1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন বাড়ছে সংখ্যালঘু নির্যাতন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২০ মে ২০১৯

বাংলাদেশে আবারো সংখ্যালঘু নির্যাতন বাড়ছে৷ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নানা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে এই দাবিই করেছে৷

https://p.dw.com/p/3Imu0
Bangladesch Feuer Zerstörung radikale Islamisten
ছবি: bdnews24.com

 

সংগঠনটির পক্ষ থেকে রবিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর ২৫০টি হামলা, নির্যাতন ও হত্যাসহ নানা ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৮ সালে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৮০৬টি৷ তাই এটা স্পষ্ট যে, চলতি বছরের শুরু থেকেই সংখ্যালঘু নির্যাতন বাড়তে শুরু করেছে৷

তাদের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, এই চার মাসে হত্যার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ২৩ জন৷ হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন ১০ জন৷ হত্যার হুমকি পেয়েছেন ১৭ জন এবং শারীরিক আক্রমণের শিকার হয়েছেন ১৮৮ জন৷ ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫ জন৷ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি ঘরে লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে ৩১টি, বাড়ি ঘর ও জমি জমা থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন ১৬২ জন, দেশত্যাগের হুমকি পেয়েছেন ১৭ জন৷
১০৪ জন ধর্মান্তরিত হয়েছেন, ২৯টি মন্দির ও মঠে হামলা হয়েছে, ৪৩টি মুর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে এবং জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে ৩৮টি৷ এর বাইরে অপহরণ, ধর্মস্থান দখল, মূর্তি চুরির মতো ঘটনারও অভিযোগ করা হয়েছে৷

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আরো জানায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল ১,৪৭১ টি৷ ২০১৭ সালে তা কমে হয়েছিল ১,০০৪টি৷ ২০১৮ সালে আরো কমে ৮০৬টি৷ কিন্তু চলতি বছরের শুরুতেই তা আবার বাড়তে শুরু করেছে৷

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বেড়ে যাওয়ার শেষ পরিণহি হবে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা: রানা দাশগুপ্ত

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যা জানতে পেরেছি, সেই হিসেব আমরা দিয়েছি৷ এর বাইরেও আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে৷ পরিস্থিতি অ্যালার্মিং৷ ২০১১ সালের শুরুতেও আমরা দেখেছি, সংখ্যালগুদের ওপর হামলা-নির্যাতন বেড়ে যায়৷ আর তা শেষ পর্যন্ত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দিকে ধাবিত হয়৷ ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান জঙ্গি হামলা যার চরম রূপ৷ আমি মনে করি, আবারো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বেড়ে যাওয়ার শেষ পরিণতি হবে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা৷ সংখ্যালঘুরা ভালনারেবল বলে তাদের ওপর দিয়ে শুরু হয়েছে৷ এটা এখনই থামানো না হলে সামনে দেশ আরো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে৷''

এই হামলা কারা করছে বা কারা এর নেপথ্যে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এখন তো বিএনপি, জামায়াত মাঠে নেই৷ মাঠে তো আছে আওয়ামী লীগ৷ আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে করা হচ্ছে৷ সিরাজগঞ্জে ৩৫ শতক অর্পিত সম্পত্তি জাল স্বাক্ষর দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন সিরাগঞ্জ-৬ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি হাসিবুর রহমান স্বপন৷ কোর্ট তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন৷ এবার বুঝতে পারছেন, সরকারি দলের এমপির বিরুদ্ধে অর্পিত সম্পত্তি আত্মসাতের মামলা যদি আদালত করে, তাহলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে? আর ফরিদপুরের সাংবাদিক প্রবীর শিকদার যে হামলা, মামলা, হুমকি আর হয়রনির শিকার হচ্ছেন তার নেপথ্যে আছেন আওয়ামী লীগের এক সাবেক মন্ত্রী৷''

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘একদিকে প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলছেন, আরেকদিকে জঙ্গি হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে৷ নির্যাতিত সংখ্যালঘুরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না৷'' 

শাসক দলের সমর্থন ছাড়া সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ খুবই কম: নূর খান

বাংলাদেশে  সংখ্যালঘু নির্যাতনের  ঘটনা সব সময়ই ঘটেছে এবং তারা প্রতিকার পাচ্ছেন না৷ মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বরাবরই সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে৷ আর এখন মূলত রাজনৈতিক অস্থির অবস্থা এবং নীতিহীন রাজনীতি এর জন্য দায়ী৷ বাংলাদেশ যতই তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র থেকে সরে যাচ্ছে, ততই ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন বাড়ছে৷''
তাঁর মতে, ‘‘শাসক দলের পরিচিতি বা সমর্থন ছাড়া সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়ে পার পাওয়ার সুযোগ খুবই কম৷ নেই বললেই চলে৷ তাই এই ধরনের অপরাধ যারা করে, তারা সব সময়ই রাজনৈতিক দলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকতে চায়৷ যেহেতু এই মূহূর্তে বাংলাদেশে শাসক দলের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির তেমন কোনো অবস্থান নেই বললেই চলে, এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সরকারি দল বা সরকারি দলের মধ্যে ঢুকে দুষ্কৃতকারীরা বা ওই দলের নেতা-কর্মীরা এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে৷ এটা নীতিহীন রাজনীতির ফল৷''

তিনি বলেন, ‘‘আমরা এ পর্যন্ত যেসব সংখ্যালঘু নির্যাতেনের ঘটনা দেখেছি, তার টার্গেট হলো তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দখল ও নারী৷ আর আমাদের দেশের যে-কোনো সরকারেরই প্রশাসনিক লোকজন এই সব নির্যাতন-নীপিড়নের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সব সময়ই উদাসীন৷ এর একটা কারণ হয়তো ঘটনাগুলাতে অনেক সময়ই শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত বা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা লোকজনই এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকে৷ সিরাজগঞ্জ ও ফরিদপুরের ঘটনা যদি দেখি, তাহলে দেখবো, তারা ক্ষমতা কেন্দ্রের ঘনিষ্ঠ৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো, অধিকাংশ ঘটনায়ই যারা ক্ষমতার কেন্দ্রে আছেন, তাদের আশপাশের লোকজনই এইসব ঘটনায় জড়িত৷ সেটা জেলা বা উপজেলা যেখানেই হোক না কেন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান