1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কংগ্রেসের ‘‌দাদাগিরি'‌ আর চলবে না

রাজীব চক্রবর্তী দিল্লি
১৮ মে ২০১৮

কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফল দিনের আলোর মতো একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে৷ তা হলো, ভারতীয় জনতা পার্টিকে পরাস্ত করতে বিজেপি‌বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই এক ছাতার তলায় আসতে হবে৷

https://p.dw.com/p/2xxPt
Indien Karnataka Wahlen
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran

এককভাবে কংগ্রেসের পক্ষে তা আর সম্ভব নয়৷ সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলি সম্পর্কে মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে৷

সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের দু'টি উপ-‌নির্বাচন দিয়ে শুরুটা হয়েছিল৷ তারপর ভারতের আরও দুই রাজ্য গুজরাট ও কর্ণাটক৷ একক ক্ষমতায় বিজেপি‌‌কে রুখতে ব্যর্থ হয়েছে কংগ্রেস৷ বলা ভালো, পরীক্ষিত সত্য প্রমানিত হয়েছে, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গাঁটছড়া না বাঁধলে একক ক্ষমতায় কোনওভাবেই বিজেপি‌কে হটাতে পারবে না কংগ্রেস৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী জান-‌প্রাণ এক করে লড়াইয়ের চেষ্টা করেও গুজরাট বা কর্ণাটকে জনাদেশ আদায় করতে পারেননি৷ এই আবহে জাতীয় স্তরে বিজেপি‌বিরোধী ‘‌ফেডারেল ফ্রন্ট'‌ গড়ার উদ্যোগ আরও গতি পাচ্ছে৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷ বাংলার নেত্রীর সেই তত্ত্ব হলো, ‘‌একের বিরুদ্ধে এক'‌ লড়াই৷ অর্থাৎ, আগামী লোকসভা নির্বাচনে(‌২০১৯)‌ বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেসকে তার ‘‌ইগো'‌ ঝেড়ে ফেলে আঞ্চলিক দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতেই হবে৷ সেক্ষেত্রে যে দল যেখানে শক্তিশালী, তাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে৷ বাংলায় সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রায় ৯০ শতাংশ আসনে জয় মমতাকে আরও শক্তিশালী করেছে৷ একইভাবে অন্ধ্রপ্রদেশে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তেলুগু দেশম পার্টি৷ তেলেঙ্গানায় টিআরএস৷ তামিলনাড়ুতে ডিএমকে৷ বিহারে আরজেডি৷ সর্বত্র ক্ষমতা হারিয়ে দুর্বল হচ্ছে কংগ্রেস৷ বলা যেতেই পারে, দীর্ঘ কয়েক দশক পরে আবার জোট সরকারের দিকে এগোচ্ছে ভারত৷

‘বিজেপিবিরোধী ঐক্যে মমতা ব্যানার্জিই প্রাণকেন্দ্র’

রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত ব্যানার্জি মনে করেন, বিজেপিবিরোধী ঐক্যে মমতা ব্যানার্জিই প্রাণকেন্দ্র৷ মমতা ব্যানার্জি আর শুধু বাংলার নেত্রী নন৷ তাঁকে কেন্দ্র করে দেশের বিজেপিবিরোধী রাজনীতি উত্তাল ও আলোড়িত হচ্ছে৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস থেকে সিপিএম, সবাইকে তা উপলব্ধি করতেই হবে৷ কর্ণাটকের নির্বাচনী ফল এর প্রসঙ্গ তুলে ধরে ঋতব্রত বললেন, ‘‌‘‌কর্ণাটকের নির্বাচন একটা বিষয় অত্যন্ত পরিষ্কার করে দিয়েছে, তা হলো, দেশের কোনো  রাজনৈতিক নেতাই মমতা ব্যানার্জির মতো মানুষের মন বোঝেন না৷ মমতাকে ঘিরেই জাতীয় স্তরে আবর্তিত হচ্ছে বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলো৷ দানা বাঁধছে ঐক্য৷ কর্ণাটক বুঝিয়ে দিয়েছে, বিজেপিবিরোধী লড়াইয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ‘‌ওয়ান-‌ইজটু-‌ওয়ান'‌ সূত্রই একমাত্র পথ৷'‌'

‌শুরুর দিকে কিছুতেই এই তত্ত্ব মানতে চাননি রাজধানী দিল্লির রাজনীতিকরা৷ এমনকি কেন্দ্রীয় স্তরে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মমতার এই তত্ত্বকে হেয় পর্যন্ত করা হয়েছে৷ কিন্তু বর্তমানে ভারতের রাজনীতিতে সর্বোচ্চ স্তরে এবং প্রধান চর্চার বিষয় যে কর্ণাটক, সেখানে দেরিতে হলেও মমতার দেখানো পথেই হাঁটতে হলো রাহুল গান্ধীর দলকে৷ অথচ নির্বাচনের আগে জেডি(‌এস)‌-‌এর হাত ধরলে অন্যরকম হতে পারতো ভোটের ফলাফল৷

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কর্ণাটক পরবর্তী সময়ে রাহুল গান্ধীর সামনে আরও এক দফা সুযোগ রয়েছে৷ তা হলো, ২০১৯-‌কে ‘‌পাখির চোখ'‌ করে এই বছরের শেষে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জোর দিতে হবে৷ তিন রাজ্যেই সরকার‌বিরোধী হাওয়া বইছে৷ এই তিন রাজ্যেই রাহুলকে লড়তে হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণের সঙ্গে৷ পাশাপাশি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর ভোট-‌‌ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও লড়তে হবে তাঁকে৷ এই দুই ক্ষেত্রেই রাহুলের এখনও পাশ মার্ক জোটেনি‌৷ তাহলে ওই তিন রাজ্যের ক্ষেত্রে কৌশল কী হবে তা জানা নেই কংগ্রেসের৷ ভরসা হতে পারে মমতা ব্যানার্জির দেখানো পথ৷ যে পথে হেঁটেই কর্ণাটকে জেডি(‌এস‌‌)‌-‌কে নিঃশর্ত সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস৷

এক্ষেত্রে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে ‘‌ওয়ান-টু-‌ওয়ান'‌ লড়াইয়ের তত্ত্ব তুলে ধরেছেন, সেই দিকটিও ভাবতেই হবে রাহুলকে৷ কর্ণাটক নির্বাচন থেকে সম্ভবত সেই শিক্ষা নিয়েছে কংগ্রেস৷বিশেষত উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহারের মতো বড় রাজ্যগুলিতে বিরোধীদের জায়গা ছাড়তেই হবে তাঁকে৷ যেখানে কংগ্রেসের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী অন্যান্য দল৷ নচেৎ কংগ্রেসকে আটকে থাকতে হবে পাঞ্জাব, মিজোরাম ও পুদুচেরির মতো রাজ্যেই৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী তিন রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি‌‌কে হঠাতে ভোটের আগেই আঞ্চলিক দলগুলিকে রাজনৈতিক জমি ছেড়ে দিতে হবে কংগ্রেসকে৷ কর্ণাটকে বিপদে পড়ে জেডি‌এস‌‌কে সমর্থনের কৌশলই ২০১৯-‌‌এ কংগ্রেসের প্রধান রণকৌশল হতে পারে৷ আর যদি এমনটা করতে না পারেন, তাহলে লোকসভায় আবারও হতাশ হতে হবে রাহুল ও তাঁর দল কংগ্রেসকে৷

প্রায় চার দশক ধরে দেশের রাজনীতির অলি-‌গলি ঘুরে সাংবাদিকতা করেছেন ষাটোর্ধ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা৷ আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলির এক ছাতার তলায় আসা-‌না আসা প্রসঙ্গে তাঁর মত হলো, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট এবং শেষমেশ কর্ণাটকের ভোটের ফলে রাহুলের গ্রহণযোগ্যতা মোটেও প্রমাণ হয়নি৷ আসলে রাহুল গান্ধীকে বুঝতে হবে, বিজেপি‌বিরোধী লড়াইয়ে ইগোর কোনো জায়গা নেই৷ মমতা ব্যানার্জির ফর্মুলা বেশ কার্যকরী৷

‘রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাধ পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না’

শরদের কথায়, ‘‌‌‘‌উত্তরপ্রদেশে তিন দশক ক্ষমতায় নেই কংগ্রেস৷ পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, বিহারসহ অন্যান্য রাজ্যেও আঞ্চলিক দল অনেক শক্তিশালী হচ্ছে৷ এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কর্ণাটক নির্বাচনে অত্যন্ত খারাপ ফল করেছে কংগ্রেস৷ রাজ্যে সরকার‌‌বিরোধী হাওয়া না থাকা, রাহুল গান্ধীর একটানা প্রচার, এমনকি রাজ্যে অন্যতম প্রভাবশালী মুখ হিসেবে সিদ্দারামাইয়া থাকা সত্ত্বেও দলের এমন হাল নিয়ে বেশ চিন্তায় দলের শীর্ষ নেতারা৷ গত নির্বাচনের তুলনায় ৪৪টি আসন কম পেয়েছে কংগ্রেস৷ আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৮টিতে৷ সমীক্ষা বলছে, জেডি‌এসের সঙ্গে প্রাক-‌নির্বাচনী জোট করে লড়াই করলে ৫৪ শতাংশের বেশি ভোট পেতো কংগ্রেস-‌‌জেডি‌এস‌৷ আসন সংখ্যার নিরিখে যা বিজেপি‌‌র থেকে অনেক বেশি হতো৷ ফলে, বোঝাই যাচ্ছে উপযুক্ত পরিকল্পনা এবং রাজনৈতিক লক্ষ্যে গলদ থেকে গেছে কংগ্রেসের৷ রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাধ পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না৷'‌'

‌‌কংগ্রেস নেতারা যা নিয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, তা হলো, গতবারের তুলনায় প্রায় এক শতাংশ ভোট বেড়েছে দলের৷ ২০১৩ সালে ১২২টি আসনে জিতে প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার ছিল ৩৬ দশমিক ‌৭৯ শতাংশ৷ এবার মাত্র ৭৮টি আসন দখল করে প্রাপ্ত ভোটের হার ৩৮ শতাংশ৷ কিন্তু গুজরাটেও তো বিজেপির ভোট বেড়েছে৷ কাজেই এই যুক্তিও খাটছে না৷

এতকিছুর মধ্যে পরিবারতন্ত্র নিয়ে রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করতে ময়দানে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ বলেছেন, ‘‌‘রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের দিন শেষ৷ এখন মানুষ কঠোর পরিশ্রমে ভরসা রাখছে৷'‌'‌

এই বিষয়ে আপনার মতামত লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য