1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যবাংলাদেশ

‘কাউকে বিশেষ সুবিধা দিতে বুস্টার শুরু করা হচ্ছে না’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৪ ডিসেম্বর ২০২১

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সাত কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ এবং প্রায় পাঁচ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে৷ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষকেও এখনও প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া যায়নি৷

https://p.dw.com/p/44myW
Bangladesh | Massenimpfung Covid-19
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images

এর মধ্যে শুরু হচ্ছে বুস্টার ডোজ৷ ফলে দেশের বিপুল সংখ্যাক মানুষকে টিকার বাইরে রেখে বুস্টার ডোজে কতটা সফলতা মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বুস্টার ডোজের আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআর এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর৷

ডয়চে ভেলে : বুস্টার ডোজ আসলে কী?

ডা. এ এস এম আলমগীর : এটা আসলে টিকার যে নির্দিষ্ট ডোজ থাকে তারপর একটা নির্দিষ্ট সময় পর যে ডোজটা দেওয়া হয়৷ করোনার ক্ষেত্রে ৬ থেকে ৮ মাস, অন্যান্য টিকার ক্ষেত্রে কখনও কখনও ১০ বছর পরও বুস্টার ডোজ নিতে হয়৷ টিকা দিলে যে এন্টিবডি বা অন্যান্য ফাংশনগুলো কাজ করে সেটাকে আসলে বুস্টআপ করানোর জন্য এটা দেওয়া হয়৷ তবে কিছু ভ্যাকসিনে বুস্টার ডোজের সুপারিশ থাকে, কিছু ক্ষেত্রে থাকে না৷ ফলে বুস্টার ডোজটা হল বুস্টআপ করা৷

বুস্টার ডোজ কী তাহলে তৃতীয়বারের মতো টিকা?

না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বারও বুস্টার ডোজ হতে পারে৷ সব টিকার ক্ষেত্রে তৃতীয়বারই বুস্টার ডোজ হবে, এমনটা না৷ কোন কোন টিকার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজও বুস্টার ডোজ৷ আবার কোন কোন ক্ষেত্রে তৃতীয় ডোজ বুস্টার ডোজ৷ আবার কোন টিকায় বুস্টার ডোজ লাগেও না৷ ছোট বেলায় বাচ্চাদের আমরা ডিপথেরিয়ার টিকা দেয়, সেটা কিন্তু আবার ১০ বছর পরে গিয়ে বুস্টার ডোজ দিতে হয়৷ আবার পোলিও এর ক্ষেত্রে আমরা কোন বুস্টার ডোজ দেয় না৷ এটা নির্দিষ্ট টিকা কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত বা সায়েন্স৷

বুস্টার ডোজে কী আগের মতোই টিকা দেওয়া হবে, নাকি পরিমাণে কম বেশি আছে?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একই পরিমাণ দেওয়া হয়৷ তবে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রথম ডোজটা যে টিকা দেওয়া দেওয়া হয়, বুস্টার ডোজটা অন্য টিকা দিয়ে দেওয়া হয়৷ একই টিকা কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানের৷ করোনার টিকার ক্ষেত্রে যদি আপনি দেখেন রাশিয়ায় যে টিকা দেওয়া হচ্ছে স্পুটনিক-ভি সেটার প্রথম ডোজ আর দ্বিতীয় ডোজের পরিমানে কিন্তু পার্থক্য আছে৷ অন্যগুলো সব একই রকম৷ এটা আসলে টিকা কেন্দ্রিক নির্ণয় করা হয়৷ কখনও কখনও আলাদা হতে পারে৷ কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এক৷

বুস্টার ডোজের কার্যকারিতা নিয়ে কী কোনো গবেষণা আছে?

অবশ্যই৷ প্রত্যেক টিকা নিয়ে গবেষণা আছে৷ প্রথম ডোজ দেওয়ার পরে বুস্টার ডোজ লাগবে কিনা তা নিয়ে তো অনেক গবেষণা হয়েছে৷ বুস্টার ডোজ দিলে লাভের পরিমাণ কী, ক্ষতির পরিমাণ কী, ইউমিটি কতটুকু ডেভলপ করে এগুলো নিয়ে গবেষণা হয়েছে৷ করোনার ক্ষেত্রে প্রথম দুই ডোজ দেওয়ার পরে ফাইজার, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, সিনোফার্ম, সিনোভ্যাক্স সবাই কিন্তু গবেষণা করছে৷ আমরা কিন্তু জানি ফাইজার, মডার্না কিন্তু ৬ থেকে ৮ মাস পরে বুস্টার ডোজ দিতে সুপারিশ করেছে৷ অ্যাস্ট্রাজেনেকার ক্ষেত্রে এখনও কোন সুপারিশ আসেনি৷ সিনোফার্মের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও চীন বুস্টার ডোজ দিচ্ছে৷ এটা নিয়ে এখনও ব্যাপক গবেষণা চলছে সারা পৃথিবীজুড়েই৷

বুস্টার ডোজ দিলে শরীরে অ্যান্টিবডি কী পরিমানে বাড়ে?

বিভিন্ন ভ্যাকসিনে বিভিন্ন রকমের হয়৷ ফাইজার, মর্ডানার ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, ৮০ থেকে ৮৫ পারসেন্ট অ্যান্টিবডি যা আছে তার চেয়ে বাড়তে পারে৷ জনসন এন্ড জনসনের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বাড়বে৷ অ্যাস্ট্রাজেনেকা নিয়ে এখনও বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে না৷ সিনোফার্ম নিয়েও বড় কোন গবেষণা হয়েছে সেটা বলা যাচ্ছে না৷

করোনার টিকার ক্ষেত্রে আমাদের কী পরিমাণ বুস্টার ডোজ দেওয়ার সমতা আছে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা গাইডলাইন আছে, দ্বিতীয় কোন টিকা দিয়ে বুস্টার দেওয়ার ব্যাপারে৷ ফলে বুস্টারে আমরা ফাইজার ব্যবহার করছি৷ বিশ্বের অনেক দেশ বুস্টার হিসেবে ফাইজার ব্যবহার করছে৷ আমাদের প্রায় ৩ কোটি ভ্যাকসিন পাইপলাইনে আছে৷ এগুলো আমরা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পাব৷ আমরা এখন ৫৫ থেকে ৬০ বছরের উর্ধ্বে এবং সম্মুখসারির যোদ্ধাদের বুস্টার ডোজটা দেব৷ সেটা লাগবে এক কোটির মতো৷ আমাদের ইচ্ছে আছে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে যখন আমরা দুই ডোজ টিকার আওতায় নিয়ে আনতে পারব তখন পর্যায়ক্রমে সবাইকে বুস্টার ডোজের আওতায় নিয়ে আসা হবে৷

বুস্টার ডোজে কী শুধু ফাইজারই ব্যবহার করা হবে?

আপাতত ফাইজার ব্যবহার করা হবে৷ আমাদের হাতে মডার্নাও আছে৷ আমরা যেহেতু এখন ৪-৫টি টিকা ব্যবহার করি ফলে গবেষণায় যদি অন্য টিকার বিষয়টি আসে তাহলে সেগুলোও ব্যবহার করা হবে৷ মূল কথা বুস্টার হিসেবে অনুমোদন পাওয়া টিকাগুলোই আমরা বুস্টার হিসেবে ব্যবহার করব৷

প্রথম দুই জোজ যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছে, বুস্টারে যদি তারা ফাইজারের টিকা নেয় সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা হতে পারে কিনা?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটা সুপারিশ আছে, প্রথম দুই ডোজ যে টিকা নিয়েছে বুস্টারের ক্ষেত্রে অন্য টিকা দিয়ে দিতে হবে৷ ফাইজারের সুপারিশ হচ্ছে, ফাইজার দিয়ে প্রথম দুই ডোজ দিলে ফাইজার দিয়েই বুস্টার দেওয়া যাবে৷ আমাদের আপাতত সিদ্ধান্ত যারা ফাইজার দিয়ে প্রথম দুই ডোজ দিয়েছে তাদের ফাইজার দিয়ে এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্ম দিয়ে যারা প্রথম দুই ডোজ দিয়েছে তাদের ফাইজার দিয়েই বুস্টার ডোজ দেব৷

সাধারণভাবে যে টিকা দেওয়া হচ্ছে সেটা শেষ না করে বুস্টার ডোজে কতোটা উপকার পাওয়া যাবে?

আমরাও এক সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দিয়ে তারপর বুস্টার শুরু করব৷ কিন্তু দক্ষিন আফ্রিকা থেকে যখন ওমিক্রন শুরু হল তখন দেখা গেল যারা বুস্টার ডোজ নিয়েছে তারা প্রটেকশনটা বেশি পাচ্ছে৷ তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম প্রথম দুই ডোজের কার্যক্রম নিয়মিত চলবে একই সঙ্গে বুস্টারও দেব৷ একটা বিষয় মানুষের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সুষ্টি হয়েছে, সেটা হল আমরা কোনক্রমেই প্রথম ডোজ ও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া বন্ধ করছি না৷ এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যেভাবে চলছিল, সেভাবেই চলবে৷ এর সঙ্গে বুস্টার যোগ হচ্ছে৷ ফলে কাউকে বাদ দিয়ে বা কাউকে বিশেষ সুবিধা দিতে বুস্টার ডোজ দিচ্ছি না৷ আমরা সম্মুখসারি ও বয়স্ক নাগরিকদের কথা চিন্তা করেই বুস্টার শুরু করতে যাচ্ছি৷

এখন তো বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট আছে৷ বুস্টার ডোজ কী সব ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম?

এখন যে ভ্যারিয়েন্ট আছে এর সবগুলোর ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, বুস্টার দিলে প্রটেকশনের পরিমাণটা বাড়ে৷ আসলে যারা বয়স্ক বা সম্মুখ সারিতে কাজ করছেন তাদের জন্য বুস্টার ডোজটা খুবই প্রয়োজন৷

এখন পর্যন্ত আমরা কী পরিমাণ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছি, আর আমাদের পর্যাপ্ত টিকার সরবরাহ আছে কিনা?

আমরা প্রায় ৭ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ দিয়েছি৷ আর প্রায় ৫ কোটি মানুষকে দ্বিতীয় ডোজও দিতে পেরেছি৷ এখন পর্যন্ত আমরা ৪২-৪৩ শতাংশ মানুষকে প্রথম ডোজ দিয়েছি৷ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এটা ৫০-৫৫ শতাংশ হয়ে যাবে৷ আর দ্বিতীয় ডোজ ৪০ শতাংশ হয়ে যাবে৷ আমরা চেষ্টা করছি, মার্চের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেব৷ আর এপ্রিলের মধ্যে ৭৫-৮০ ভাগ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাবে৷ এখন আমাদের ৪ কোটির মতো টিকা মজুদ আছে৷ পাইপলাইনেও প্রচুর টিকা আছে৷ 

‘৫৫ থেকে ৬০ বছরের উর্ধ্বে এবং সম্মুখসারির যোদ্ধাদের বুস্টার ডোজটা দেব’

আমরা দেখেছি, কিছুদিন আগেও প্রথম ডোজের জন্য যারা আবেদন করেছেন তাদের টিকা পেতে ৪ থেকে ৬ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে বুস্টার ডোজটা কীভাবে শুরু করতে যাচ্ছেন?

বুস্টার ডোজের জন্য আলাদা কোন রেজিষ্ট্রেশন লাগবে না৷ সুরক্ষা অ্যাপ নিয়ে আইসিটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে৷ প্রথম ডোজ নেওয়ার সময় ফোন নম্বর ও আইডি নম্বর দিতে হয়েছে, এগুলো তো আমাদের কাছে আছে৷ ফলে প্রথম দুই ডোজ আপনি যেখান থেকে নিয়েছেন সেখান থেকেই আপনার কাছে এসএমএস চলে যাবে৷ প্রথমদিকে আমাদের সেন্টার কম ছিল, হাতেও পর্যাপ্ত টিকা ছিল না৷ এখন কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন করে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না৷ বুস্টারেও আশা করছি, তেমন অপেক্ষা করতে হবে না৷ আপনি এসএমএস পেলে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা দিয়ে আসতে হবে৷

প্রথম দুই ডোজ যেখান থেকে নিয়েছেন, বুস্টারও কী সেখান থেকে নিতে হবে? নাকি অন্য কেন্দ্র থেকেও নেওয়া যাবে?

প্রথম দুই ডোজ আপনি যেখান থেকে নিয়েছেন বুস্টারও সেখান থেকে নেওয়ার ব্যাপারে আমরা অগ্রাধিকার দেব৷ অনেকের তো ঠিকানা বা শহরও বদলে গেছে তাদের জন্য হয়ত আমরা বিশেষ ছাড় দেব৷ সেটাও আমরা জানিয়ে দেব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান