1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা মোকাবিলায় ভেষজ ওষুধ?

১৫ জুন ২০২০

কোভিড-১৯ গোটা বিশ্বে অভূতপূর্ব সংকট সৃষ্টি করছে৷ এই ভাইরাস মোকাবিলায় টিকা ও ওষুধসহ নানারকম চিকিৎসা আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে৷ জার্মানির গবেষকরা এ ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3dlwq
ছবি: picture-alliance/dpa/J. F. Zuniga

করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে৷ ফলে অনেক প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে৷ জার্মানিতে একদল গবেষক দীর্ঘদিন ধরে করোনার মতো ভাইরাসের ওষুধ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে কিছু সাফল্য পেয়েছেন৷ ভাইরোলজিস্ট ড. ক্রিস্টিন ম্যুলার বলেন, ‘‘আমরা এক শ্রেণির অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট পরীক্ষা করে দেখেছি যে, সেগুলি অনেক বিপজ্জনক ভাইরাস কাবু করতে পারে৷’’

এবোলা, লাসা ও জিকার মতো মারাত্মক ভাইরাস মোকাবিলার ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া গেলেও এগুলি কি কোভিড-১৯-কেও কাবু করতে পারবে?

প্রাকৃতিক এই উপাদানের নাম সিলভেস্ট্রল৷ এটিকে ঘিরে প্রত্যাশা বাড়ছে৷ এশিয়ার আগলাইয়া গোত্রের মেহেগোনি গাছ থেকে এই সিলভেস্ট্রল পাওয়া যায়৷ বোর্নিও দ্বীপে বহুকাল ধরে এটি ভেষজ চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়৷

এই উপাদানকে ঘিরে বায়োকেমিস্ট হিসেবে প্রো. আর্নল্ড গ্র্যুনভেলারের গভীর কৌতূহল জেগেছিল৷ এক গবেষকদলের সঙ্গে তিনি বিপজ্জনক এবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সেটি প্রয়োগ করেছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এখনো পর্যন্ত শুধু চলতি শতাব্দীর শুরুতে, ২০০১ সাল নাগাদ ক্যানসার গবেষণার ক্ষেত্রে সিলভেস্ট্রলের উল্লেখ পাওয়া যেত৷ তারপর মারবুর্গ শহরে আমরাই সবার আগে এবোলা আক্রান্ত কোষের উপর এটি প্রয়োগ করি৷ সেই পরীক্ষায় দেখা গেল, যে সিলভেস্ট্রল কোষের মধ্যে এবোলা ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি বেশ ভালোভাবে প্রতিরোধ করতে পারে৷’’

শুধু এবোলার ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটে না৷ ভাইরাস একবার শরীরে প্রবেশ করলে সেটি কোষের মধ্যে ঢুকে সেটির চরিত্র বদলে দেয়৷ ভাইরাস শরীরের কোষকে তার নিজস্ব জিনোটাইপ নকল করতে বাধ্য করে৷ এভাবে ভাইরাসের দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটে৷ সিলভেস্ট্রস সেই প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়৷ সেটি কোষের এমন এক এনজাইম বা উৎসেচকের পথে বাধা সৃষ্টি করে, যেটি বংশবৃদ্ধির জন্য দায়ী৷

এই গবেষকরা প্রতিষেধকের বদলে ওষুধের অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্টের সন্ধান করছেন৷ কারণ টিকার ক্ষেত্রে প্রায়ই একটি দুর্বলতা দেখা যায়৷

সাধারণত শরীর অ্যান্টিবডির সাহায্যে ভাইরাসের মোকাবিলা করে৷ টিকা অথবা সংক্রমণের পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ প্রণালী সেই ক্ষমতা গড়ে তোলে৷ ইনফ্লুয়েন্জার মতো ফ্লু ভাইরাসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি ভাইরাসের বাইরের অংশে আটকে যায়৷ কিন্তু ভাইরাসের নিজস্ব প্রোটিন রূপান্তর, অর্থাৎ পরিবর্তন ঘটিয়ে চলে এবং এভাবে শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দেয়৷ ফলে সেই অনুযায়ী টিকার চরিত্রও বদলাতে হয়৷

মারবুর্গের গবেষকরা ভিন্ন পথ গ্রহণ করছেন৷ তাঁদের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোষের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, যেখানে খুব কম পরিবর্তন ঘটে৷ গিসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড, ক্রিস্টিয়ান ম্যুলার বলেন, ‘‘এই সব বিষয় খুবই স্থিতিশীল এবং ভাইরাসের প্রোটিনের মতো মোটেই বদলে যায় না৷ ফলে ভাইরাসের প্রোটিনের মতো প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম৷’’

এই গবেষণার ফলাফলের খটমট নাম ‘সিআর-৩১-বি৷ কিন্তু চীনের উহান শহর থেকে আসা ভাইরাস মোকাবিলার ক্ষমতা সেটির আছে কি? মেডিকাল ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের ড. ক্রিস্টিন ম্যুলার মনে করেন, ‘‘কমপক্ষে দুই ধরনের করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে আমাদের এই পদার্থ যে কার্যকর অ্যান্টি-ভাইরাল প্রভাব ফেলে, তা আমরা আগেই দেখাতে পেরেছি৷ এ ক্ষেত্রে কোষের যে উপাদান আটকে দেওয়া হচ্ছে, বর্তমানে প্রচলিত ভাইরাসেরও সেটির প্রয়োজন রয়েছে৷ তাই এই ভাইরাসকেও কাবু করতে পারবো বলে আমরা আশা করছি৷’’

সেল কালচারের উপর পরীক্ষা চালিয়ে ক্রিস্টিন ম্যুলার ও তাঁর সহকর্মী ভিবকে ওবারমান এর প্রভাব দেখালেন৷ দেখা গেল, অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট না থাকলে ভাইরাস সেল কালচারের উপর হামলা চালাচ্ছে৷ ডান দিকে সদ্য আবিষ্কৃত কৃত্রিম অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট-সহ নমুনা রয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে প্রায় সব পরিক্ষীত ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি আটকানো গেছে৷

গবেষণাগারে সেল কালচারে এই প্রক্রিয়া এখনো অত্যন্ত ভালো ফল দেখাচ্ছে৷ প্রো. আর্নল্ড গ্র্যুনভেলার বলেন, ‘‘ক্যানসার গবেষণার ক্ষেত্রে সিলভেস্ট্রল বা সিআর-৩১-বি-র মতো একই রকম কাঠামোর এক অণু রয়েছে৷ প্রি-ক্লিনিকাল পরীক্ষায় সেটি উত্তীর্ণ হয়েছে৷’’

কোনো ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের আগে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন হয়৷ সে কারণে ওষুধ বাজারে আসতে সাধারণত দশ থেকে পনেরো বছর সময় লাগে৷ সিলভেস্ট্রলের ক্ষেত্রে অবশ্য অসংখ্য গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে৷ তাই করোনা ভাইরাসের ওষুধ হিসেবে এটি দ্রুত হাতে পাওয়া যাবে, এমন আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে৷

স্টেফানি ক্র্যুগার/এসবি