1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ঐ সময় যাদের জন্মও হয়নি তাদেরও মুক্তিযোদ্ধা...’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১২ ডিসেম্বর ২০১৭

স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি৷ আজও স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী শক্তি তৎপর, পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িক তথ্য-উপাত্ত৷ তবে প্রাপ্তিও আছে৷ এই নিয়েই কথা বলছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক৷

https://p.dw.com/p/2p6y1
Pakistan Bangladesh Bürgerkrieg
ছবি: AP

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা এখন কেমন আছেন?

আ ক ম মোজাম্মেল হক: আমি মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দেখি তাঁদের৷ আমার দৃষ্টিতে ইনশাল্লাহ তাঁরা ভালো আছেন৷

বাংলাদেশে এখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাজেট কত?

মুক্তিযোদ্ধাদের ‘ওয়েলফেয়ার'-এর জন্য বাজেট তিন হাজার কোটি টাকার উপরে৷ তবে আমরা আরো কিছু পরিকল্পনা নিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা লাগবে৷ যত জায়গায় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা৷ যতগুলো বদ্ধভূমি আছে, সেগুলোরও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন৷ প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স গঠন করা, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়িঘর তৈরি করে দেয়া৷ এছাড়া সোহরাওয়ার্দি উদ্যানকে মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছি এবং সেটা প্রধানমন্ত্রী অনুমোদনও করেছেন৷

এখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত বাংলাদেশে?

বাংলাদেশে এখন ২ লাখ ৩৮ হাজারের মতো মুক্তিযোদ্ধা আছেন৷

Liberation War Affairs Minister AKM Mozammel Haque for dwAlaap - MP3-Stereo

মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কেন কমে-বাড়ে?

এখন বাড়ার কারণ হচ্ছে আমরা কিছু ‘ক্রাইটেরিয়া' যোগ করেছি, যেমন বীরাঙ্গনা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যাঁরা কাজ করেছেন, মুজিবনগর সরকারে যত কর্মচারী ছিল এবং যতজন মেডিকেল কোর-এ মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করায় এই সংখ্যা বাড়ছে৷ এর সঙ্গে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দিন দিন কমছে৷ অনেকেই সত্যি সত্যি মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে৷ তবে এ মুহূর্তে আদালতের নির্দেশের কারণে অনেকগুলো কাজ আটকে আছে৷ আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না৷

আপনি কয়েকদিন আগে সংসদে বলেছেন যে আদালত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যাঁদের নাম তালিকাভুক্ত করতে বলেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের অনেকের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর৷ বিষয়টা একটু ব্যাখা করবেন?

শুধু পাঁচ বছর না, যাদের জন্মই হয়নি তাদেরও করতে বলেছে৷ এ বিষয়ে আমি শিগগিরই কথা বলব৷ এটা কোনোভাবেই ১০২ নম্বর আর্টিকেলে পড়ে না৷ সংবিধানের ১০২ নম্বর আর্টিকেলে বলা আছে, মানুষের মৌলিক অধিকার বা জন্মগত অধিকারের কথা৷ কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হওয়া কোনো মৌলিক অধিকার না, এটা অর্জিত অধিকার৷ ১০২ ধারায় মামলা যেভাবে নেয়া হচ্ছে, আমি মনে করি এটা এই ধারায় পড়ে না৷ আসলে এটার অপপ্রয়োগ হচ্ছে৷ এ ব্যাপারে আমরা আইনজীবীদের মতামত নিচ্ছি৷ পরবর্তীতে বিষয়টা আমরা জাতির সামনে তুলে ধরব৷

জাল সার্টিফিকেট নিয়ে কয়েকজন সচিবও ধরা পড়েছেন৷ এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

তাদের চাকরি চলে গেছে৷ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে৷ তাদের ‘প্রভিডেন্ট ফান্ড' আটকে গেছে৷ আমরা তাদের চাকরিচ্যুত করতে পারি, আর্থিক দণ্ড দিতে পারি....সেই কাজগুলোই করেছি৷

মুক্তিযোদ্ধাদের জাল সার্টিফিকেট রোধে মন্ত্রণালয় কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

এগুলো অধিকাংশই নিজেরা তৈরি করে নিয়েছে৷ অবিকল মন্ত্রণালয়ের কাগজ জাল করে সার্টিফিকেট তৈরি করে নিয়েছে এরা৷ আবার আমাদের কেউ-ও তাদের এই কাগজ ‘সাপ্লাই' দিয়ে থাকতে পারে৷ এখন আমরা পুরো তালিকা ওয়েবসাইটে দিয়েছি৷ যাদের নাম বাদ গেছে, তারা অবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে আমরা তাদের নাম যুক্ত করে দেবো৷ এর বাইরে আর কোনো তালিকা নেই৷ অন্য যারা আছে, তাদেরগুলো আমরা বাতিল বলে ঘোষণা করেছি৷ 

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটের মাধ্যমে অনেক ছেলে-মেয়ের চাকরি হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে?

এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নোট দিয়েছি যে, এমন কেউ থাকলে তাকে যেন চাকরিচ্যুত করা হয়৷ শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং ফৌজদারি মামলা করার জন্যও অনুরোধ করেছি আমরা৷ 

সরকার তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কাজ করছে৷ কিন্তু চেতনাবিরোধী শক্তিই তো মনে হচ্ছে শক্তিশালী৷ এর কারণ কী?

মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে শতকরা ৩০ ভাগ লোক ১৯৭০ সালেও ছিল৷ তখন কিন্তু এই ৩০ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি৷ সেই ৩০ ভাগ জামায়াতে ইসলাম, আল-বদর, আল-শামস, মুসলিম লীগে রয়ে গেছে৷ তারা তো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না৷ তাই তারা রয়ে গেছে৷ দুঃখের বিষয়, এদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে এমন কিছু লোকও দলে ঢুকেছে৷ তিনভাগের এক ভাগ লোক তো সবসময় ছিল, এখনো আছে৷ তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কতভাগ মানুষ সেটা ব্যালটের মাধ্যমে ঠিক হয়৷ মিছিল-মিটিং করে কতভাগ নাগরিক? এক বছরের মধ্যে তো নির্বাচন৷ তখন জাতিই প্রমাণ করবে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে না বিপক্ষে৷

এখনো পাঠ্যপুস্তকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী লেখা পাওয়া যাচ্ছে কেন?

এটা স্বাধীন দেশ, আদালত তো আরো স্বাধীন৷ দুর্নীতিবাজরা আদালতে গেলেই প্রথম শুনানিতে যে সুবিধা পায়, সেটা হলো – আইনের কথা অনুযায়ী ধরে নিতে হবে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি নিদোষ৷ আইন ব্যবস্থার কারণে এটা প্রমাণ করাও কঠিন৷ পত্রিকায় লেখা যেমন সহজ, প্রমাণ করা ততটাই কঠিন৷ আমাকে কেউ ঘুস দিলে সে কি প্রমাণ রেখে কাজটা করবে? 

এখনো অনেক স্কুল ও মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয় না, মন্ত্রণালয় কি এটা জানে?

আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে তাগিদ দিয়েছি৷ বলেছি বিষয়টার দিতে লক্ষ্য রাখতে৷ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া, জাতীয় পতাকা উড়ানো প্রাক ঐতিহাসিক যুগ থেকে চলে আসছে৷ তাই কেউ যদি জাতীয় পতাকা না তোলে তাহলে সেটা আইনবিরোধী কাজ৷ এখন মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিতেও সরকারের লোক আছে৷ তাঁরা নিশ্চয় বিষয়টা দেখবে৷ আগে মাদ্রাসাগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না৷ এখন সরকার তাদের অনুদান দিচ্ছে, অনুমোদনও দিচ্ছে৷ তাই কেউ সংবিধান অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে সরকারই৷

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রসারে সরকার কী করছে?

এটা করতে হবে একেবারে শিশুকাল থেকে৷ কারণ একবার শিশুদের মগজে অন্যকিছু ঢুকে গেলে, তা বের করা কঠিন৷ এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে আমি সরকারকে পরামর্শ দেব, একেবারে শিশুকাল থেকে যেন প্রতিটি নাগরিক মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বড় হয়ে উঠে৷ আমাদের দুর্ভাগ্য যে দেশে এমন মানুষও আছে, যারা রাষ্ট্রের সৃষ্টিই মানে না৷ যেমন জামায়াতে ইসলামী কখনও বলেনি মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল৷ কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত তো ভুল হতে পারে৷ কিন্তু এখনও সুযোগ পেলে তারা বলে যে, তাদের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল৷ দেশের স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব এখনো তারা মেনে নেয়নি৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য