1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘গবেষণা চুরি করা শিক্ষাসংক্রান্ত পাপ’

১৮ অক্টোবর ২০১৭

শিক্ষার্থীদের সম্মান না দিলে, নিজেদের মধ্যে নৈতিকতার অভাব থাকলে, শিক্ষকরা কখনো অন্যদের সম্মান পাবেন না৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে লেখক ও অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম আরো বললেন, গবেষণায় চুরি করা ‘পাপ’৷

https://p.dw.com/p/2m52c
DW Interview mit Sayed Manjurul Islam
ছবি: DW/A. Parvez

ডয়চে ভেলে: আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত৷ বর্তমানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সম্পর্কটা কেমন দেখছেন?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: মোটা দাগে এখনও শিক্ষকতা পেশাটাকে সবাই সম্মানের চোখে দেখেন৷ কিন্তু একটা শিক্ষক দল দাঁড়িয়ে গেছে, যারা নানানভাবে পুরস্কৃত হতে চান, যারা শিক্ষকতাকে ধারণ করতে পারেননি৷ যাদের ভেতরে নানান ধরণের চিন্তাভাবনা, সাম্প্রদায়িকতাও আছে৷ শিক্ষকরা যদি ছাত্র-ছাত্রীকে মর্যাদা না দেয়, সম্মান না করে, তবে সেই সম্মান তারাও পাবে না৷ আমরা ধরে নেই যে, তারা আমাদের সম্মান করবে৷ আর শিক্ষকদের কাজ শ্রেণিকক্ষেই শেষ না, ২৪ ঘণ্টাই তাঁর কাজ৷ যেমন রাত ১১টায় কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো সমস্যায় পড়ে, সেটা আমাকে দেখতে হবে৷ শিক্ষক ছাত্রের সম্পর্ক পারিবারিক বন্ধনের মতো৷ 

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের সাক্ষাৎকার

এটি যারা অবহেলা করেন, তাদের অবহেলার প্রধান তিনটি কারণ হলো-ব্যক্তিগত নৈতিকতার অভাব, অর্থাৎ টাকার জন্য বা পদের জন্য লোভাতুর হয়ে পড়া৷ দ্বিতীয় হলো, রাজনীতি, যেটা প্রথম কারণের পরিপ্রেক্ষিতে চলে আসে৷ শিক্ষকদের রাজনীতি এক সময় ছিল জাতীয়ভিত্তিক, দেশ তাকিয়ে থাকতো শিক্ষকরা কী বলছেন৷ এখন শিক্ষকদের একটা অংশ আছেন সরকারি দলের সঙ্গে, আরেকটা বিরোধী দলের সঙ্গে৷ যেমন বিএনপি বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে৷ শিক্ষকরাও সেই বিতর্কে যোগ দিয়েছেন৷ আবার সরকারি দলের যারা শিক্ষক আছেন, তারাও দেখেছি আওয়ামী লীগের নেতাদের মতো বিরোধী দলের নেত্রীকে গালিগালাজ করেছেন, যেটি খুবই অশোভন৷ আর তৃতীয় কারণ হলো, সমাজের সার্বিক অবক্ষয়৷ 

তার মানে কি এই যে, রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়ার কারণে শিক্ষকদের নৈতিকতায় প্রভাব পড়ে?

তা তো বটেই৷ রাজনীতির কারণে চাওয়া ও পাওয়ার একটা আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়৷ সমাজের সার্বিক অবক্ষয়ের কথা যদি বলি, তাহলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কথা বলতে হয়৷ যেমন ফেসবুক৷ চাইলেই যে কেউ যে কোনো মন্তব্য করতে পারে৷ সম্মান রেখে অনেকেই কথা বলছে না৷ পারিবারিক এক ধরণের মূল্যবোধের অভাব আমি লক্ষ্য করছি৷ ভারতীয় কিছু চ্যানেল আছে, যেগুলো ক্রমাগত সহিংসতা শেখায়৷ আবার উগ্রবাদের বিস্তারও হচ্ছে৷ সবমিলিয়ে আমাদের সমাজের গতিশীলতা মাঝে মাঝে হোঁচট খায়৷ এসবের প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া উচিত নয়, কিন্তু পড়ছে৷ 

<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fdwbengali%2Fvideos%2F10154923835045978%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের গবেষণা চুরি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে কি এমন ঘটনা আপনি আরও দেখেছেন?

