1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চ্যালেঞ্জের মুখে এসডিজি

১১ জুলাই ২০১৭

সার্বিক স্কোর বৃদ্ধি পেলেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির র‍্যাংকিংয়ে সার্কভুক্ত দেশগুলোর তুলনায় এখনো পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ৷

https://p.dw.com/p/2gMGg
Bangladesch Winter in Munshigonj
ছবি: Imago/ZumaPress

এসডিজি পূরণে আরো ১৩ বছর সময় থাকলেও যে গতিতে এগোচ্ছে বাংলাদেশ, তাতে সে লক্ষ্য অর্জন দুরূহ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ৷ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, এমডিজিতে যে আপেক্ষিক সাফল্য ছিলো, এসডিজিতে সে সম্ভাবনা কম দেখছেন তিনি৷

‘‘২০৩০ সালের মধ্যে অল ফর্মস অফ পভার্টি ইরাডিকেট করার লক্ষ্য রয়েছে এসডিজিতে৷ এই সম্ভাবনা খুবই কম, কারণ অনেক পভার্টি পকেটস আছে, যেখানে সরকার এখন পর্যন্ত পৌঁছাতেই পারেনি,'' বলেন এই অর্থনীতিবিদ৷ এছাড়া, অর্থনৈতিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন অধ্যাপক আকাশ৷

১৫৭টি দেশের মধ্যে ১৭টি এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার তুলনামূলক চিত্র নিয়ে ২০১৭ সালের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক'৷ এবার দ্বিতীয়বারের মতো এই প্রতিবেদন প্রকাশ করলো সংস্থাটি৷

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে শুধু শ্রীলঙ্কাই পেরেছে র‍্যাংকিংয়ে বেশকটি দেশকে টপকে যেতে৷ বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারেরও হয়েছে কয়েক ধাপ উন্নতি৷

গত বছর সার্বিক সূচকে ৪৪.৪ পয়েন্ট নিয়ে ১১৮ নম্বরে ছিলো বাংলাদেশ৷ এবার ৫৬.২ স্কোর করেও দুই ধাপ পিছিয়ে ১২০ নম্বরে চলে গিয়েছে বাংলাদেশ৷ পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে গড় স্কোর ৬৩.৩৷

প্রতিবেশী ভারতের অবস্থানেও এসেছে পরিবর্তন৷ গত বছর ৪৮.৪ স্কোর করে ১১০-এ ছিল দেশটি৷ এবার স্কোর বেড়ে ৫৮.১ হলেও অবস্থান নেমে গেছে ১১৬তে৷ নেপাল গেল বছর ৫১.৫ নিয়ে ১০৩ নম্বরে থাকলেও এবার ৬১.৬ নিয়ে নেমে গেছে ১০৫-এ৷ ২০১৬ সালে ভুটান ছিলো ৫৮.২ পয়েন্ট নিয়ে ৮২তম স্থানে৷ এবার দেশটির স্কোর ৬৫.৫ হলেও অবস্থানে অবনমন ঘটেছে এক ধাপ৷

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা৷ গত বছর ৫৪.৮ স্কোর করে ৯৭তম স্থানে থাকলেও, এবার ৬৫.৯ স্কোর করে দেশটি পৌঁছে গেছে ৮১তম অবস্থানে৷

বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার গত বছর মাত্র ০.১ স্কোর বেশি করে ছিল ১১৭ নম্বর স্থানে৷ তবে এবার দেশটি ভারতকেও পেছনে ফেলে ৫৯.৫ স্কোর করে উঠে এসেছে ১১০ নম্বর স্থানে৷

র‍্যাংকিংয়ে সার্কের মধ্যে শুধু পাকিস্তানই আছে বাংলাদেশের পেছনে৷ গত বছর ৪৫.৭ স্কোরে বাংলাদেশের চেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে ১১৫তে ছিলো পাকিস্তান৷ এবার ৫৫.৬ স্কোর করে বাংলাদেশের চেয়ে দুই ধাপ নিচে ১২২-এ আছে দেশটি৷

এক্ষেত্রে এই বছর সূচক বৃদ্ধি এবং নতুন দেশ যুক্ত হওয়াকেও বিবেচনায় রাখতে বলছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ- সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান৷ ‘‘এবার ৯৯টি সূচক এসেছে, যদিও অফিশিয়ালি ২৩০ টা সূচক আছে৷ সুতরাং প্রতিবেদনের বাইরেও কিছু সূচক আছে, যেগুলোতে বাংলাদেশ ভালো করেছে, কিন্তু এই সূচকের মধ্যে আসেনি,'' বলেন তিনি৷

"জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় আরো অর্থায়ন করতে হবে"

