1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনায় ত্রাতা পুলিশ

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৭ এপ্রিল ২০২০

লকডাউনের পরেও প্রথম প্রথম নিজেদের পুরনো ভূমিকাতেই দেখা যাচ্ছিল আইনের রক্ষকদের। দিন যত গড়িয়েছে, ততই ভারতে ত্রাতার ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে পুলিশকে।

https://p.dw.com/p/3aaBY
ছবি: Reuters/P. Ravikumar

বদলে গেল পুলিশের ভূমিকা।  কিছুদিন আগেও যাঁদের দেখা গিয়েছিল পরিযায়ী অভুক্ত শ্রমিকদের ওপর লাঠি চালাতে, তাঁরাই এখন বিভিন্ন রাজ্যে ত্রাতার ভূমিকায়। রোগীদের বাঁচাতে রক্ত দিচ্ছেন, খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন গরিবের কাছে, গর্ভবতীদের নিজেদের গাড়ি করে পৌঁছে দিচ্ছেন হাসপাতালে, ভবঘুরে, ফুটপাথবাসীদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন, গরিব ও পরিয়ায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসছেন চাল, ডাল, এমনকী কলকাতায় ঘোড়া, কুকুরদেরও খাবার দিয়ে পশুপ্রেমীদের ধন্যবাদের পাত্র হচ্ছেন। কলকাতার অনেক এলাকায় লোকে লকডাউনের তোয়াক্কা না করে বেরিয়ে পড়ছেন, তাঁদের সচেতন করার জন্য গানও গাইছেন।

বামপন্থীরা একসময় স্লোগান দিতেন, 'পুলিশ তুমি যতই মারো, মাইনে তোমার একশ বারো'। পুলিশের সঙ্গে বেধড়ক মার ও ঘুষের ছবিটা লোকের মনের মধ্যে বসে গিয়েছে। কিছুদিন আগেও দিল্লির জেএনইউ এবং জামিয়ার ছাত্রছাত্রীরা টের পেয়েছেন, কী নির্মমতার সঙ্গে পুলিশ লাঠি চালাতে পারে। সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে পুলিশের সেই মারের অনেক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

কিন্তু সঙ্কট সময়ে অনেক রাজ্যেই পুলিশ ভূমিকা একেবারে বদলে ফেলেছে। 'আমরাও পারি' এই মন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে সেবা কাজে ঝাঁপিয়েছে। আর তার ফলে দেশ দেখতে পাচ্ছে, খাঁকি উর্দিধারীদের অন্য একটা দিক, যা আগে ঢাকা পড়ে যেত, লাঠি, গ্যাস, গুলির প্রাবল্যে। পশ্চিমবঙ্গের কথাই ধরা যাক। পুলিশ রক্তদান করছে। এক দিন নয়, দিনের পর দিন। অন্তত একমাস ধরে পুলিশকর্মীরা রক্ত দেবেন। কেন? লকডাউনের সময়ে এখন লোকে রক্ত দিতে পারছেন না। থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের রক্ত লাগে, অন্যদেরও। ফলে পুলিশ ভরসা। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একমাসের জন্য রক্তদান শিবির হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ও কলকাতা পুলিশ কমিশনারের অনুরোধ মেনে কলকাতা পুলিশ রক্ত দিচ্ছে। রাজ্য পুলিশ দিচ্ছে। একজন বয়ষ্ক মানুষের প্রয়োজন বলে থানার ওসি নিজে গিয়ে রক্ত দিয়ে এসেছেন, এমন ঘটনা ঘটছে।

কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এই সঙ্কটের সময়ে কলকাতা পুলিশ অনেকগুলি কাজ একসঙ্গে করার চেষ্টা করছে। আমরা বয়ষ্কদের সাহায্য করছি। গরিব ও গৃহহীনদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। ভিন রাজ্যের শ্রমিকরা যাতে বেঁচে থাকতে পারেন, তা দেখছি। এমনকী রাস্তার পশুদেরও খাবার দিচ্ছি। আমার কিছু অফিসার লোকের কষ্ট কমাবার জন্য গান গাইছেন। সব মিলিয়ে আমরা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি।'' কলকাতায় পুলিশ আগেও বয়ষ্কদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের নিয়মিত খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এমনভাবে প্রাণ দিয়ে লোককে সাহায্য করার দৃশ্য আগে কখনও দেখা গিয়েছে?

পুলিশের গানও রীতিমতো জনপ্রিয় হয়েছে। রাতের দিকে বিভিন্ন মহল্লায় গিয়ে তাঁরা গাইছেন। গানের মধ্য দিয়ে প্রচার করছেন করোনায় কী কী করণীয়। পুলিশের মধ্যে যে এত ভালো গানের প্রতিভা লুকিয়ে আছে কে জানত! অঞ্জন দত্তের বেলা বোস থেকে শুরু করে গুপী গাইনের গানের প্যারডি করে লোককে করোনায় বাড়িতে থাকারঅনুরোধ জানাচ্ছে পুলিশ। গাইছে 'উই শ্যাল ওভারকাম'। করোনার সময়ে এটাও একটা প্রাপ্তি।

দিল্লিতেও সাধারণ লোকের পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। যেমন বদরপুরের পঙ্কজ। তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীর যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর কোনও অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ি পাচ্ছিলেন না। নিরুপায় হয়ে পুলিশকে ফোন করেন। কুড়ি মিনিটের মধ্যে পুলিশ এসে তাঁর স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাচ্চা ও মা সুস্থ আছেন। এরকম অনেক গর্ভবতীকেই পুলিশ নিজের গাড়িতে করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। আবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া রোগীদেরও বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। দিল্লির এক মহিলা চিকিৎসকের গাড়ি রাস্তায় খারাপ হয়ে যায়। তিনি নিরুপায় হয়ে পুলিশে ফোন করেন। পুলিশ গাড়ির মিস্ত্রিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। পার্টস জোগাড় করে। মহিলা চিকিৎসক আবার গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যান।

শুধু কলকাতা বা দিল্লি নয়, দেশের সর্বত্রই পুলিশ এভাবেই লোককে সাহায্য করছে। তাদের জন্যই পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে খাবার পাঠাতে পারছেন জনপ্রতিনিধিরা।

করোনা শেষ হওয়ার পরেও পুলিশের এই ভুমিকা থাকবে না কি, আবার তাঁরা ফিরে যাবেন পুরনো চেহরায়, তার জবাব ভবিষ্যৎ দেবে। তবে এখন তাঁরা যে কাজ করছেন, তাতে তাঁরা মানুষের সাধুবাদ পাচ্ছেন।