1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত: সঠিক নাকি সঠিক নয়?

২১ আগস্ট ২০২০

করোনায় বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, লাতিন অ্যামেরিকায় সংক্রমণের প্রথম ঢেউ এখনো শেষ হয়নি৷ অন্যদিকে, ইউরোপে শুরু হয়েছে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ৷ কড়াকড়ি শুরু হয়েছে আবার৷

https://p.dw.com/p/3hHhY
ছবি: DW/H. U. R. Swapan

ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে এবং মার্চে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়৷ দু'টি দেশেই সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিলো একই রকম৷ অর্থাৎ বাসায় থাকার ব্যাপারে কড়াকড়ি৷ অফিস আদালত-দোকানপাট বন্ধ৷ জুন মাস থেকে জার্মানিতে করোনা সংক্রমণ অনেকটা কমে এলে শিথিল হয় কড়াকড়ি৷

এর আগে বেশিরভাগ মানুষই ঘরে বসে অফিসের কাজ করছিলেন৷ জুন থেকে স্বল্প সংখ্যক মানুষের অফিসে যাতায়াত অনুমোদন হল৷ কিন্তু এক্ষেত্রেও কিছু বিধি নিষেধ আছে: যেমন একটি বড় কক্ষে তিনজনের বেশি মানুষ নয়, মাঝারি কক্ষে দুইজন এবং ছোট কক্ষে মাত্র একজন বসতে পারবে৷ অর্থাৎ বাকিদের বাসায় বসেই করতে হবে অফিস৷

অন্যদিকে, বাংলাদেশে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকবার কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত শিথিল হয়েছে৷ প্রথমে এপ্রিল মাসে গার্মেন্টস খোলার সিদ্ধান্ত, এরপর ঈদে কেনাকাটার জন্য দোকান খোলার সিদ্ধান্ত, সর্বশেষ অফিস আদালত খুলে দেয়া৷ কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ৷

অন্যদিকে, জার্মানিসহ বেশ কয়েকটি দেশ, যেখানে সংক্রমণ কমে গেছে সেখানে স্কুল খুলে দেয়া হয়েছে, তবে কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে৷ জার্মানিতে অবশ্য মাস্ক পরে স্কুল করা নিয়ে বেশ বিতর্ক উঠেছে৷

এখন বাংলাদেশের দিকে যদি তাকান, তাহলে একটি পরিবারে বাবা-মা বা অন্য সদস্যরা যদি অফিসে যান এবং করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে পরিবারের শিক্ষার্থীরা তো এ থেকে মুক্ত থাকছেন না৷ ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে লাভ কি? অন্যদিকে, ছোট শিশুদের একা বাসায় রেখে বাবা-মা'র অফিস করা সম্ভব?

জার্মানিতে কোন শিক্ষার্থীর সামান্য ঠান্ডা লাগলেও সাথে সাথে অভিভাবককে ডেকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকতে৷

তবে জার্মানিতে কড়াকড়ি একেবারে উঠিয়ে নিতে বিক্ষোভ হয়েছে বার্লিনে৷ অন্যদিকে, স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে সম্প্রতি হয়েছে মাস্কবিরোধী মিছিল৷ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ সময় মাস্ক পরে থাকা নাকি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷

এদিকে, ভারত ও বাংলাদেশে করোনার প্রথম দফা সংক্রমণ শেষ না হলেও ইউরোপে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ৷ জার্মানির কয়েকটি রাজ্যে আবার নতুন করে সংক্রমণ বেড়ে চলেছে৷ অন্যদিকে, ইটালি আর ফ্রান্সেও বেড়েছে সংক্রমণ৷ এই দুটি দেশে কিছুদিন আগে কড়াকড়ি প্রায় উঠে গিয়েছিল৷ কিন্তু চলতি মাসে ফ্রান্সে আবারও মাস্ক পরা এবং ইটালিতে রাতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷ ইটালিতে ডিস্কো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷

জার্মানিতে এখনও দোকানপাটে নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের প্রবেশ নিশ্চিত করা হচ্ছে৷ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷

দোকানে, অফিসে, ট্রামে, ট্রেনে, বাসে, বিমানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক৷ তবে বিমানে মাঝের সিট খালি রাখা হচ্ছে না বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন৷

ব্রিটেনেও নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার ফলে কড়াকড়ি আবার শুরু হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারি, মার্চের চেয়ে আগস্টে সংক্রমণ অনেক বেড়েছে৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা৷ ফলে দেশটির হোয়াইট হাউসের করোনা-বিষয়ক টাস্কফোর্সের সমন্বয়ক ডা. ডেবরা ব্রিকস জনগণকে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নির্দেশাবলি মেনে চলা, মাস্ক পরা ও সামাজিক ব্যবধান মেনে চলার ওপর আবার গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷

বিশ্বে করোনা নিয়ন্ত্রণে দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিল নিউজিল্যান্ড ও ভারতের কেরালা৷ নিউজিল্যান্ডে দেখা দিয়েছে আবার সংক্রমণ, পিছিয়েছে নির্বাচন৷ কেরলে জুলাই থেকে শুরু হয়েছে গোষ্ঠী সংক্রমণ৷ ফলে করোনার গতিপ্রকৃতি আসলে বিশেষজ্ঞরাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না৷

HA Asien | Amrita Parvez
অমৃতা পারভেজ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার বিক্ষোভে যে বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন, সে কারণে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে কিনা সে বিষয়ে অবশ্য কিছু জানা যায়নি৷

ব্রাজিলে করোনার সংক্রমণ এবং মৃত্যু বেড়েই চলেছে৷ জুলাই মাসে করোনায় আক্রান্ত হন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বলসেনারো৷ এর আগেই তিনি মাস্ক পরা সংক্রান্ত নিয়মের কড়াকড়ি শিথিল করেন, এবং আঞ্চলিক গভর্নরদের লকডাউন শিথিল করার আহ্বান জানান৷ তিনি আগেই বলেছিলেন, ব্রাজিলে অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষের করোনা হবেই, কোনও ভাবেই তা আটকানো যাবে না৷ তার মতে, লকডাউনের ফলে অর্থনীতি ধসে পড়বে, সাধারণ মানুষ আরও সমস্যায় পড়বে৷ করোনা ধরা পড়ার কয়েক দিন আগে পর্যন্তও সমর্থকদের মাঝে থেকেছেন প্রেসিডেন্ট৷ তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন৷ মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে৷ এমনকী, তাঁর বাসস্থানের বাইরে প্রতিবাদীদের মঞ্চেও পৌঁছে গিয়েছেন৷ সামাজিক দূরত্বের ধার ধারেননি৷

কখনো মনে হয় ব্রাজিল বা বাংলাদেশ সরকার যা করছে ঠিক না, আবার মনে হয় না করে উপায় কি! বাংলাদেশে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ অনেক৷ অনেকে প্রথম কয়েক মাস ত্রাণ দিলেও টানা পাঁচ মাস এই মানুষগুলো কাজ না করে কীভাবে বেঁচে আছে? এই মহামারী যদি আরও দীর্ঘ সময় ধরে থাকে, তাহলে তো এরা না খেয়েই মারা যাবে৷ গত কয়েক মাসে কত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পুঁজি শেষ হয়ে গেছে, চাকরি হারিয়েছে কত মানুষ৷ ফলে কোন সিদ্ধান্তটা যে সঠিক সে নিয়ে দ্বিধা থেকেই যায়!

২৬ মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...