন পরে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে৷

বিদেশি পর্যবেক্ষক না এলে কি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে?

সেটা আমি বলবো না৷ এই মুহূর্তে সেটা বলা ঠিকও হবে না৷ ভোটারদের মধ্যে অসন্তোষ থাকতেই পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও অসন্তোষ থাকতে পারে৷ তবে নির্বাচন যদি সংঘাতময় হয়, তখন কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়৷ সংঘাতের মধ্যে যে নির্বাচন হয়, সেটা সুষ্ঠু হয় না৷ আমরা পর্যবেক্ষক হিসেবে একটা মৌলিক অবস্থান নিয়ে থাকি৷ দেখার বিষয় হচ্ছে, কোনো অনিয়ম হচ্ছে কিনা৷ দেশীয় যে পর্যবেক্ষকরা পর্যবেক্ষণ করবেন, তারা কতটুকু করতে পারবেন সেটাও কয়েকদিনের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে৷ তবে মিডিয়ার উপস্থিতি তো থাকবেই৷ আমাদের দেশের মিডিয়া কিন্তু এক ধরনের পারদর্শীতা এর মধ্যে অর্জন করেছে৷ সেখানে কিন্তু বিশালভাবে অনিয়ম হলে বা সে ধরনের কোনো পরিস্থিতি হলে তখন এগুলো আর আড়াল থাকবে না৷ এগুলো সামনে কোনো না কোনোভাবে চলে আসে৷ আপনি যেটা বলছিলেন যে, সুষ্ঠু ‘অবজারভেশন' একদম হবে না, সেটা বলছি না৷ তবে বলছি, এবার এর আকার সীমিত হবে৷ 

বাংলাদেশে কতগুলো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা আছে, যারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে?

এই মুহূর্তে আমি বলতে পারব না৷ কিন্তু একটা তথ্য বলতে পারি৷ ১১৮ থেকে ১২০টির মতো সংস্থা নির্বাচন কমিশনের তালিকাভুক্ত হয়েছে৷ সেই তালিকার ভিতর আমরা এটাও লক্ষ্য করেছি যে, গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো সংস্থা বাদ পড়েছে৷ বেশ কিছু নাম আমরা দেখতে পাচ্ছি, যাদের সম্পর্কে আমরা খুব কম জানি৷

আপনারা মাঠ পর্যায়ে যাদের কাজে লাগান, তাদের কী ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন?

শুনুন, আমাদের একটা ‘মেথডোলজি' আছে৷ আমরা দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ করি, দিনব্যাপী করি, পূর্বেরটা দেখি, আবার পরেরটাও দেখি৷ ‘সিডিউল' ঘোষণার পরে আমারা প্রতিদিন একটা ‘ফলো আপ' করে থাকি৷ সেটা মাঠ পর্যায়ে না, কেন্দ্রীয়ভাবে৷ এটা আসলে খুব ব্যয়বহুল একটা কাজ৷ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ আমরা ভোটের দিনই মূলত করে থাকি৷ পাশাপাশি ভোটের আগের তিন দিন এবং পরের তিন দিনও আমরা করে থাকি৷ এখানে আমরা একেবারেই আমাদের ‘গাইডলাইন' ধরে, আমাদের একটা ‘প্রটোকল' আছে সেটা ধরে ধরে আমরা পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেই৷

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যয় কীভাবে আপনারা নির্বাহ করেন?

আমরা ‘ভলেনটিয়ার অর্গানাইজেশন' হিসেবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা পেয়ে থাকি৷ আবার স্বতন্ত্রভাবে বহু সংস্থা এই কাজটা করছে৷ যেমন ধরুন, বিদেশি অর্থ না থাকলেও আমরা এটা করি৷ সেই ধরনের একটা কাঠামো ইতিমধ্যে আমাদের দেশে দাঁড়িয়ে গেছে৷

বাংলাদেশে পর্যবেক্ষকদের মতামতকে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়?

এটা একটা ভালো প্রশ্ন করেছেন৷ আমার মনে হয়েছে, এই চর্চাটা যত পোক্ত হয়েছে, তত জনপ্রিয় হয়েছে৷ প্রাথমিক পর্যায়ে কিন্তু এতটা ছিল না৷ এখন কিন্তু গুরুত্বের জায়গায় পৌঁছেছে৷ একটা সময় নির্বাচন কমিশনও অতটা গুরুত্ব দিত না৷ আমি নিজেই ২০ বছর ধরে এই কাজ করছি৷ ২০০৮ সালে যখন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তুঙ্গে গেল, তখন পর্যবেক্ষকরা কমিশনের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করত৷ নির্বাচন কমিশন সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় তারা এগুলো মাথায় রাখত৷ আমরা মনে করি, নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা কিন্তু নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ৷ তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন, আমরাও নিরপেক্ষভাবে কাজ করি৷ আমরা পর্যবেক্ষণের সময় হঠাৎ কোথাও গোলযোগ দেখলে দ্রুত কমিশনকে অবহিত করতে পারি৷ তারাও সেখানে দ্রুত ‘ফোর্স' পাঠাতে পারেন৷ এমন পরিস্থিতিতে আমরা কিন্তু তাদের অনেক সহযোগিতা করেছি৷

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর আপনাদের দেয়া সুপারিশের কতটুকু বাস্তবায়ন হয়?

২০ বছর আগে আমরা যখন কাজটা শুরু করি, তখন নির্বাচন কমিশনের সাথে আমাদের সম্পর্ক মাত্র গড়ে উঠছিল৷ এটা হতে হতে একটা পর্যায়ে নিবিড়ভাবে কাজ হচ্ছিল৷ নির্বাচন কমিশনের কিন্তু সবচেয়ে ‘ন্যাচারাল অ্যালাই' হলো পর্যবেক্ষকরা৷ কারণ, নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ সাংবিধানিক ‘বডি' এবং সেটার কোনো দলীয় চরিত্র থাকে না৷ পর্যবেক্ষকদেরও কোনো দলীয় চরিত্র থাকে না৷ এ কারণে তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল৷ নির্বাচন কমিশন সেটা মনে করেছিল এ কারণেই৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য