1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চকবাজারে আগুনে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুরান ঢাকার চকবাজারে আগুনের ঘটনায় ৮১টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে৷ পোড়া গন্ধ আর স্বজনদের আহাজারি মনে করিয়ে দেয় নিমতলীর স্মৃতি৷ সেখানে প্রায় ৮ বছর আগে এরকমই আগুনে পুড়ে প্রাণ হয়েছিলেন ১২৪ জন৷

https://p.dw.com/p/3Dlt3
ছবি: Getty Images/R. Asad

বুধবার রাতে চকবাজারের যে রাজ্জাক ভবনে প্রথমে আগুন লাগে সেখানে রাসায়নিকের গুদাম ছিল৷ আন্ডারগ্রাউন্ড এবং একতলা ও দোতলায় ছিল সুগন্ধি কেমিক্যালের গুদাম৷ আর নীচ তলায় প্লাস্টিকের কাঁচামালের দোকানও ছিল৷ সরু গলির ভিতরে ওই ভবনে রাত সাড়ে ১০টার দিকে আগুন লাগার সময় গলিটি ছিল যানজটে পরিপূর্ণ৷ এরপর আগুন আরো ৪-৫টি ভবনে ছড়িয়ে পড়ে৷ সরু গলির কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও ঠিকমত ঢুকতে পারেনি, পানি পাওয়া যায়নি৷ তাই ঢাকার ফায়ার সার্ভিসের ৩৭ ইউনিট একযোগে কাজ করলেও আগুন থেকে রক্ষা করা যায়নি মানুষের জীবন আর সম্পদ৷

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজ বৃহস্পতিবার সকালে ৭০টি মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘আগুন নিয়ন্ত্রণে, তবে পুরোপুরি নেভেনি৷ কিছু কিছু জায়গায় এখনও আগুন জ্বলছে৷ বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান, বডি-স্প্রে, প্লাস্টিক দ্রব্য এসবের কারণে আগুন ছড়িয়েছে৷ আর সরু রাস্তার কারণে আগুন নেভানোর কাজে সমস্যা হয়েছে৷ লাশের সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা আছে৷’’

পুরান ঢাকার চকবাজার চুড়িহাট্টা আর নিমতলী এলাকা যেমন ঘিঞ্জি আর সরু গলির, তেমনি সেখানে রয়েছে নানাধরণের রাসায়নিকের গুদাম, কসমেটিকস ও প্লাস্টিকের কারখানা৷ ফলে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস যেমন ঠিকমত কাজ করতে পারেনা তেমনি কেমিক্যালের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷

৮ বছর আগে ২০১০ সালের ৩ জুন এই পুরান ঢাকারই নিমতলীর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আগুন লেগে ১২৪ জন নিহত হন৷ কেমিক্যাল গুদামের কারণেই ওই আগুনে পুরো এলাকা পুড়ে হয়ে যায়৷ ওই আগুনের পর তালিকা করে ৮০০ রাসায়নিক গুদাম, কারাখানা সরিয়ে নেয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ৮ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি৷

সেসময়ে নিমতলীর উদ্ধার অভিযানে ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের তখনকার উপ-পরিচালক সেলিম নেওয়াজ ভূইয়া৷ তিনি এখন অবসরে গেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নিমতলীর ঘটনার ৮ বছর পর চকবাজারের ঘটনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই৷ কেমিক্যাল গুদাম আর কসমেটিকস কারখানার দাহ্য পদার্থের কারণেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে৷ আর পুরান ঢাকার পথ ঘাট সরু হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে পারেনা৷ ফায়ার ফাইটাররা ঠিকমত কাজ করতে পারেনা৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এরকম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোনো দাহ্য পদার্থের কারখানা থাকতে পারেনা৷ এসব কারখানার কেমিক্যালের ড্রামের ওপরই থাকে আবার বিদ্যুৎ সংযোগ৷ নিরাপত্তা বলে কিছু নেই৷ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি৷ আমরা নিমতলীর ঘটনার পর ৮০০ কেমিক্যাল কারখানা চিহ্নিত করে কেরানীগঞ্জে সরিয়ে নেয়ার সুপারিশ করেছিলাম৷ কিন্তু পরে আর তা সরানো হয়নি৷ সরকার বলেছিল পর্যায়ক্রমে সরাবে৷ কিন্তু হয়নি৷ আমরাতো প্রতিবেদন দিয়েছি৷ আমাদের ওপরে অনেক বড় কর্তারা আছেন৷ তারাই বলতে পারবেন কেন সরানো হয়নি৷’’

নিমতলীর ঘটনার ৮ বছর পর চকবাজারের ঘটনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই: সেলিম নেওয়াজ ভূইয়া

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই কেমিক্যাল কারখানাগুলো শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরানোর কথা৷ নানা জটিলতার কারণে এতদিনেও সরানো যায়নি৷ এরজন্য কেরানীগঞ্জ বা মুন্সিগঞ্জে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে৷ জমি অধিগ্রহণের কাজ এত সহজ নয়৷ তারপরও গত সপ্তাহে আমরা শিল্প মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআই'র সঙ্গে বৈঠক করে দ্রুত কাজ শুরুর তাগিদ দিয়েছি৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ওই কেমিক্যাল কারখানাগুলোর কোনো বৈধতা নেই৷ আমরা কোনো লাইসেন্সও দেইনা৷ আর ওখানকার বাড়ির মালিকরা কেমিক্যাল কারখানার জন্য ভাড়া দিলে বেশি ভাড়া পায়৷ সেই লোভেই পুরনো ঢাকায় কেমিক্যাল কারখানা কমছেনা, বরং বাড়ছে৷ চকবাজারে যে বাড়িতে আগুন লেগেছে, তিনি নিজে ওই বাড়িতে থাকেন না৷ তিনি অন্যত্র থেকে বেশি ভাড়ায় কেমিক্যাল গোডাউন হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন৷’’

কেমিক্যাল কারখানাগুলো শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরানোর কথা: মোস্তাফিজুর রহমান

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশের আইজি জাবেদ পাটোয়ারী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এ ধরনের আবাসিক এলাকা, জনবহুল এলাকার মধ্যে কেমিক্যাল গোডাউন থাকা উচিত না৷ এখনই সময় এগুলো সরিয়ে নেওয়ার৷’’ পুলিশ এ বিষয়ে কোনো ভূমিকা রাখবে কি না, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলোর ক্ষেত্রে অনেকগুলো পক্ষ কাজ করে৷ পুলিশ তো অবশ্যই ভূমিকা রাখবে, কাজ করবে৷ তবে তার আগে পরিবেশ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন এবং সরকারের যে অন্যান্য দপ্তর আছে, যারা এগুলো মনিটর করে, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরানোর৷ এগুলো সরানোর কাজ এখনই শুরু করা উচিত৷

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চকবজারে আগুনে নিহত ও আহতদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ‘‘নিহতদের পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে এবং আগুনে আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন৷ দায়িত্বপ্রাপ্তদের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য