1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাশ্মীরে জমি কেনার সুযোগ হাতের মুঠোয়

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২৮ অক্টোবর ২০২০

এতদিন এই সুযোগ ছিল না। এ বার আইন বদল করে, ভারতের অন্য রাজ্যের মনুষকে কাশ্মীরে জমি কেনার সুযোগ করে দিলো সরকার।

https://p.dw.com/p/3kX3x
ছবি: picture-alliance/Zuma/Masrat Zahra

জমি কিনতে চান? সেটাও চারপাশে বরফাবৃত পাহাড়ে ঘেরা, লেক ও মনোরম বাগানের মধ্যে থাকা এক অপূর্ব উপত্যকায়? যেখানে দাঁড়িয়ে দূরের প্রকৃতি দেখে আপনি হয়ত বলে উঠবেন, স্বর্গ যদি কোথাও থাকে-- এখানেই তা, এখানেই তা, এখানেই তা।

হ্যাঁ, কাশ্মীরের কথাই বলছি। এতদিন এই সুযোগ ছিল না। জম্মু ও কাশ্মীরের বাইরের মানুষের যত ইচ্ছেই থাক না কেন, শ্রীনগরে বা কাশ্মীরের অন্যত্র জমি কেনা ছিল অসম্ভব ব্যাপার। কারণ, সেই অধিকার ছিল একমাত্র জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের। বাইরের রাজ্যের মানুষের সেই কষ্ট এ বার দূর করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। আইন পরিবর্তন এবং বিজ্ঞপ্তি জারি করে তারা জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীরের বাইরের মানুষও জমি কিনতে পারবেন সেখানে। পরে লেফটন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা জানিয়েছেন, কেবলমাত্র চাষের জমি কেনা যাবে না।

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা সহ বিরোধী নেতারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন। ওমর বলেছেন, জনসংখ্যার চরিত্রগত পরিবর্তন করতে চাইছে প্রশাসন। কাশ্মীর হলো মুসলিম প্রধান। জনসংখ্যার চরিত্রগত পরিবর্তন মানে, অন্য ধর্মের মানুষ বাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা। তা বিরোধীরা এই ধরনের  কথা বলেই থাকেন। তাঁরা আর কী পরিবর্তন করতে পেরেছেন?কাশ্মীরে ৩৭০ ধারার বিলোপ ঠেকাতে পারেননি। জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য থেকে দুইটি আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়েছে, সেটাও তাঁরা ঠেকাতে পারেননি। নতুন ব্যবস্থাও তাঁরা ঠেকাতে পারবেন, এমন দুরাশা কেউ করছেন না।

বিজেপি তো কতদিন ধরেই বলছে, কাশ্মীর যদি ভারতের অংশ হয়, তা হলে অন্য প্রদেশের মানুষেরা কেন সেখানে জমি কিনতে পারবে না, বাড়ি বানাতে পারবে না? একসময় কাশ্মীরের আলাদা পতাকা ছিল, সংবিধান ছিল, সেখানকার মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হতো সদর এ রিয়াসত। সে সময় জনসঙ্ঘের স্লোগান ছিল, 'এক দেশ মে দো নিশান, দো বিধান, দো প্রধান নেহি চলেগা।' সহজ বাংলায় একই দেশে দুই পতাকা, দুই সংবিধান, দুই প্রধানমন্ত্রী চলবে না। ওই তিনটি বিষয় এখন আর নেই। বাকি ছিল, ৩৭০ ধারা বিলোপ, বাইরের মানুষের জমি-বাড়ি কেনার অধিকার। সেটাও দিয়ে দেয়া হলো।

লেফটন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা অবশ্য অভয় দিয়ে বলেছেন, ''কিনতে চাইলেই কাউকে জমি দেয়া হবে না। শিল্পের জন্য জমি দেয়া হবে। সেটাও ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক করে।'' কিন্তু মুসকিল হলো, আইনে যদি বলে জমি কেনা যাবে, তা হলে তা আটকানো হবে কী করে?

তার উপর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, নতুন সংশোধন শুধু জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য, লাদাখে তা চালু হবে না। লাদাখের জন্য যদি আলাদা আইন সংশোধন না করা হয়, তা হলে বুঝতে হবে, শুধু জম্মু ও কাশ্মীরেই নতুন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ওমর আবদুল্লা তাই বলেছেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে বিক্রি করে দেয়া হলো। সুরক্ষার ব্যবস্থাও আর রইলো না। ওমরের দল, মেহবুবা মুফতির দল এবং বাম দলগুলি মিলে বিরোধী জোট করেছেন। সেই জোটের নেতারাও গর্জে উঠেছেন।

এই ধরনের গর্জন স্বাভাবিক। হওয়ারই কথা। কিন্তু তাতে লাভ হবে কি? জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর এক বছর হয়ে গেছে। ওমর, তাঁর বাবা ফারুখ, মেহবুবা সকলেই এই এক বছরের বেশির ভাগ সময়টা জেলে কাটিয়েছেন। তখনও যে কারও খুব একটা হেলদোল ছিল, এমন নয়।

তাই গর্জন হতেই পারে। আপাতত যেটা হলো, কাশ্মীরে জমি কিনে বাড়ি করার সুযোগ ভারতের অন্য রাজ্যের মানুষের হাতে এসে গেল। তাঁরা সেটা করতে ছুটবেন না কি ভয়ে শ্রীনগরমুখো হবেন না, সেটা অন্য বিষয়, কিন্তু অধিকারটা তাঁরা পেয়ে গেলেন।