1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা আতঙ্কে গুজবের শিকার মুরগি

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৩ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাজারে৷ সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মুরগির মাংস বিক্রিতে৷ তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মুরগি নিয়ে আশঙ্কা অমূলক৷

https://p.dw.com/p/3ZNBI
Indien Neu Delhi Coronavirus
ছবি: DW/A. Ansari

বিশ্ব কাঁপছে ভাইরাসের ভয়ে৷ চীন বা ইতালিতে যে মৃত্যু ও ত্রাস ছড়িয়েছে করোনা ভাইরাস, তার আঁচ এসে পড়েছে সাগরপারে৷ ভারতসহ উপমহাদেশে এখন ব্যাপক আতঙ্ক৷ বৃহস্পতিবার ভারতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে৷ কর্নাটকে মারা গেয়েছেন এক বৃদ্ধ৷ তবে তার অনেক আগে থেকেই রাজ্যে রাজ্যে আতঙ্কের গ্রাফ ক্রমশ উপর দিকে উঠেছে৷ পশ্চিমবঙ্গও তার ব্যতিক্রম নয়৷ রাস্তাঘাটে সস্তা থেকে দামি, নানা ধরনের মাস্ক পড়ে মানুষ ঘুরছে৷ ফোন করলেই শোনা যাচ্ছে ভাইরাস সম্পর্কিত সতর্কবাণী৷ সংবাদমাধ্যম ভরে আছে এই সংক্রান্ত খবরে৷  স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে মানুষের খাদ্যাভ্যাস, তথা বাজারে৷

সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মুরগির মাংস বিক্রিতে৷ বিদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরপরই সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব রটে যায়, মুরগির মাংস থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে৷ এর জেরে এই মাংস খাওয়া বন্ধ রেখেছে অনেক মানুষ৷ পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা থেকে জেলা শহরগুলিতে এই মাংসের ক্রেতা নেই বললেই চলে৷ দোকানে দোকানে চেনা ভিড় উধাও৷ আতঙ্ক এতটাই প্রবল যে, গত একমাসে মুরগির বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে৷ বিক্রি না হওয়ায় দামও কমেছে অর্ধেক৷ সাধারণভাবে স্থানভেদে যে মাংস প্রতি কেজি ১৫০ টাকার আশেপাশে বিক্রি হয়, তা কোনো কোনো এলাকায় ৮০ টাকাতেও পাওয়া যাচ্ছে৷ তবু ক্রেতা নেই৷ এর ফলে অনেক মুরগি ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন৷ প্রবল ধাক্কা খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পোল্ট্রি শিল্প, যদিও পাঁঠার মাংসের বিক্রিতে এর প্রভাব পড়েনি৷ দোল উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বেড়েছে এই মাংসের দাম৷

অর্ধেক সিদ্ধ মাছ বা মাংস খেলে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে: শিবকিঙ্কর দাস

মাছের বাজারও এই গুজব থেকে রেহাই পায়নি৷ তবে সৌভাগ্যের বিষয় হলো, এক্ষেত্রে নিশানা শুধুমাত্র তেলাপিয়া মাছে৷ মাংসের মতোই এই মাছের সঙ্গে চীন, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের যোগ আবিষ্কার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো হয়েছে৷ এই মাছেও নাকি করোনাভাইরাসের বীজ রয়েছে৷ এর ফলে তেলাপিয়া মাছ ব্রাত্য হয়ে উঠেছে৷ যদিও অন্য কোনো মাছের ক্ষেত্রে এই অপপ্রচার না থাকায় মৎস্যপ্রিয় বাঙালির খাদ্যাভ্যাসে ছেদ পড়েনি৷ 

পোল্ট্রি শিল্প সঙ্কটের মুখে পড়ায় পশ্চিমবঙ্গের প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে, নির্ভয়ে মুরগির মাংস খান৷ এতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই৷ যদিও এই প্রচারের সুফল এখনও দেখা যাচ্ছে না৷ সরকারের মতো একই সুরে প্রাণিবিজ্ঞানীরাও বলছেন, মাংস বা মাছ থেকে এই রোগের শিকার হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই৷  মৎস্য বিশেষজ্ঞ শিবকিঙ্কর দাসের বক্তব্য,  করোনাভাইরাসপ্রথম চিহ্নিত হয়েছিল একটি মাছের বাজার থেকে৷ সেখানে গিয়েছিল এমন মানুষদের মধ্যে প্রথম এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ যে সব রোগ প্রাণী থেকে মানুষের দেহে আসে, সেই রোগ ছড়িয়ে পড়ার অনুকূল পরিবেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারগুলিতে রয়েছে৷ এখানে একইসঙ্গে জীবন্ত ও মৃত মাছ এবং পশু-পাখির মাংস বিক্রি হয়৷ ভারত, বাংলাদেশ থেকে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডে  এটা দেখা যায়৷ মাছের বাজার থেকে ছড়িয়েছে বলে তেলাপিয়াকে নিয়ে গুজবও ছড়িয়েছে৷' অধ্যাপক দাসের পরামর্শ, ‘নির্ভয়ে তেলাপিয়াসহ অন্যান্য মাছ-মাংস খান৷ শুধু রান্নার প্রক্রিয়াটি যেন সঠিক হয়৷ রান্নার আগে ঠিকভাবে পরিষ্কার করতে হবে৷ অর্ধেক সিদ্ধ মাছ বা মাংস খেলে ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে৷’’

প্রোটিনের অভাবে শুধু করোনা ভাইরাস নয়, যে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে: ডা.সিদ্ধার্থ জোয়ারদার

মুরগির মাংস নিয়ে অভয় দিচ্ছেন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ সিদ্ধার্থ জোয়ারদারও৷ তিনি আবার বেশি পরিমাণে প্রোটিন খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন৷ অধ্যাপক জোয়ারদারের বক্তব্য, ‘‘শরীরের দরকার প্রাণিজ প্রোটিন৷ সস্তায় প্রোটিন পাওয়া যায় মুরগির মাংস ও ডিম থেকে৷ মাংস না খেলে প্রোটিনের ঘাটতি হবে৷ তাতে করোনাভাইরাস শুধু নয়, মানবদেহে অন্য যে কোনো ভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ তাই পর্যাপ্ত প্রোটিন খেতে হবে৷'' এ ধরনের পরামর্শের কথা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে৷ কিন্তু, তাতে মুরগির মাংসে বাঙালির রুচি ফেরানো যাচ্ছে না৷ ক্রমশ বাড়ছে শাকাহারের প্রবণতা৷