এসডিজি পূরণ করতে পারলে সবুজ, কিছু পূরণ হলে হলুদ, আরও কাজ করতে হবে এমন লক্ষ্যমাত্রার জন্য কমলা এবং বেশ পিছিয়ে থাকা লক্ষ্যমাত্রার জন্য লাল রং ব্যবহার করা হয় প্রতিবেদনে৷

বাংলাদেশ ১৭টি লক্ষ্যের ১০টিতেই আছে লাল ক্যাটাগরিতে৷ এগুলো হচ্ছে, এসডিজি-২: ক্ষুধা দূর করা, এসডিজি-৩: সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা, এসডিজি-৪: মানসম্মত শিক্ষা, এসডিজি-৭: সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, এসডিজি-৮: মানসম্মত কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নতি, এসডিজি-৯: শিল্প ও অবকাঠামো উদ্ভাবন, এসডিজি-১১: টেকসই নগর ও নাগরিক উন্নয়ন, এসডিজি-১৪: পানিসম্পদ উন্নয়ন, এসডিজি-১৬: শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং এসডিজি-১৭: লক্ষ্য অর্জনে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব৷

বাকি সাত ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ হলুদ ও কমলা তালিকায় থাকলেও কোন ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ এখনও সবচেয়ে ভালো সবুজ তালিকায় পৌঁছাতে পারেনি৷ লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে এসডিজি-১: দারিদ্র্য দূরীকরণেই সবচেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘এইসব লক্ষ্যে যারা তুলনীয় দেশ, তাদের সাথে সমান্তরালে এগোতে হলে বা তাদের ক্রস করতে হলে আমাদের এখানে অর্থের বিনিয়োগের একটা ব্যাপার আছে৷ সেই অর্থ যাতে ভালোভাবে ব্যবহার হয়, সেদিকেও নজর দেয়ার ব্যাপার আছে৷''

তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এসডিজি-১৭ অনুযায়ী যে বৈশ্বিক সহায়তা পাওয়া উচিত ছিলো, সেটিও বাংলাদেশ ঠিকমতো পায়নি বলে মনে করেন তিনি৷ এর ফলেও কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে৷

ভারত এবং পাকিস্তানও কোন লক্ষ্যমাত্রায় সবুজ তালিকায় নেই৷ তবে জলবায়ু পরিবর্তন রোধ এবং টেকসই দারিদ্র্য দূরীকরণ, এই দুটিতে সবুজ তালিকায় আছে ভুটান৷ জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লক্ষ্যমাত্রায় সবুজ তালিকায় আছে নেপালের নামও৷

"ভালো প্রস্তাব কার্যকর করায় বাংলাদেশের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ দুর্বলতা আছে"

তবে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি বেশি মোকাবিলা করছে৷ ফলে, সার্বিকভাবে বাংলাদেশ তালিকায় পিছিয়ে থাকলেও নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বেশ ভালো করছে বলেই মনে করছেন মুস্তাফিজুর রহমান৷ কিন্তু এটাকে যথেষ্ট মনে করছেন না তিনি৷ ‘‘এসব দেশ সূচকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, আমরা যেহেতু জলবায়ুর প্রভাবের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে অনেক নাজুক পরিস্থিতিতে আছি, আমাদের সেখানে আরো বেশি অর্থায়ন করতে হবে,'' বলেন তিনি৷

এমডিজি শেষ হওয়ার পর যখন ১৫ বছর মেয়াদি এসডিজি নিয়ে আলোচনা চলছিলো, তখনই বাংলাদেশ সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে৷ ফলে এরই মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে বলে মনে করেন মুস্তাফিজুর রহমান৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা এমডিজিতে ভালো করেছি এডুকেশনে, এখন আমাদের নজর দিতে হবে কোয়ালিটি এডুকেশনে৷ এসডিজিতে আমাদের স্বাস্থ্যের যে জায়গাগুলোতে নজর দিতে হবে, সেগুলো এমডিজি থেকে অনেক অগ্রসর৷ ফলে এসব ক্ষেত্রে আরো রিসোর্স দরকার হবে৷''

সরকারি উদ্যোগের সাথে বেসরকারি খাতকে সমন্বয় করে অষ্টম এবং নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নিয়ে এখন থেকেই কাজ শুরু করার ওপরও জোর দেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান৷

তবে এখনই এতোটা আশাবাদী হতে পারছেন না অধ্যাপক এম এম আকাশ৷ তুলনামূলক দরিদ্র প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করছেন সুশাসন ও নীতির অভাবকে৷

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের যেকোন ভালো প্রস্তাব, ভালো কথা কার্যকর করার ক্ষেত্রে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ দুর্বলতা আছে, পলিটিক্যাল মিসগভর্নেন্স আছে৷ রাজনৈতিক সুশাসন তৈরি হচ্ছে না৷ প্রশাসনিক দক্ষতা এবং প্রশাসনিক সুশাসনও দরকার৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য