শিক্ষার্থীদের পড়ানোর ক্ষেত্রে পুরোনো শিক্ষকদের দেখে নতুনরা শেখেন৷ কিন্তু গবেষণার কাজটা তো হাতে-কলমে শেখাতে হয়৷ নকল করার বিষয়টি অনেকে জানেন না যে, উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে- এমন অনেক বিষয় আছে৷ বিশদ একটা ব্যাপার থাকে৷ আমরা বিদেশে যখন পিএইচডি করতে গিয়েছি, তখন আমাদের সেটা শেখানো হয়েছে৷ তাই আমাদের পক্ষে এটা শেখা খুব সহজ হয়েছে৷ কিন্তু একজন তরুণ শিক্ষকের পক্ষে এটা জানা সম্ভব নয়৷ অনেক সময় অজান্তে এরকমটা হয়ে যাচ্ছে, আবার অনেক সময় জেনেও করছে অনেকে৷ এটাকে বলে ‘কাটিং কর্নারস'৷ যেনতেনভাবে দুইটা প্রকাশনা জমা দিয়ে পদোন্নতি করার চেষ্টা৷ একদিকে আর্থিক লাভ হচ্ছে, অন্যদিকে মান- সম্মানও বাড়ছে৷ কিন্তু যে ক্ষতিটা তারা করছেন, তা হলো এই চৌর্যবৃত্তির একটা উদাহরণ সৃষ্টি করা৷

এটা ধরার উপায় কী?

এখন এ ধরনের নকল ধরা খুব সহজ, কেননা, এখন এত ধরনের অ্যাপস পাওয়া যাচ্ছে, কোনো গবেষণা আমার কাছে রিভিউয়ের জন্য এলে আমি গুগলে দিয়ে দেখে নিই, গবেষক কোথাও থেকে লেখাটি চুরি করেছেন কিনা৷ কেউ যদি এমনটা করে থাকে, তাকে বলতে হবে যে এটা করা অন্যায়৷ এটা ‘অ্যাকাডেমিক সিন' বা শিক্ষাসংক্রান্ত পাপ৷ অনেকে অবশ্য না জেনে করে ফেলেন, পরে স্বীকারও করেন এবং পরবর্তীতে শিখে হয়ত দুর্দান্ত পেপার লিখেছেন৷ তাই এ বিষয়ে প্রশিক্ষণটা খুব জরুরি৷ আর যারা জেনে শুনে করে থাকেন, তাদের উচিত নয় শিক্ষকতায় থাকা৷ কারণ, শিক্ষকতা এমন একটা পেশা, যেখানে মানুষ একটা আদর্শকে ধারণ করে৷ 

বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলায় বাংলাদেশ

ফ্রাংকফুর্ট বইমেলা তো আসলে প্রকাশনা সংস্থা বা প্রকাশকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন দেখছেন?

বাংলাদেশ বেশ কিছুদিন আগে থেকেই এখানে অংশগ্রহণ করছে৷ একটা মোটামুটি পায়ের ছাপ এখানে আছে৷ কিন্তু সেটিকে আরও গভীর করার জন্য  ইংরেজি ভাষায় অনেক অনূদিত গ্রন্থ থাকতে হবে৷ কারণ, বাংলা ভাষায় তো বিদেশিরা বই পড়তে পারবে না৷ আমি দেখেছি, কয়েকজন জার্মান এসেছেন, তারা বই দেখে হাতে নিয়ে ভীষণ আনন্দ প্রকাশ করেছেন যে, এত সুন্দর আপনাদের উৎপাদন৷ সেটা ঠিকই আছে, কিন্তু আমাদের যদি জার্মান ভাষাভাষি পাঠকদের কাছে পৌঁছাতে হয়, তাহলে আমাদের বইয়ের অঙ্গ সৌষ্ঠব থেকে শুরু করে সবকিছু, অর্থাৎ অনুবাদসহ সবকিছুতে জোর দিতে হবে৷ আমি খুব আনন্দিত যে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রতি বছরই এজন্য বাজেট রাখছে৷ আমাদের একশ' প্রকাশকের যদি একশ'টা বইয়ের সত্ব বিক্রি হয়, তাহলে বিশ্বের মানচিত্রে আমাদের একটা স্থান হয়ে যাবে৷

বাংলাদেশে নতুন নতুন লেখক তৈরি হচ্ছে কি? তরুণ লেখকদের লেখা সম্পর্কে আপনি কী বলবেন?

বাংলা ভাষায় যারা লিখছেন, তারা ভালো লিখছেন৷ আমার তো মনে হয়, তরুণদের ভেতর অনেক প্রতিভাবান গল্পকার, ঔপন্যাসিক আছেন, কবি আছেন৷ ভ্রমণকাহিনি যেগুলো লেখা হচ্ছে, সেগুলো আমার কাছে অসাধারণ মনে হয়৷ লিটল ম্যাগাজিন, যেটিকে আমি সব সময় বলি সাহিত্যের সূতিকাগার, সেই লিটল ম্যাগাজিনে যখন লেখকদের লেখা পড়ি, তখন আমার মনে হয় কী অসাধারণ প্রতিভা আমাদের আছে৷ বাংলাদেশে একুশে গ্রন্থমেলায় অনেক অখ্যাত লেখকের বইও বিক্রি হয়৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লেখক ও পাঠকের মধ্যে একটা যোগাযোগ সৃষ্টি করছে, যারা নতুন লিখছেন তাদের জন্য৷ বই উৎপাদনের প্রক্রিয়া বেশ মানসম্পন্ন হয়েছে, যে-কোনো বই হাতে নিয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে৷ এটা বাংলাদেশের একটা বড় প্রাপ্তি৷