1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সৌদির ওপর মার্কিন চাপ বাড়ছে

১১ অক্টোবর ২০১৮

নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাশগজির সন্ধানে সৌদি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন সেনেটররা৷ তুরস্ক অভিযোগ করে আসছে, ওয়াশিংটন পোস্টের এই লেখককে ইস্তানবুলে সৌদি কনসুলেটে হত্যা করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/36LeH
ছবি: Reuters/Middle East Monitor

মার্কিন সিনেটের ২২ সদস্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন৷ গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যাক্টের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা এই সৌদি সাংবাদিকের নিখোঁজের ঘটনার দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা৷

সিনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির প্রধান বব কোর্কার এবং শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সিনেটর বব মেনেন্দেজও আছেন চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে৷

হোয়াইট হাউসে পাঠানো চিঠিতে, ‘‘এই বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন বা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকারের কোনো লঙ্ঘন হয়েছে কিনা তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে৷’’

১২০ দিনের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনকে এই বিষয়ে কংগ্রেসের মুখোমুখি হতে হবে৷ এর ফলে সৌদি আরব ও শীর্ষ সৌদি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার পথ খুলতে পারে

তুর্কি কর্মকর্তাদের অভিযোগ খাসগজিকে কনসুলেটের ভেতর হত্যা করে তাঁর মরদেহ সরিয়ে ফেলা হয়েছে৷ সৌদি আরব অবশ্য বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে৷ কনসুলেটের বাইরের সিসিটিভি ক্যামেরায় খাশগজির ঢোকার ভিডিও থাকলেও, সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি সৌদি আরব৷

Istanbul Saudischer Journalist Khashoggi betritt Konsulat von Saudi-Arabien
কনসুলেটের বাইরের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্যে খাশগজিকে কনসুলেটে ঢুকতে দেখা যাচ্ছেছবি: Reuters TV

ট্রাম্প ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি ‘শীর্ষ সৌদি কর্মকর্তাদের’ সঙ্গে এই ইস্যুতে ‘একাধিকবার’ কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি আমাদের এবং হোয়াইট হাউসের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ যা ঘটছে, তা আমরা পছন্দ করছি না৷ আপনারা জানেন, এখনো তাঁরা বলছেন, ‘আমাদের এ বিষয়ে কিছু করার নেই’৷ কিন্তু সবাই এই একই কথাই বলছেন৷’’

ট্রাম্প বলেন, ‘‘এখনো কেউই জানেন না কী ঘটেছে৷ আমরাও জানি না৷’’

‘নির্দেশ করছে ঐদিকেই’

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র সৌদি আরব৷ মানবাধিকার ও ইয়েমেন ইস্যুতে দেশটির অবস্থান নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখেও ট্রাম্প প্রশাসন ইরান, সিরিয়া ও ইসরায়েল ইস্যুতে সৌদি আরবকে সাথে নিয়েই নীতি নির্ধারণের পথ বেছে নিয়েছে৷

সেনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির প্রধান হিসেবে বব কোর্কার মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন দেখে থাকেন৷ বুধবার তিনি জানান, খাশগজিকে ‘‘কনসুলেটে ঢোকার পরপরই মেরে ফেলা হয়ে থাকতে পারে' এবং ‘তাঁর সাথে যা ঘটেছে, তাতে সৌদি আরবের যোগসাজশ রয়েছে৷’’

অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে তিনি বলেন, ‘‘তাঁর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে যা তথ্য মিলছে, সবই সৌদি সম্পৃক্ততার কথা বলছে৷ সৌদি আরবকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে৷’’

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মার্কিন গোয়েন্দারা খাশগজিকে অপহরণের একটি সৌদি পরিকল্পনার কথোপকথন উদ্ধার করতে পেরেছেন৷ সৌদি আরব ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একজন কঠোর সমালোচক ছিলেন খাসগজি৷ গত বছর তিনি সৌদি আরব থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন৷

খাসগজির বন্ধু এবং তুরস্ক-আরব মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান তুরান কিসলাকসি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ইয়েমেন ও সিরিয়া ইস্যুতে মতামত দেয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে৷’’

তুরস্কের গণমাধ্যমে ভিডিও

খাশগজিকে হত্যার মিশনে আসা সন্দেহভাজন একটি দলের ১৫ সদস্যের ছবি প্রকাশ করেছে তুরস্কের বিভিন্ন গণমাধ্যম৷ এঁদের মধ্যে এক শীর্ষ সৌদি ফরেনসিক কর্মকর্তাও আছেন৷

‘সৌদি হত্যাকারী দলের’ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ঘটনার দিন সকালে ইস্তানবুলের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে খুব ভোরে দুটি ব্যক্তিগত সৌদি জেট বিমান এসে নামছে৷ এরপর কূটনৈতিক ভিসা নিয়ে নয় ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে দেখা যায়৷ এরপর খাশগজি কনসুলেটে প্রবেশ করেন এবং পরে তাঁদেরকে সৌদি কনসুলেটের পাশে এক হোটেল থেকে বের হতে দেখা যায়৷

প্রায় দুই ঘণ্টা পর কূটনৈতিক নাম্বারপ্লেট লাগানো একটি কালো গাড়ি কনসুলেট থেকে বের হয়ে সৌদি রাষ্ট্রদূতের বাসায় যায়৷ সেদিন বিকেলেই ১৫ সৌদি নাগরিক তুরস্ক ছেড়ে যান বলেও জানানো হয়েছে৷

তদন্ত করতে সৌদি কনসুলেট ও রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে তল্লাশি চালাতে চান তুর্কি কর্মকর্তারা৷ সৌদি যুবরাজও এরই মধ্যে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন৷ ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, প্রতিটি দূতাবাসই সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সার্বভৌম অঞ্চল এবং যে-দেশে সে দূতাবাস অবস্থিত, সে দেশও অনুমতি ছাড়া দূতাবাসে প্রবেশ করতে পারে না৷

জটিল কূটনীতি

তুরস্কে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৌদি আরব অন্যতম হলেও আঞ্চলিক বিবাদে জড়িয়ে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে চলছে টানাপড়েন৷

সৌদি আরব ও দেশটির প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধে তুরস্ক কাতারের পক্ষ নিয়েছিল৷ মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ভূমিকা এবং মুসলিম ব্রাদারহুড ইস্যুতেও দুই দেশের অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত৷

বিশ্লেষকরা বলছেন, খাশগজির সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হলেও তুরস্ক একা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে যেতে চাচ্ছে না৷ কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আগে তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মিত্রদের কাছ থেকে রাজনৈতিক সহযোগিতার আশ্বাস খুঁজছে দেশটি৷

তবে গত বছর তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান, এক মার্কিন যাজককে গ্রেপ্তার ও সিরিয়া ইস্যুতে অবস্থানকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথেও খুব একটা ভালো সম্পর্ক যাচ্ছে না তুরস্কের৷

চেস উইন্টার/ এডিকে