1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চলে গেলেন ইরফান খান

২৯ এপ্রিল ২০২০

জীবনের সব চেয়ে আলোকিত সময়ে সকলকে বিদায় জানালেন অভিনেতা ইরফান খান। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই থামলো তাঁর।

https://p.dw.com/p/3bXlb
ছবি: STRDEL/AFP/Getty Images

শরীরে এক নতুন অতিথির প্রবেশ ঘটেছে। সকলের ভালোবাসায় সেই অতিথিকে বিদায় জানানো যাবে-- ২০১৮ সালে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করতে করতে এমনই এক বিবৃতি দিয়েছিলেন বলিউডের বিশিষ্ট অভিনেতা ইরফান খান। মনের জোর আর বিশ্ব জোড়া অনুরাগীদের প্রার্থনায় কয়েক মাসের মধ্যেই ফিরেও এসেছিলেন অভিনয় জগতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন ইরফান খান। বুধবার মুম্বইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল ৫৩ বছরের অভিনেতার। কোলন বা মলাশয়ে সংক্রমণ নিয়ে মঙ্গলবারই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই শরীর ভালো যাচ্ছিল না ইরফানের। তারই মধ্যে গত শনিবার মায়ের মৃত্যু হয়। তাঁর শেষকৃত্যেও সরাসরি অংশ নিতে পারেননি ইরফান। ভিডিও কলে গোটা সময়টা সঙ্গে ছিলেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তার পর থেকেই আরও ভেঙে পড়েন ইরফান। মঙ্গলবার তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরে রাতেই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, তাঁকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়। ইরফান ছেড়ে গেলেন তাঁর স্ত্রী সুতপা এবং দুই সন্তান বাবলি আর অয়নকে।
২০১৮ সালে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই শুরু হয়েছিল ইরফানের। সে সময় তাঁর অভিনয় জীবন মধ্যগগনে। মুম্বইয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে। সেখানেই দীর্ঘ চিকিৎসার পরে অভিনয় জগতে ফিরে আসেন ইরফান। নেমে পড়েন 'আংরেজি মিডিয়াম' ছবির শ্যুটিংয়ে। লন্ডন এবং রাজস্থানে শ্যুটিং করেন। তবে শ্যুটিং শুরুর আগেই নিজের রোগ নিয়ে মন খারাপ করা টুইট করেছিলেন অভিনেতা।

মার্চ মাসে মুক্তি পেয়েছে নতুন ছবি। কিন্তু সেই ছবির প্রিমিয়ারেও যেতে পারেননি ইরফান। পাঠিয়েছিলেন ভিডিও মেসেজ। তাঁর সহকর্মীরা জানিয়েছিলেন, ফের শরীর খারাপ হয়েছে ইরফানের।

১৯৬৭ সালে রাজস্থানের এক গরিব পরিবারে জন্ম হয় ইরফান খানের। তাঁর বাবার টায়ারের ছোট ব্যবসা ছিল। ছোটবেলায় অবশ্য অভিনয় নয়, ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। বন্ধু সতীশ শর্মার অনুপ্রেরণা এবং সাহায্যে বহু ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। সুযোগ পেয়েছিলেন ফার্স্ট ডিভিশনে খেলারও। কিন্তু অর্থের অভাবে শেষ পর্যন্ত তাতে যোগ দিতে পারেননি। ওই সময়েই অভিনয়ের নেশা পেয়ে বসে। চলে আসেন মুম্বইয়ে। শুরু হয় নতুন লড়াই। 
অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে বহু ভারতীয় তরুণ-তরুণী মুম্বইয়ে যান। কিন্তু কঠিন লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারেন না সকলে। ইরফান এক-দুই বছর নয়, দশকের পর দশক লড়াই করেছেন। বিভিন্ন সিরিয়ালে ছোট ছোট রোল পেয়েছেন। সিনেমায় অতি ছোট চরিত্রে খুব কম বেতনে কাজ করেছেন বছরের পর বছর। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি টেলি ছবি আর সিরিয়ালে তাঁর অভিনয় দর্শক এবং ফিল্ম বোদ্ধাদের নজর কাড়ে। ইরফানও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক ছবিতে অভিনয় করে বুঝিয়ে দেন, মূলস্রোতের অভিনেতা তিনি নন। তাঁর অভিনয় ক্ষমতা অন্যরকম। 
দক্ষতা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন। সুযোগও মেলে বড় কাজের। ২০০১ সালে ব্রিটিশ ছবি 'দ্য ওয়ারিয়র'এ মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান ইরফান। তার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। 'মকবুল', 'লাইফ ইন আ মেট্রো', 'নেমসেক', 'পান সিং তোমার'এ অভিনয় করে ইরফান বুঝিয়ে দেন তাঁর ক্ষমতা। অভিনয় করেন বিদেশি ছবি 'লাইফ অফ পাই এবং  স্লামডগ মিলিয়নেয়ার-এ।  একের পর এক পুরস্কারও মিলতে শুরু করে। জাতীয় পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার তাঁর ঝুলিতে তো আছেই, একই সঙ্গে ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্মসম্মানও প্রদান করা হয় তাঁকে। 
বলিউডে একটি কথা খুব প্রচলিত আছে, 'গতে বাঁধা অভিনেতা'। মূলধারার ছবির বাইরেও যাঁরা কাজ করেন, চেহারা ঠিক হিরোসুলভ নয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কথা আরও বেশি বলা হয়। ইরফান সেই গত বার বার ভেঙেছেন, আবার তৈরিও করেছেন নিজের মতো করে। যে ইরফান সেই ১৯৯০ সালে তপন সিংহের 'এক ডক্টর কি মত' ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, সেই ইরফান 'মকবুলে অভিনয় করেননি। যিনি 'পান সিং তোমার'এ সংলাপ বলেছিলেন, 'লাঞ্চ বক্স'এ তিনি বদলে গিয়েছেন। 'পিকু'র ইরফান আর 'হিন্দি মিডিয়াম'এর ইরফান এক লোক নন। স্লামডগের ইন্সপেক্টরের ভূমিকা ছোট হলেও অনন্য। এটাই ছিল তাঁর অভিনয়ের ব্যাপ্তি। সেখানেই সমসাময়িক আরও অনেক অভিনেতার থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলেছিলেন তিনি। 'হিন্দি মিডিয়াম'এর সিকুয়ালেই শেষ কাজ করলেন ইরফান, 'আংরেজি মিডিয়াম'। 
তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে টুইট করছেন সকলে। অমিতাভ বচ্চনের মতো অভিনেতা থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধীর মতো রাজনীতিবিদ-- সকলে। তবে তার চেয়েও বড় কথা, তাঁর মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়া ভরে গিয়েছে সাধারণ মানুষের কান্নায়। প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা হয়ে যাওয়ার পরেও ইরফান বার বার মনে করিয়ে দিতেন কত ছোট ছোট শর্ট ফিল্মে অজানা, অচেনা, লড়াই করতে থাকা পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। বরাবরই মাটির কাছাকাছি থাকার কথা বলতেন তিনি। তাঁর অসংখ্য সাধারণ দর্শকও আজ সে কথাই বার বার উচ্চারণ করছেন।
এসজি/জিএইচ (পিটিাই)