1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চট্টগ্রামের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৯ জুলাই ২০১৮

চট্টগ্রামে রাইফা খানের মৃত্যুর ঘটনায় তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ কিন্তু বিএমডিসি তা জানেই না! কোনো অভিযোগ না পেলে কোনো ব্যবস্থা নেয়ারও নজিরই নাকি নেই!

https://p.dw.com/p/315Xx
ছবি: picture-alliance/BSIP/GODONG

দু'টি তদন্ত কমিটি'র প্রতিবেদনে শিশু রাইফার মৃত্যুর জন্য চিকিৎসায় অবহেলাকেই দায়ী করা হয়েছে৷ আর এজন্য ম্যাক্স হাসপাতালের তিন জন চিকিৎসক ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত ও ডা. শুভ্র দেবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ আর তারই প্রেক্ষিতে রবিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিএমডিসিকে ওই তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন৷ রোববার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত এক সভায় ম্যাক্স হাসপাতালের লাইসেন্স নিয়ে অনিয়ম আগামী ১৫ দিনের মধ্য দূর করারও নির্দেশ দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ ভুল চিকিৎসার অভিযোগ নিয়ে যে-কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে অভিযোগ জানানোর জন্য হটলাইন নম্বর সম্বলিত একটি সাইন বোর্ড সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্থাপনের জন্যও সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷

কিন্তু তিন চিকৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়টি  বিএমডিসি জানে না৷ বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডা. মো. জাহেদুল হক বসুনিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনো নির্দেশের খবর আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম৷ আমরা কোনো নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে পাইনি৷ আমরা ওই তিন চিকৎসকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা এখনো ভাবছি না বা এ নিয়ে আমরা কোনো কাজও করছি না৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের কাছে অভিযোগ করলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিই৷ তবে আমরা সাধারণত  নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে কোনো ঘটনা তদন্ত  করি না৷ তবে আমরা উদ্যোগ নিয়ে কোনো ঘটনার তদন্ত করলে তাতে কোনো বাধা নেই৷ অভিযোগ পেলে আমাদের একটি শৃঙ্খলা কমিটি আছে, তারা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করেন৷ আমরা প্রচুর অভিযোগ পাই৷''

DR Zahedul Haq Basunia - MP3-Stereo

গত দুই বছরে চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার কতগুলো অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং কোনো ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ  আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো টেলিফোনে বলা সম্ভব নয়৷ জানতে হলে আপনাকে অফিসে আসতে হবে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘হাসপাতাল বা ক্লিনিকের কোনো দায় থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের৷

ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যাস্থাপনা পরিচালক লিয়াকত আলি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ওই তিন চিকৎসককে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রেখেছি৷ এখন তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আরো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হলে তা-ও আমরা অনুসরণ করবো৷''

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এখন দায়ী চিকিৎসক এবং ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয় তা দেখার অপেক্ষায় আছি৷ দু'টি তদন্ত কমিটিই রাইফার মৃত্যুর জন্য চিকিসকের অবেহেলাকে দায়ী করেছে৷ তিন ডাক্তারের নাম উল্লেখ করে ব্যবস্থা নিতে বলেছে৷''

Hasan Ferdous - MP3-Stereo

চিকিৎসা সেবা বন্ধের কর্মসূচি স্থগিত:

রবিবার র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত চট্টগ্রামের কয়েকটি ক্লিনিক ও হাসাপাতালে অভিযান চালায়৷ ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে মেয়াদোত্তীর্ন ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পাওয়ায় ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে৷ আর এর প্রতিবাদে বিকেল থেকেই চট্টগ্রামের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়৷ তবে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর তারা কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন৷ কিন্তু এই সময়ের মধ্যে চট্টগ্রামে রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন৷ চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস বলেন, ‘‘তারা তাদের অপরাধ ঢাকতে রোগীদের জিম্মি করে৷ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে তাঁদের অনেক ত্রুটি বেরিয়ে আসে৷ আর তাঁরা সাংবাদিকদের ওপর দায় চাপানোর অপকৌশল নেয়৷ রোগীদের জিম্মি করে অন্যায় দাবী আদায় এবং দায় এড়ানোর এই অপকৌশল তাদের দীর্ঘদিনের৷''

ম্যাক্স হাসপাতালের পরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, ‘‘বন্দুকের নলের মুখে হাসপাতালে অভিযান চলতে পারেনা৷ আমরা তার প্রতিবাদে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছিলাম৷ আমার হাসপাতালের বৈধ কাগজপত্র না থাকার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তার জবাব আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দিয়েছি৷

‘বাংলাদেশের ৫৬ ভাগের বেশি মানুষ নিরfপদ পানি পচ্ছেন না’

কেন রোগীদের জিম্মি করার এই প্রবণতা:

বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ধর্মঘট এবং চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘটনা নতুন কিছু নয়৷ গত বছর ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালেও একটি ঘটনায় তারা ধর্মঘট ডেকেছিল৷ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার অভিযোগে কোনো মামলা করা যায় না৷ মামলা করলেই তারা রোগীদের জিম্মি করে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেয়, ধর্মঘট ডাকে৷ চট্রগামে শিশু রাইফার মৃত্যুর পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সসহ তিন জনকে আটক করা হলেও বাংলাদশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েন (বিএমএ)-এর চট্টগ্রাম শাখার নেতারা থানায় গিয়ে হুমকি দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন৷ তারা তখন সাংবাদিক ও তাদের পরিবারকে চিকিৎসাসেবা বন্ধের হুমকিও দেয়৷ এ নিয়ে বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. মুজিবুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি৷ তিনি বলেন, ‘‘যারা এটা করেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলুন৷''

রোগীদের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে ও রোগীদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের  চিকিৎসকদের এই কৌশলের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ৷ ৩০ মে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলও জারি করেন৷ রুলে হাসাপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের ধর্মঘট কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছে আদালত৷ একই সঙ্গে হাসপাতাল এলাকায় চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর রোগী বা তাদের স্বজনদের হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও  জানতে চাওয়া হয়৷

Monjil Morshed - MP3-Stereo

অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘রুলের ওপর শুনানি হবে শিগগিরই৷ শুনানির জন্য রিটটি কার্যতালিকায় উপরের দিকে আছে৷'' তিনি বলেন, ‘‘কোনো মানুষকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত করা যায় না৷ তাই কর্মবিরতি, ধর্মঘট বা চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখা বেআইনি এবং সংবিধানবিরোধী৷ আবার চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার অভিযোগে চিকিৎসকদের ওপর হামলাও বেআইনি৷ আমি রিটে এই দু'টি বিষয়েরই প্রতিকার চেয়েছি৷ চেয়েছি এমন কোনো কমিশন করা বা ব্যবস্থা নেয়া যেখানে সব পক্ষই প্রতিকার পেতে পারেন৷''

কিছু দুর্বৃত্তের কাছে বন্দি চিকিৎসা পেশা!

এদিকে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ সেমবার মন্তব্য করেছেন, ‘‘ডাক্তারি একটি মহান পেশা৷ কিন্তু এই পেশাটি কতিপয় দুর্বৃত্তের কাছে বন্দি হয়ে পড়েছে৷ কতিপয় দুর্বৃত্তের কারণে ডাক্তারির মতো মহান পেশা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷'' গত মার্চে চুয়াডাঙার ইম্প্যাক্ট মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা নিয়ে চোখ হারানো ২০ জনের ক্ষতিপূরণের রুল শুনানিতে চিকিৎসকদের নিয়ে এই মন্তব্য করেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কমরুল কাদেরের গঠিত বেঞ্চ৷

ওই বেঞ্জ আরো বলেন, ‘‘বিপদে পড়লে মানুষ তিন জনের কাছে যায়৷ পুলিশ, আইনজীবী ও ডাক্তার৷ এই তিনটা পেশা যদি ধ্বংস হয়, তাহলে মানুষ কোথায় যাবে?  দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর  ব্যাপারে পাবলিক পারসেপশন ভালো না এবং ডাক্তারদের ব্যবহারও ভালো না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য