1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চন্দ্রাভিযানে অ্যামেরিকার অংশীদার যাঁরা

২০ জুলাই ২০১৯

চাঁদে মানুষ পাঠানোর মিশন অ্যামেরিকার হলেও অন্য অনেক দেশের সহায়তা ছাড়া এ কাজ সম্ভব হত না৷ অ্যাপোলো প্রোগ্রামের জন্য বিশ্বব্যাপী বহু ট্র্যাকিং স্টেশন এবং এগুলোর প্রকৌশলীদের উপর নির্ভর করতে হয়েছিল তাদেরকে৷

https://p.dw.com/p/3MN4O
Parkes Observatory radio telescope Australien
ছবি: Getty Images/I. Waldie

পঞ্চাশ বছর পর এসেও সেসব  ট্র্যাকিং স্টেশনগুলোর প্রকৌশলীদের কাছে চাঁদে পা রাখার স্মৃতি এখনো তাজা৷ এটাকে বিশ্বের সব মানুষের অর্জন হিসাবে ভাবতে চান তাঁরা৷

‘‘গাড়ি চালিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে এক জায়গায় থামি আমি৷ তখন ছিল গাঢ় অন্ধকার৷ আমি গাড়ি থেকে নেমে চাঁদের দিকে তাকাই৷  অনুভূতি ছিল এই রকম, ‘এই মুহূর্তে দুইজন লোক ওখানে দাঁড়িয়ে আছে!' আবেগ ছিল অনেক অনেক গভীর৷''

চাঁদে পা রাখার পাঁচ দশক পূর্তিতে এসে কথাগুলো বলেছেন ল্যারি হেগ, স্পেনের মাদ্রিদে নাসার ‘ফ্রেসনেদিয়াস দে লা অলিভা' ট্র্যাকিং স্টেশনে কাজ করতেন তিনি৷ ওই সময়ে ডাটা সিস্টেম সুপারভাইজার হিসাবে রাতের ডিউটি শেষ করে ফিরছিলেন তিনি৷ চন্দ্রাভিযানের তথ্য পেতে অ্যামেরিকান স্পেস এজেন্সির মোট তিনটি রেডিও টেলিস্কোস কেন্দ্রের একটি ছিল মাদ্রিদে৷

১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট কেনেডি চন্দ্রাভিযানের ঘোষণা যখন দেন, তখন পর্যন্ত মহাকাশেও যায়নি অ্যামেরিকার কেউ৷ কিন্তু খুব দ্রুতই এগিয়ে যায় চন্দ্রাভিযানের কার্যক্রম৷

সে সময়ের স্মৃতিচারণ করে হেগ বলেন, ‘‘আমাদের কিছুই ছিল না৷ এমনকি মহাকাশে মানুষ পাঠাতে  পারিন আমরা৷ কিন্তু মাত্র আট বছরের মাথায় দু'জন মানুষকে চাঁদে পাঠিয়েছি আমরা৷ আমরা যা করেছি, সেটা ছিল অবিশ্বাস্য৷''

অ্যামেরিকার গল্পে অন্যদের ভাগ

অ্যাপোলো স্পেস প্রোগ্রাম অ্যামেরিকানদের গল্প সেটা ঠিক৷ একইসঙ্গে এটা ছিল স্নায়ুযুদ্ধকালে রাশিয়ার সঙ্গে তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়৷ কিন্তু অন্যভাবে এটা ছিল বৈশ্বিক গল্পও৷

বিশ্বের অন্যান্য দেশের সহায়তা ছাড়া অ্যামেরিকা কোনোভাবে এটাতে সফল হত না৷ এমনকি রাশিয়ানরা যদি মহাকাশে প্রথম মানুষ না পাঠাত, তাহলে এটা তাদের চিন্তার বাইরে থাকত৷

অ্যামেরিকার রাজনৈতিক ক্ষমতাবৃদ্ধির পেছনের শক্তি হিসাবে কাজ করে এটি৷ কেবল রাজনৈতিক দিক নয়৷ কারিগরি দিক থেকে অ্যামেরিকা বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে অভিজ্ঞতা কাজে লাগায়৷

এর মধ্যে ছিলেন ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্যের টেকনিশিয়ান এবং প্রকৌশলীরা৷ যারা অ্যামেরিকানদের পাশাপাশি থেকে স্থানীয় ট্র্যাকিং স্টেশনগুলোতে কাজ করেছেন৷

মাদ্রিদের বাইরে অন্য দুটি প্রধান ট্র্যাকিং স্টেশন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মোজাভে মরুভূমি এবং অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরার অদূরে হানিসাকল ক্রিক এলাকায়৷

এই তিনটি ট্র্যাকিং স্টেশনের পাশাপাশি নাইজেরিয়ার কানো, প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার গুয়াম, বারমুডা, অ্যান্টিগুয়া, অ্যাসেশন দ্বীপ এবং বিভিন্ন জাহাজের ছোট ছোট কেন্দ্র সংযুক্ত ছিল টেক্সাসের হুস্টনে প্রধান কেন্দ্রের সঙ্গে৷ এই কেন্দ্রগুলো ২৪ ঘন্টাজুড়ে চাঁদ থেকে ভূমিতে তথ্যের সংযোগ স্থাপন করত৷

‘‘পৃথিবী থেকে পূর্ব-পশ্চিমে চাঁদের গতিপথ অনুসরণের ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা করে সময় লাগত৷ আপনি আকাশে তাকালে সবসময় চাঁদ দেখবেন না৷ আমরা যখন দেখতাম, তখন হুস্টনের মানুষ চাঁদ দেখত না,'' নিজেদের কাজের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন হেগ৷

Mond Armstrong und Aldrin mit US-Flagge
ছবি: picture-alliance/Heritage Images/NASA/Oxford Science Archive

নাইল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন যখন চাঁদে প্রথম পা রাখেন, এক্ষেত্রে প্রাথমিক ট্র্যাকিং সম্পন্ন করেছিল মাদ্রিদের স্টেশন৷ নভোচারীদের স্বাস্থ্যের ট্র্যাকিংও করেছিল এটি৷

হেগ বলেন, চাঁদে পা রাখার পূর্ব মুহূর্তে আর্মস্ট্রংয়ের হার্টবিট ১২০ থেকে ১৩০ পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল৷ ঘটনাচক্রে সেটা টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হয়ে গিয়েছিল৷ ‘‘এর জন্য আমাদের তিরস্কৃত হতে হয়েছিল৷ কারণ এটা ছিল মেডিকেল ড্যাটা, যা প্রকাশ হওয়ার কথা না!'' স্মৃতি হাতড়ে বলেন তিনি৷

হেগ বলেন, ‘‘রাতের কাজ শেষে ট্র্যাকিংয়ের পরবর্তী দায়িত্ব ক্যানবেরার হানিসাকল ক্রিক কেন্দ্রের উপর অর্পণ করেছিলাম৷ তারা চাঁদে প্রথম পা রাখার সময়টা ট্র্যাক করেছিল৷''

টেলিভিশনে সরাসরি

নভোচারীরা চাঁদে পা রেখেছে নাকি অ্যামেরিকার কোনো স্টুডিওতে দৃশ্যায়ন করা হয়েছে তাতে কিছু যায় আসে না৷ আপনি যদি ১৯৬৯ সালে অস্ট্রেলিয়ায় থাকতেন, তাহলে ঠিকই জানতেন ঐতিহাসিক সেই চিত্রগুলো অস্ট্রেলিয়ার হানিসাকল ক্রিক ও পার্কেস রেডিও টেলিস্কোপ কেন্দ্র থেকে৷

সে সময় হানিসাকল কেন্দ্রের কম্যুনিকেশন্স বিভাগের কর্মী গিলিয়ান শোয়েবর্ন জানিয়েছেন সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা৷ সহকর্মীদের সঙ্গে দিস্তা পর দিস্তা কাগজে মিশনের নির্দেশনা, টেলিমেট্রি ও মেডিকেল তথ্য পাঠানোর কথা জানান তিনি৷

চন্দ্রারোহণে অস্ট্রেলিয়ার হানিসাকল কেন্দ্রের কার্যক্রম নিয়ে একটি ওয়েবসাইট চালান কলিন ম্যাকেলার৷ তিনি বলেন, ‘‘১৯৬৯ সালে মানুষের চন্দ্রারোহণের গুরুত্ব পৃথিবীর কারো অজানা ছিল না এবং সেটা সরাসরি দেখেছিল তারা৷ সবাই ছিল উৎফুল্ল৷''

তাঁদের আক্ষেপ

১৯৬৯ সালে চন্দ্রারোহণের দুবছর পরই হানিসাকল ক্রিক ছেড়ে দিয়েছিলেন শোয়েবর্ন৷ এরপর পৃথিবী ঘোরা শুরু করেন তিনি এবং যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে এসে তার যাত্রা শেষ হয়৷

চাঁদে যাওয়ার পর অ্যাপোলো প্রোগ্রাম বেশিদিন চালু থাকেনি৷ ১৯৭২ সালে এই কর্মসূচি বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার৷ এ নিয়ে আক্ষেপ আছে তখনকার কর্মীদের মধ্যে৷

মাদ্রিদে ‘ফ্রেসনেদিয়াস দে লা অলিভা' ট্র্যাকিং স্টেশনের কর্মী হেগ বলেন, ‘‘অ্যাপোলো বন্ধ করে দেওয়া ছিল বড় ধরনের ভুল৷ তবে- পেছনে ফিরে দেখি, আমরা ভিয়েতনাম যুদ্ধ পার করেছি এবং এটা ছিল খুবই খরুচে ব্যাপার৷ এ কারণে আমাদের এমন পদক্ষেপ নেওয়া দরকার ছিল৷''

জুলফিকার আব্বানি/এমবি