1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঘরবন্দি শিশুর বাড়তি ওজন, নানা শঙ্কার কারণ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৮ আগস্ট ২০২১

লকডাউনে ঘরে বসে থেকে ওজন বাড়ছে কলকাতার শিশুদের৷ এর ফলে তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা৷ এমনকি যে সমস্ত শিশুরা কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যেও বড় অংশই স্থূলকায়৷

https://p.dw.com/p/3zbjM
কোভিড এর আগে কলকাতার একটি শিশু পার্ক৷ ছবি: Payel Samanta/DW

পশ্চিমে নতুন না হলেও ভারতের মতো দেশে শিশুদের স্থূলতা নতুন সমস্যা৷ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিডের কারণে এই সমস্যা আরও বেড়েছে৷

পশ্চিমবঙ্গে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ, ফলে শিশুরা কার্যত ঘরে বসেই সময় কাটাচ্ছে৷ অনলাইন ক্লাসের সুযোগ থাকলেও শরীরচর্চা হয়নি৷ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল পার্ক৷ অন্যদিকে সবসময় ঘরে থাকার কারণে আগের চেয়ে তারা বাড়তি খাবার খেয়েছে৷ খরচের উপায় না থাকায় তাদের শরীরে জমেছে ক্যালোরি৷ ফলে শিশুরা ক্রমশ মোটা হয়ে যাচ্ছে৷ চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের এই পরিবর্তন অনেক অভিভাবক বুঝতে পারছেন না৷ কিন্ত ওজন বৃদ্ধির মাধ্যমে আদতে বহু রোগকে ডেকে আনছে তারা৷ বিশেষত শহরাঞ্চলের শিশু, যারা বদ্ধ ফ্ল্যাটে বাস করে, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷

অর্ণব রায়

স্থূলত্বে অসুখের বাস

শিশুদের ক্ষেত্রে একটানা বসে অনলাইন ক্লাস বা টিভি দেখার ফলে চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ শিশুদের মেজাজও মাত্রাতিরিক্ত তিরিক্ষি হয়ে উঠছে৷ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রোদের সংস্পর্শে এলে ভিটামিন ডি সংশ্লেষ ঘটে৷ ঘরবন্দি হয়ে থাকার ফলে এর ঘাটতি দেখা দিচ্ছে৷ এই অকাল স্থূলতা শিশুদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড, করোনারি আর্টারির মতো রোগের জন্ম দেবে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷

কোভিডের  আশঙ্কা  কতটা?

নানা রোগের পাশাপাশি স্থূলকায় শিশুদের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে৷ এমনকি স্থূলতা কোভিডের সংক্রমণকে আরও বিপজ্জনক করে তুলতে পারে৷ শিশুমঙ্গল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অর্ণব রায় বলেন, ‘‘কোভিডে এখনও অবধি বাচ্চারা কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে৷ যে সমস্ত বাচ্চারা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে একটা বড় অংশই স্থূলকায়৷ কিডনি-হার্টের রোগ ছাড়া শিশুদের আর যে ধরনের কোমর্বিডিটি দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে স্থূলত্বের সমস্যাই সবচেয়ে বেশি৷ স্থূলকায় বাচ্চাদেরই কোভিডে বেশি ক্ষতি হয়েছে, ক্রিটিক্যাল কেয়ারে ভর্তি পর্যন্ত করতে হয়েছে৷’’

বাজুক  স্কুলের  ঘণ্টা

চিকিৎসকরা বলছেন স্কুলে পড়াশোনোর পাশাপাশি শিশুদের যে দৌড়ঝাঁপ হয়, তার কোনো বিকল্প হয় না৷ এতে তাদের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ ঘটে৷ তাই শিশুদের স্কুলে পাঠানোর উপর জোর দিচ্ছেন তারা৷ তবে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় পুজোর আগে স্কুল খুলছে না, স্পষ্ট করেছে রাজ্য সরকার৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তৃতীয় ঢেউ এলেই যে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবে, এই আশঙ্কা অমূলক যদি না ভাইরাসের চরিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে৷ ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস-এর প্রাক্তন সভাপতি ডাক্তার অর্জুন মাঙ্গলিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্কুল খুলে দেওয়া হোক, অনুরোধ করছি৷ রোজ না খুলুক, তিনদিন খোলা রাখুন৷ বাচ্চারা বেরোনোর সুযোগ যেন পায়৷ তবে শপিং মলে গেলে হবে না৷ ইনডোর বা ভিডিও গেম খেলতে পাঠানো চলবে না৷ খোলা জায়গায় পাঠান বাচ্চাদের৷ গ্রামাঞ্চলে রাস্তায় বেরোক, ভিড় এড়িয়ে পার্কে নিয়ে যান বাচ্চাকে৷ কিন্তু যেভাবেই হোক, বাড়ির বাইরে বের করুন৷’’

অর্জুন মাঙ্গলিক

তৃতীয় ঢেউয়ে শিশুদের নিয় শঙ্কা!

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল ডিজ্যাস্টার ম্যানেজমেন্ট-এর ভবিষ্যদ্বাণী, শিশুরা তৃতীয় ঢেউয়ে বেশি আক্রান্ত হবে৷ যদিও এই আশঙ্কা নিয়ে ভিন্নমত আছে৷

ডা. মাঙ্গলিক বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন না হলেও বাচ্চাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে৷ তার প্রমাণ মিলেছে৷ কাজেই বাচ্চাদের ঘরে আটকে রাখলেও তারা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছে৷ অভিভাবকদের থেকেই সম্ভবত তারা সংক্রমিত হয়েছে৷’’

শুরুতে করোনার টিকা প্রাপ্তবয়স্কদের দেওয়ার কথা থাকলেও কয়েকটি দেশ এখন ১৮ বছরের নিচের বয়সিদেরও টিকা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে৷ তবে এই বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি ভারত৷ তবে এ নিয়ে ততটা চিন্তিত নন চিকিৎসক অর্ণব রায়৷ তিনি বলেন, ‘‘জন্মের পর থেকে বিভিন্ন রকমের টিকা শিশুর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে৷ সাধারণ ঠান্ডা লাগার ভাইরাসও ক্রস ইমিউনিটি তৈরি করে বাচ্চাদের শরীরে৷ তাই তৃতীয় ঢেউ এলেও শিশুদের সংক্রমণের হার তেমন কিছু বাড়বে না৷'' তার পরামর্শ, ভিড় এড়িয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে অভিভাবকরা যেন নিয়মিত বাইরে বের হন৷ মেধার সঙ্গে তাদের নিয়মিত শরীরচর্চার সুযোগও করে দিতে হবে৷ তা না হলে এই শিশুরা দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় ভুগতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান