1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্যানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন সিনহা

২৬ জুলাই ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ক্যানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা৷ এ ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত ও অপ্রত্যাশিত বলছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম৷

https://p.dw.com/p/3Mlcq
ছবি: bdnews24.com

ক্যানাডার গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে খবরটি৷ দেশটির ‘দি স্টার’ জানিয়েছে, ৪ জুলাই ক্যানাডা এসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন জমা দিয়েছেন সিনহা৷ গণমাধ্যমটি আরো লিখেছে, ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন ইস্যুকে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি৷

আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত একটি অধিকার রাজনৈতিক আশ্রয়৷ কোনো ব্যক্তি তাঁর নিজ রাষ্ট্র থেকে রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের জন্য বিতাড়িত হলে, ওই ব্যক্তি মানবিক কারণে অন্য রাষ্ট্রে প্রবেশ ও বসবাসের জন্য অনুমতি লাভ করতে পারে৷

সিনহার দাবি, ২০১৭ সালের ২ জুলাই এক বৈঠকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলায় ‘সরকারের পক্ষে' রায় দিতে বলেছিলেন  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সেদিনের কথায় রাজি না হওয়ায় দেশ ছাড়তে হয়েছে তাঁকে৷

নিজ দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এস কে সিনহার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকে অনাকাঙ্খিত ও অপ্রত্যাশিত বলছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম৷

ডয়চে ভেলেকে শ ম রেজাউল করিম জানান, ‘‘এ জাতীয় আশ্রয় প্রার্থনা করতে গেলে নিজ দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে হয়৷ এটা কোনোভাবে কাঙ্খিত না, এটা কোনোভাবেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে না৷ আমি মনে করি, তাঁর (এস কে সিনহা) এই জাতীয় ভূমিকাটি এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে একেবারেই অনাকাঙ্খিত, অপ্রত্যাশিত৷ ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অভিযোগটি তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতরভাবে উঠতেই পারে৷''

কোনোভাবেই তাঁকে কোনো হয়রানি করা হয়নি: রেজাউল করিম

দি স্টারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসকে সিনহা আরো জানান, ‘‘আমাকে টার্গট করা হয়েছে কারণ বিচারক হিসেবে আমি ছিলাম একজন অ্যাকটিভিস্ট৷ আমি যেসব রায় দিয়েছি তাতে আমলাতন্ত্র, প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, এমনকি সন্ত্রাসীরাও ক্ষিপ্ত হয়েছে৷ আমি এখন নিজের দেশেই অবাঞ্ছিত৷’’ 

এ প্রসঙ্গে শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘‘বাংলাদেশে যেকোনো নাগরিকের জন্যই শান্তিপূর্ণভাবে এবং পরিপূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে বসবাসের সুযোগ রয়েছে৷ সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিষয়ে কোনোভাবেই বাংলাদেশ সরকার কোনো আইনের পরিপন্থী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়নি৷ কোনোভাবেই তাঁকে কোনো হয়রানিও করা হয়নি৷''

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, এসকে সিনহা বিরুদ্ধে আনীত কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক মামলা দায়ের করেছে৷ মামলার তদন্ত শেষে জানা যাবে অভিযোগের সত্যতা আছে কি নাই৷ সাবেক প্রধান বিচারপতির মনোবল থাকলে তিনি দেশে এসে আইনি লড়াইয়ে নামতে পারেন বলেও মনে করেন সরকারের এই মন্ত্রী৷

রেজাউল করিম বলেন ‘‘তিনি যদি দৃঢ়তার সঙ্গে বিশ্বাস করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়, তিনি বাংলাদেশে এসেই আইনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন৷ তাঁর সমর্থনে বাংলাদেশের অনেক বিখ্যাত আইনজীবীরাও রয়েছেন৷ তিনি যখনই বিদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করে সেখানে থাকতে চাইবেন, তখনই কিন্তু একটা সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে, তাহলে তিনি কি তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিয়ে শঙ্কিত কি না?‘‘

বিষয়টি ক্যানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছে কানাডার দি স্টার৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘দেশ ছাড়ার পর থেকেই তিনি (সিনহা) সরকারের সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে আসছেন, যেগুলো সঠিক নয়৷ তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রেও কোনো বাধা বা হুমকি নেই৷'' রাজনৈতিক আশ্রয়ের দাবি পোক্ত করার জন্যই সিনহা এসব বলছেন বলেও দাবি করেন মিজানুর রহমান৷

টরন্টো থেকে প্রকাশিত ‘ক্যানাডিয়ান কুরিয়ার' বলছে, সিনহার সঙ্গে তার স্ত্রী সুষমাও কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷ গেল বছর ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেন এস কে সিনহা৷

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীনদের তোপের মুখে পড়েন এসকে সিনহা৷ ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান তিনি৷ পরে বিদেশ থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান সাবেক এই প্রধান বিচারপতি৷

দুর্নীতি, অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম ও নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের কথা সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল৷ এ বছেরর ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক৷ ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি করে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় সেখানে৷