1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রাইস্টচার্চে আতঙ্ক

১৬ মার্চ ২০১৯

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার জঙ্গি হামলার পর পুরো শহর জুড়ে এক রকমের থমথমে ভাব বিরাজ করছে৷ স্থানীয় মুসলমানরা আতঙ্কিত বোধ করছেন৷ স্থানীয় অন্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/3FAgx
ক্রাইস্টচার্চে ফুল দিয়ে ও নোট লিখে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন স্থানীয়রাছবি: picture-alliance/AA/P. Adones

কয়েক মাস আগেই ক্রাইস্টচার্চের লিনউড মসজিদের হলগুলোতে নতুন কার্পেট বসানো হয়েছিল৷ শুক্রবার সেই হাল্কা বাদামি কার্পেটগুলো রক্তাক্ত হয়ে গেল৷

‘‘সর্বত্র রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল৷ সবকিছু কেমন ওলটপালট হয়ে গেল,'' বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন মসজিদের ইমাম ইব্রাহিম আবদেলহালিম৷

২০১৮ সালে একটি ট্রাস্ট এই মসজিদটি কেনার পর থেকে মিশরীয় বংশোদ্ভূত এই ইমামের সঙ্গে যে কয়জন মিলে এর সংস্কারের জন্য ব্যক্তিগত সময় খরচ করে অর্থ সংগ্রহ করছিলেন, তাদের সাতজন শুক্রবারের গুলিতে মারা গেছেন

শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে জুম্মার নামাজের সময় এক ডানপন্থি জঙ্গির হামলায় ৪৯ জন মারা যান৷ ঘটনায় আহত হন আরো অনেকে৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷ তারা বলেছে, মোট দশ জন বাংলাদেশি এই হামলায় আক্রান্ত হন৷ এর মধ্যে তিন জন নিখোঁজ ও পাঁচ জন হাসপাতালে আছেন৷

ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের প্রধান গ্রেগ রবার্টসন বলেন যে, হাসপাতালে ভর্তি শুক্রবারের ঘটনায় আহতদের মধ্যে ৪৮ জনকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে৷ তবে ৪ বছরের একটি মেয়েশিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ তাকে অকল্যান্ড হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে৷

এছাড়া ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালে থাকা আরো ১১ জনের অবস্থ্য আশঙ্কাজনক৷ বার্তা সংস্থা এপিকে রবার্টসন বলেন, ‘‘আহতদের মধ্যে এমনও আছেন যাদের সারা শরীরই আঘাতপ্রাপ্ত৷ এছাড়া আঘাত গুরুতর নয় এমন রোগী যেমন এসেছেন তেমনি বুকে, পেটে, শ্রোণী, হাড় ও মাথায় জটিল আঘাত পেয়েও ভর্তি হয়েছেন অনেকে৷''

‘‘এটা একটা ভয়ঙ্কর দিন ছিল, শুধু আমাদের জন্য নয়, পুরো নিউজিল্যান্ডের জন্য,'' এএফপিকে বলেন ইমাম আবদেলহালিম৷

ঘটনার পর থেকে ক্রাইস্টচার্চে মুসলমানরা আতঙ্কিত৷ তারা আবারো আক্রমণের শিকার হবার আশঙ্কা করছেন৷ তবে আর কোনো আক্রমণের আশঙ্কা আপাতত করছে না কিউই পুলিশ৷ পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ অবশ্য দুই মসজিদে বন্দুক হামলার ঘটনার পর সবাইকে একটু সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন৷

তবে নিউজিল্যান্ডে স্থানীয় খ্রিস্টান ও অন্য ধর্মাবলম্বীরা মুসলিমদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন৷ অনেকেই হালাল খাবার জোগাড় করে দিচ্ছেন৷ ভুক্তভোগীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন৷ তারা বলছেন যে, মুসলিমরা প্রার্থনা করার সময় প্রয়োজন হলে তারা পাহারা দেবেন৷

এদিকে, মূল ঘাতক ২৮ বছর বয়সি অস্ট্রেলীয় নাগরিক ব্রেন্টন টেরান্টকে খুনের মামলায় শনিবার সকালে আদালতে হাজির করা হয়েছে৷ ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক পল কেলারের আদালতে তাকে হাজির করা হয়৷ এ সময় ব্রেন্টনের মুখে কোনো বিশেষ অভিব্যক্তি ছিল না৷ একটি খুনের অভিযোগ পড়ে শোনান বিচারক৷ প্রায় এক মিনিটের এই হাজিরাতে আগামী ৫ এপ্রিল আবারো আদালতে ব্রেন্টনকে হাজির করার নির্দেশ দেন আদালত৷

ব্রেন্টন চলে গেলে বিচারক বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে খুনের একটি অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ এটা অনুমেয় যে, তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আনা হবে৷''

এদিকে, ক্রাইস্টচার্চের শুক্রবারের ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয়রা সমাজে উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ছে বলে গভীর আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন৷ সোমালি বংশোদ্ভুত নার্স সাহরা আহমেদ এএফপি'কে বলেন যে, দক্ষিণ প্রশান্তমহাসাগরীয় এই দেশটিও বিশ্বের ডানপন্থি উগ্রবাদের বিস্তার থেকে নিস্তার পায়নি৷

‘‘খারাপ-ভালো যে কারণেই হোক, এটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ কিছু মানুষ ভিন্নদের ধারণা নিজেদের মধ্যে ধারণ করা শুরু করেছেন৷ সুতরাং বিশ্বে যেখানে যা-ই ঘটুক আমরা কেউই তার প্রভাব থেকে বাঁচব না,'' বলেন সাহরা৷ ‘‘আপনি যেখানেই যান, পৃথিবীটা ছোটই৷''

জেডএ/এআই (এপি, এএফপি)

২০১৬ সালের এই ছবিঘরটি দেখুন: